আমাদের জানা উচিত
হঠাৎ করে যদি আবিষ্কার করেন, মাথার চুল পড়ে টাকা উঁকি দিতে শুরু করেছে, তখন মনে কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। সাধারণভাবেই প্রতিদিন কিছু না কিছু চুল ঝরে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন একশ’টা চুল পড়া স্বাভাবিক। তবে চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। চুল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাথায় নতুন চুলও গজায়। তবে যদি চুল যদি বেশি পরিমাণে পড়ে, অর্থাৎ চুল পড়ার হার যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখনই টাকা পড়া শুরু করে।
পুরুষের চুল পড়া বা টাক সমস্যা রোধের কিছু উপায় হচ্ছে, খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
আপনার চুল পড়া সমস্যা দূর করার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ার আগে বেশি দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আপনি কোন কোন ওষুধ সেবন করেন, চুলের জন্য কোন প্রসাধনী ব্যবহার করেন এবং চুল বিষয়ে আপনার পারিবারিক ইতিহাস এক্ষেত্রে জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় যে, আপনি যেসকল ওষুধ সেবন করছেন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সকল বিষয়াদি পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞ যে পরামর্শ প্রদান করেন তা পালন করুন।
ওষুধ সেবন করুন
চুল পড়া প্রতিরোধের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে। মিনোক্সিডিল বা রোগেইন এর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। চুল পড়া প্রতিরোধ এবং পুনরায় চুল গজানোর জন্য রোগেইন বেশ কার্যকরী ওষুধ। রোগেইন হচ্ছে ফেনা তৈরিকারী এক প্রকারের ওষুধ যা দিনে দুই বার আপনি সরাসরি মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। মাথার পেছন এবং সামনের অংশে চুল গজানোর জন্য এটি বেশ কার্যকরী। আরেকটি কার্যকরী ওষুধ হচ্ছে, ফিনাস্টেরাইড বা প্রপেশিয়া যা মুখে খাওয়ার উপযোগী এবং আপনি প্রতিদিন তা গ্রহণ করতে পারেন। যথাযথ ফলাফল পাওয়ার জন্য উভয় ওষুধ আপনাকে প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে। এই দুটি ওষুধ অনেকসময় পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চুলের আঁটসাঁট স্টাইল বাদ দিন
আপনি যদি চুলের আঁটসাঁট স্টাইল পছন্দ করে থাকেন তাহলে এখনই সাবধান হয়ে যান। চুলে আঁটসাঁট স্টাইল করলে শক্ত টানের ফলে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চুল পড়া শুরু হয়। তাছাড়া চুলের গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে সেখানে আর চুল গজায় না। আপনি যদি চুলের আঁটসাঁট স্টাইল ধরেই রাখেন তাহলে আপনার মাথায় টাক পড়া ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়বে। যৌবনে হয়তো আপনার কাছে এটা কোনো সমস্যা বলে মনে হবে না, কিন্তু আপনার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়ার হার বাড়তে থাকবে এবং পরিণামস্বরূপ মাথায় টাক পড়বে।
কি খাচ্ছেন তাতে নজর দিন
সুস্থ এবং ঘন চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। চুলের বৃদ্ধির জন্য আমিষ খুবই প্রয়োজনীয়। তবে চুলের পাশাপাশি শরীরের খেয়াল রাখতে হলে অবশ্যই চর্বিহীন আমিষ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। মাছে প্রচুর পরিমাণ চর্বিহীন আমিষ থাকে। তাছাড়া চর্বিহীন মাংস মানবদেহের আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বাদাম পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য বীজে প্রচুর ভিটামিন ই এবং স্বাস্থ্যকর স্নেহ পদার্থ থাকে যা চুলে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ও পুষ্টি যোগায়। এমনকি কিছু মশলা চুলের পক্ষে খুবই উপকারী, যেমন: দারুচিনি। বিভিন্ন খাবারে দারুচিনি ব্যবহারের মাধ্যমে চুলের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
আপনার চুলের ২৫ শতাংশ গ্রন্থি পানি দ্বারা গঠিত। আপনার দেহে পানির অভাব দেখা দিলে চুলের গ্রন্থিগুলো দুর্বল হয়ে যায় ফলে চুলের ঘনত্ব কমে যায় এবং চুল পড়া শুরু হয়। তাছাড়া দেহে পানির অভাব দেখা দিলে নতুন চুলগ্রন্থি তৈরি হয়না ফলে মাথায় চুলের পরিমাণ বাড়ে না।
ভিটামিন সেবন করুন
মানসিক চাপ, জিনগত সমস্যা এবং বিভিন্ন রোগ ছাড়াও পুরুষদেহে ভিটামিনের অভাব চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। মাথায় টাক পড়া প্রতিরোধ করতে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন নিয়মিত গ্রহণ করুন। ভিটামিন এ আপনার চুলের গ্রন্থিতে রেটিনয়িক এসিডের সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে, ভিটামিন বি আপনার মানসিক চাপের মাত্রা কমিয়ে দেয়, ভিটামিন সি, ডি এবং ই আপনার দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণ করতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
অনেকেই আছেন যারা চুল পড়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভোগেন। ফলাফল হিসেবে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে চুলপড়াজনীত নানারকম সমস্যা বেড়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (যার ফলে মাথা থেকে আপনাআপনি চুল ঝরে যায়), ট্রিকোটেলোমেনিয়া (যার ফলে বারবার চুল টানার ইচ্ছা জাগে ফলে মাথা থেকে প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে যায়) এবং অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা (যার ফলে চুলের গ্রন্থিগুলো আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আক্রমণের শিকার হয়)। সুতরাং মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা এড়াতে নিয়মিত বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়াম করুন।
ধূমপান এবং মদ্যপানের পরিমাণ কমান
আপনি হয়তো জানেন যে অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপানের ফলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কিন্তু এগুলোর প্রভাব যে আপনার চুলের ওপর পড়ে তা হয়তো আপনি কল্পনাও করেননি। গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপান এবং মদ্যপান চুল পড়ার জন্য দায়ী। ধূমপানের ফলে শরীরের রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে আপনার চুলের গ্রন্থিগুলোতে সঠিক মাত্রায় রক্তপ্রবাহ না থাকায় চুল পড়া শুরু হয়। অন্যদিকে মদ্যপানের ফলে শরীরে পানিশূন্যতা এবং নানানরকম পুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ফলে চুল পড়ার হার বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত ব্যায়াম সাহায্য করতে পারে
নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে যেমন শরীর সুস্থ থাকে, তেমনি আপনার চুলের জন্যও উপকারী। ব্যায়ামের ফলে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা দূরে থাকে এবং শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় যা চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে।