সান্ডা কি? সান্ডা খাওয়ার উপকারিতা কি।
সান্ডা (বা সানডা) একটি প্রজাতির বড় গুইসাপজাতীয় সরীসৃপ প্রাণী, যা মূলত মরুভূমি বা শুষ্ক এলাকায় দেখা যায়। একে “Dabb” (আরবিতে: الضبّ) বলা হয়। এটি দেখতে কিছুটা গুইসাপ বা বড় টিকটিকির মতো, তবে এর শরীর মোটা ও লেজ শক্তিশালী হয়।
সান্ডা সম্পর্কে বিস্তারিত:বৈশিষ্ট্য বিবরণ
বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx (একাধিক প্রজাতি রয়েছে)
আবাসস্থল মরুভূমি অঞ্চল — মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানের কিছু অংশ খাদ্যাভ্যাস গাছের পাতা, ফলমূল — সাধারণত নিরামিষাশী আচরণনদিনের বেলা সক্রিয়, বালির গর্তে বাস করে রক্ষণব্যবস্থা মানুষ কিছু কিছু দেশে পোষা প্রাণী হিসেবেও রাখে ঔষধি বিশ্বাস উপমহাদেশে বিশেষ করে পাকিস্তানে অনেকে বিশ্বাস করে সান্ডার তেল (সানডা তেল) যৌন শক্তি বাড়াতে সহায়ক, যদিও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি:
ইসলামে সান্ডা (Dabb) খাওয়া হারাম নয়।
রাসূল (সা.) নিজে খাননি, তবে নিষেধও করেননি (সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত)।
সান্ডা খাওয়া কি হালাল?
“সান্ডা” সাধারণত মরুভূমির একটি প্রাণী, যেটাকে আরবি ভাষায় বলা হয় “দাব” বা “দাব্বুল-আরদ”। এটি গুইসাপ বা বড় টিকটিকির মতো দেখতে, এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়।
ইসলামে সান্ডা খাওয়া হালাল কি না — এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত আছে:
হালাল বলে যারা মত দেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি:
সহীহ হাদীসে এসেছে যে রাসুল (সা.) সান্ডা খাননি, তবে তিনি তা খাওয়া নিষেধও করেননি।
সাহাবীগণ সান্ডা খেয়েছেন এবং নবীজি তা দেখে নিষেধ করেননি। তাই অনেক আলেম একে মুবাহ (যা খাওয়া বৈধ) বলে মত দেন।
যারা হারাম বলেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি:
কিছু আলেম একে অপছন্দনীয় বা মাকরূহ বলেন, কারণ এটা সাধারণভাবে মানুষ খায় না এবং দেখতে ভয়ংকর।
তারা আরও বলেন, রাসুল (সা.) নিজে এটা খেতে অপছন্দ করেছেন।
সারসংক্ষেপ:
সান্ডা খাওয়া সরাসরি হারাম নয়।
অনেক আলেমের মতে এটি হালাল বা মুবাহ, তবে কেউ কেউ একে মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বলে থাকেন। আপনি যদি খেতে চান, তাহলে তা শরিয়তের দিক থেকে বৈধ — তবে স্থানীয় প্রথা ও আপনার নিজের বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
Dabb:
“Dabb” (الدَّبُّ) বা “Dabb al-Ard” (دَبُّ الأَرْضِ) একটি মরুভূমির প্রাণী, যাকে বাংলায় অনেকে “সান্ডা”, “গুইসাপ”, বা বড় মরুভূমির টিকটিকি বলে থাকেন। এটি আরব অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে সাহারা বা আরব মরুভূমিতে।
Dabb সম্পর্কে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি:
হাদীস থেকে প্রমাণ:
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে:
ابن عباس رضي الله عنهما বলেন:
“رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يأكل الضب، ولا حرّمه.”
অর্থ: “রাসুল (সা.) সান্ডা খাননি, তবে তিনি একে হারামও ঘোষণা করেননি।”
(সহীহ বুখারী: 5535, সহীহ মুসলিম: 1944)
আরো একটি হাদীসে:
خالد بن الوليد رضي الله عنه বলেন:
“সান্ডা খাওয়ার সময় আমি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করি:
‘হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি হারাম?’
তিনি বলেন: না, তবে এটা আমার কওমের খাদ্য নয়, এজন্য আমি এটি খাই না।’
(সহীহ বুখারী)
ইমামদের মতামত:
ইমাম মালিক, শাফেয়ী, ও আহমাদ ইবনে হাম্বল:
Dabb খাওয়া হালাল।
ইমাম আবু হানিফা:
তিনি একে মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বলেন, তবে স্পষ্ট হারাম নয়।

হ্যাঁ, সান্ডার মাংস ইসলামে হালাল।
এটি প্রমাণিত হয়েছে একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা। নিচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
1. হাদীস দ্বারা প্রমাণ:
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে উল্লেখ রয়েছে:
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন:
“الضبُّ أُكِلَ على مائدةِ رسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ، ولم يأكلْه، ولم يَنْهَ عنه.”
