কম্পিউটার জেনারেশন কাকে বলে? বিভিন্ন জেনারেশনের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ
কম্পিউটারের প্রযুক্তিগত বিবর্তনকে কম্পিউটার জেনারেশন বা প্রজন্ম বলে। কম্পিউটার বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। পরিবর্তন বা বিকাশের একেকটি পর্যায় বা ধাপকে একেকটি জেনারেশন বলা হয়। কম্পিউটারকে জেনারেশন হিসেবে ভাগ করার প্রথা চালু হয় আইবিএম কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন থেকে। কম্পিউটারের জেনারেশন ভাগ করা হয়েছে এর যান্ত্রিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের ভিত্তিতে।
কম্পিউটার জেনারেশনকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা :
১) প্রথম জেনারেশনের কম্পিউটার (First Generation Computer): ১৯৫১-১৯৫৯
২) দ্বিতীয় জেনারেশনের কম্পিউটার (Second Generation Computer): ১৯৫৯-১৯৬৫
৩) তৃতীয় জেনারেশনের কম্পিউটার (Third Generation Computer): ১৯৬৫-১৯৭১
৪) চতুর্থ জেনারেশনের কম্পিউটার (Fourth Generation Computer): ১৯৭১- বর্তমানকাল
৫) পঞ্চম জেনারেশনের কম্পিউটার (Fifth Generation Computer): ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
১. প্রথম জেনারেশনের কম্পিউটার: ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের প্রথম জেনারেশন বলে অনুমান করা হয়। প্রথম জেনারেশনের কম্পিউটারগুলোয় ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হতো। অসংখ্য ডায়োড, ট্রায়োড ভালভ, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হতো বলে প্রথম জেনারেশনের কম্পিউটার ছিল আকৃতিতে বড় এবং স্বল্প-গতিসম্পন্ন। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হতো এবং অনেক তাপ উৎপন্ন হতো।
বৈশিষ্ট্য
১.ভ্যাকুয়াম টিউববিশিষ্ট ইলেকট্রনিক বর্তনীর ব্যবহার।
২.চুম্বকীয় ড্রাম মেমরি।
৩.কম ডেটা ধারণক্ষমতা।
৪.আকারে বড় ও সহজে যেখানে সেখানে নেওয়া যায় না।
৫.পাঞ্চকার্ডের উপযোগী ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস।
৬.রক্ষণাবেক্ষণ ও উত্তাপসমস্যা বড় অসুবিধা।
উদাহরণ: IBM 704, IBM 709
২. দ্বিতীয় জেনারেশনের কম্পিউটার: ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের দ্বিতীয় জেনারেশন বলে অনুমান করা হয়। দ্বিতীয় জেনারেশনের কম্পিউটারে ভালভের পরিবর্তে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার শুরু হয়।
বৈশিষ্ট্য
১.ট্রানজিস্টরের ব্যবহার।
২.চুম্বকীয় কোর মেমরি।
৩.উচ্চগতিবিশিষ্ট ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস।
৪.ফরট্রান ও কোবলসহ উচ্চতর ভাষার উদ্ভব।
৫.আকৃতির সংকোচন।
৬.তাপসমস্যার অবসান।
৭.গতি ও নির্ভরযোগ্যতার উন্নতি।
উদাহরণ: IBM 1400, IBM 1620
৩. তৃতীয় জেনারেশনের কম্পিউটার: ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালকে কম্পিউটারের তৃতীয় জেনারেশন বলে মনে করা হয়। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ইনটিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) বা সমন্বিত চিপ থাকে, যাতে অনেক অর্ধপরিবাহী ডায়োড, ট্রানজিস্টর এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ থাকে। তৃতীয় জেনারেশনের কম্পিউটারে বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়, কাজের গতি ও নির্ভরশীলতা বহুগুণ বেড়ে যায়।
বৈশিষ্ট্য
১.আইসি বা ইনটিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যবহার।
২.সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার।
৩.আকৃতির সংকোচন ও অধিক নির্ভরশীলতা।
৪.একই সময়ে একাধিক ব্যবহারকারীর ব্যবহারের সুবিধা।
৫.উচ্চ স্তরের ভাষার ব্যাপক প্রচলন।
৬.মনিটরের প্রচলন।
৭.মিনি কম্পিউটারের প্রচলন।
৮.আউটপুট হিসেবে VDU (Video Display Unit) ও উচ্চগতির লাইন প্রিন্টারের প্রচলন শুরু হয়।
উদাহরণ : IBM 360, IBM 370
৪. চতুর্থ জেনারেশনের কম্পিউটার: ১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান সময়কালকে কম্পিউটারের চতুর্থ জেনারেশন বলে ধরা হয়। এই জেনারেশনের কম্পিউটারে LSI (Large Scale Integration) ও VLSI (Very Large Scale Integration) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি মাইক্রো প্রসেসর ব্যবহার করা হয়।
বৈশিষ্ট্য
১.মাইক্রো প্রসেসরের উদ্ভব।
২.দাম কম কিন্তু ক্ষমতা বেশি।
৩.সরাসরি প্রোগ্রাম প্যাকেজ প্রয়োগের সুবিধা।
৪.টেবিলের ওপর রেখে কাজ করা যায়।
৫.সাধারণ মানুষের ব্যবহারের সুযোগ।
উদাহরণ: IBM 3033, IBM PC
৫. পঞ্চম জেনারেশনের কম্পিউটার: ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এখনো চতুর্থ জেনারেশনের কম্পিউটার প্রচলিত আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে পঞ্চম জেনারেশনের কম্পিউটার চালুর অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পঞ্চম জেনারেশনের কম্পিউটারগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) প্রয়োগ করা হচ্ছে।
বৈশিষ্ট্য
১.কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার।
২.অধিক সমৃদ্ধশালী মাইক্রো প্রসেসরের ব্যবহার।
৩.বর্তনীগুলোয় অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার।
৪.কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে প্রদত্ত নির্দেশের অনুধাবন।
৫.সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন।
৬.ডেটা ধারণক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি।
৭.Super VLSI (Very Large Scale Integration) চিপ অবতারণা করা হয়েছে।
৮.KIPS (Knowledge Information Processing System) ব্যবহার করা হচ্ছে।