প্রকৃত মুদ্রা এবং প্রায় মুদ্রার ধারণা এবং পার্থক্যসমূহ বর্ণনা করুন।
Describe the Concepts of Actual Money and Near Money and their Differences.
উত্তর: একটি দেশে বিভিন্ন প্রকার অর্থ বা মুদ্রা প্রচলিত থাকে। এরই মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা হলো-
(ক) প্রকৃত মুদ্রা এবং (খ) প্রায় মুদ্রা।
নিম্নে সংজ্ঞা প্রদান করতে এদের পার্থক্য ব্যাখ্যা করা হলো :
(ক) প্রকৃত মুদ্রা (Actual money proper money): যে অর্থের মাধ্যমে বাস্তব জীবনে অর্থনৈতিক লেনদেনের কাজ সম্পন্ন হয় তাকে প্রকৃত মুদ্রা বলে।
প্রকৃত মুদ্রা দু’প্রকার। যথা-ধাতব মুদ্রা ও কাগজি মুদ্রা। যেমন- আমাদের দেশের এক টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত সকল প্রকার ধাতব ও কাগজি নোটকে মুদ্রা বলা যায়।
মোটকথা সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক যে ধাতব মুদ্রা তারল্য অসীম এবং তা বিনিময় কাজে বহুল ব্যবহৃত হয়।
প্রকৃতপক্ষে এ জাতীয় মুদ্রাকে অধ্যাপক বেনহাম “কারেন্সি ইউনিট” এবং অধ্যাপক সেলিগম্যান “প্রকৃত মুদ্রা” বলে অভিহিত করেছেন।
(খ) প্রায় মুদ্রা (Near money): যে সম্পদকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় না।
কিন্তু প্রয়োজনবোধে অর্ধে রূপান্তর করা যায় সেগুলোকে প্রায় মুদ্রা বলে। প্রায় মুদ্রা সহজেই অর্থে রূপান্তর করা যায় বলে এটি সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য।
প্রাইজ বন্ড, ট্রেজারি বিল, সঞ্চয়পত্র, সরকারি বন্ড, চাহিদা আমানত ইত্যাদি প্রায় মুদ্রার শামিল, সুতরাং বাস্তবে কিছু সম্পদ আছে যাদের মধ্যে অর্থের কিছু গুণাগুণ আছে এদেরকে প্রায় অর্থ বলতে এমন সব সম্পদ বুঝায় যেগুলো মোটামুটি তরল এবং সুদ অর্জন করে আবার নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবেও কাজ করতে পারে।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রকৃত মুদ্রা ও প্রায় মুদ্রার মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
১। সংজ্ঞা: যে অর্থের মাধ্যমে বাস্তব জীবনে অর্থনৈতিক লেনদেন কাজ সম্পন্ন করা হয় তাকে প্রকৃত মুদ্রা বলে।
অপরদিকে যে সম্পদকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় না কিছু প্রয়োজনবোধে অর্থে রূপান্তর করা যায় সেগুলোকে প্রায় মুদ্রা বলে।
২। ব্যয়বহুল: প্রায় মুদ্রা নগদ মুদ্রায় রূপান্তর করতে কিছু ব্যয় হয়। অর্থাৎ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে প্রায় মুদ্রা ব্যবহারের কিছু বায় আছে।
কিন্তু প্রকৃত মুদ্রা বা নগদ মুদ্রার ক্ষেত্রে মালিককে এরূপ ব্যয় বহন করতে হয় না।
৩। সুদ অর্জন: নগদ অর্থ হাতে রাখলে কোনো সুদ পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রায় অর্থ (মুদ্রা) হাতে ধরে রাখলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তা থেকে সুদ অর্জন করা যায়।
৪। বিনিময়ের মাধ্যম: প্রকৃত মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সরাসরি কাজ করে।
কিন্তু প্রকৃত মুদ্রার এই বৈশিষ্ট্য প্রায় মুদ্রার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ প্রায় মুদ্রা মূল্যের সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে।
৫। তারল্যতা: প্রকৃত মুদ্রা পুরাপুরি তরুণ। অর্থাৎ প্রকৃত মুদ্রার সম্পূর্ণ তারল্য আছে। কিন্তু প্রায় মুদ্রার তারল্য কম।
অর্থাৎ প্রায় মুদ্রা অপূর্ণ তারল্যমান সম্পন্ন।
৬।. দায়বদ্ধতা: প্রকৃত মুদ্রার ক্ষেত্রে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি দায়বদ্ধ থাকে।
কিন্তু প্রায় মুদ্রার ক্ষেত্রে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রত্যক্ষভাবে দায়বদ্ধতা বহন করে না। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা কোনো ব্যাংক সেই দায়ভার বহন করে।
সংক্ষেপে এগুলোই প্রকৃত মুদ্রা এবং প্রায় মুদ্রার মধ্যে পার্থক্যসমূহ।