স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে?
- উত্তরঃ যে মানুষ পরার্থে আপন স্বার্থ ত্যাগ করতে পারে না, আচ্ছন্ন থাকে নিজের সংকীর্ণ ভোগবাসনায়, জীবনের মহানন্দ তার কাছে অধরা থেকে যায়। বিশ্বমানবের মাঝে নিজেকে মিশিয়ে দেওয়ার মধ্যেই রয়েছে মনুষ্যজীবনের চরম সার্থকতা। কেবল আপন শারীরিক ও মানসিক অস্থিত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টাতে সীমাবদ্ধ থাকাটা জীবনের উদ্দেশ্য নয়। আত্মমগ্নতার যে জগৎ তা মহাজীবনের সমগ্রতা থেকে বিচ্যুত। কিন্তু এভাবে বাঁচা সত্যিকার বাঁচা নয় – কেবল জীবনধারন করে বেঁচে থাকা মাত্র। পরার্থে জীবন দান করার মধ্যে রয়েছে মানবজীবনের চরম সার্থকতা। নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকার জন্য পৃথিবীতে মানবজাতির আগমন ঘটেনি। আমাদের চারদিকে রয়েছে বৃহৎ- জগৎ- সংসার। ক্ষুদ্র আমিত্বের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে বৃহৎ জগৎ – সংসারের নিরন্ন, নিরক্ষর, স্বার্থহীন কোটি কোটি মানুষের কল্যাণের কথা সকলেরই ভাবা উচিত।তাতে যেমন জীবনের স্বাদ উপভোগ করা যাবে, তেমনিই দেশ ও জাতির উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণ সাধিত হবে। পৃথিবীতে অনেক মহামানব, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি মানুষের হৃদয়াসনে স্থান পেয়েছেন পরার্থে নিজ স্বার্থ উৎসর্গ করার জন্য, আপনসওাকে জগতে মানবসওার সঙ্গে একসূত্রে গাঁথার কারণে। তারা মানবকল্যাণের জন্য, সমাজের মঙ্গলের জন্য দুঃখকে বরণ করে সভ্যতার ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। এরাই প্রকৃত মানবজীবনের অধিকারী। জগতে তাদের মৃত্যু নেই, বিনাশ নেই।কেবল ব্যক্তিগত ভোগ-বাসনার মধ্য মানবিক মূল্যবোধের কোন পরিচয় মেলে না, প্রকৃত সুখের দেখা পাওয়া যায় না। প্রকৃত সুখ তখনই লাভ করা যায় যখন আপন স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে মানুষ বৃহৎ জগৎ- সংসারের জন্য নিজেকে নিবেদিত করে।