অনুবাদ: “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে সান্ডার মাংস খাওয়া হয়েছে, তিনি নিজে খাননি, তবে নিষেধও করেননি।”
— সহীহ বুখারী: 5536
খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বলেন:
তিনি সান্ডা খাচ্ছিলেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন,
“এটি আমার জাতির খাদ্য নয়, তাই আমি এটি খাই না।”
— (সহীহ মুসলিম)
সারসংক্ষেপ:
সান্ডা হারাম নয়।
রাসুল (সা.) নিজে না খেলেও নিষেধ করেননি।
অধিকাংশ আলেমের মতে সান্ডা খাওয়া হালাল
সান্ডার তেলঃ
সান্ডার তেল (বা সানডা তেল) মূলত একটি লোকজ বা পারম্পর্যিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত তেল, যা সান্ডা নামক গুইসাপজাতীয় প্রাণীর শরীর থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি বিশেষত ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে বেশ পরিচিত।
সান্ডার তেল সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা:
1. ব্যবহারের উদ্দেশ্য (লোকজ বিশ্বাস):
যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য (aphrodisiac)
পুরুষত্বে শক্তি বাড়াতে
শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে
2. ব্যবহারের পদ্ধতি:
অনেকে এটি মালিশ বা ম্যাসাজ হিসেবে ব্যবহার করে।
কেউ কেউ খাওয়ার কথাও বলে, তবে তা বিপজ্জনক এবং প্রমাণহীন।
3. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি:
এখন পর্যন্ত কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি যে সান্ডার তেল যৌন শক্তি বাড়ায়। অনেক সময় বাজারে বিক্রি হওয়া সান্ডার তেল নকল বা ভেজাল হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ:
সান্ডা হালাল, তাই যদি সঠিকভাবে জবাই করে এবং শরিয়তের নিয়ম মেনে তৈল তৈরি করা হয়, তাহলে সেই তৈল ব্যবহার করা বৈধ। তবে শরীরচর্চা বা যৌন শক্তির জন্য তাবিজ-তন্ত্র বা কুসংস্কারমূলক বিশ্বাস ইসলামে নিষিদ্ধ।
সতর্কতা:
চিকিৎসা বা শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সান্ডার তেল ব্যবহার করার আগে একজন ডাক্তার বা হাকিমের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ভুল তথ্য বা প্রচারণা থেকে সাবধান থাকুন।
সংক্ষেপে:
সান্ডা হালাল, তাই শরিয়তসম্মত উপায়ে তৈরি সান্ডার তেল ব্যবহার বৈধ হতে পারে। কিন্তু এটি যৌন শক্তি বাড়ায় — এমন দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।
সান্ডা খাওয়ার উপকারিতাঃ
এ বিষয়ে অনেক লোকজ বিশ্বাস আছে, বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা খুব সীমিত। নিচে প্রথাগত ধারণা ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দুইটি দিক তুলে ধরা হলো:
লোকজ বিশ্বাস অনুযায়ী সান্ডা খাওয়ার উপকারিতা:
1. যৌন শক্তি বৃদ্ধি:
সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বিশ্বাস হলো, সান্ডা (বিশেষ করে এর তেল বা মাংস) পুরুষের যৌন শক্তি বাড়ায়। একে প্রাকৃতিক “ভায়াগ্রা” হিসেবেও ডাকা হয় গ্রাম্য চিকিৎসায়।
2. শারীরিক শক্তি ও স্ট্যামিনা বাড়ানো:
অনেকে মনে করে এটি শক্তি বাড়ায় ও শরীর গরম রাখে।
3. বাতব্যথা বা জয়েন্টের ব্যথা উপশমে সহায়ক (তেল):
সান্ডার তেল ম্যাসাজ হিসেবে ব্যবহৃত হয় জয়েন্ট ব্যথা বা পেশির ব্যথায়।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে:
সান্ডা নিরামিষাশী প্রাণী, তাই এর মাংসে বিষাক্ত কিছু থাকে না। এর চর্বি বা তেল থেকে কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যেতে পারে, যা ত্বকের জন্য ভালো হতে পারে।
তবে যৌন শক্তি বাড়ায় — এই দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।
সতর্কতা:
বাজারে অনেক ভেজাল সান্ডার তেল বা পাউডার পাওয়া যায় — যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি:
সান্ডা হালাল (যদি শরিয়তের নিয়মে জবাই করা হয়)।
ব্যবহার বা খাওয়া নিষিদ্ধ নয়, তবে অপব্যবহার ও অতিরঞ্জিত বিশ্বাস থেকে বিরত থাকা উচিত।