বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক হিসাব ও বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক হিসাব ও বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন ধরণের ব্যাংক হিসাব ও বৈশিষ্ট্য

সঞ্চয়ী হিসাব (Savings Account):
জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তোলারজন্য ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাবে শর্তসাপেক্ষে অপেক্ষাকৃত কম হারে (সাধারণত ৩-৪%) সুদ প্রদান করে। সুদ কম দিতে হয় বলে ব্যাংকে এ ধরনের হিসাবকে Low Cost হিসাব বলে মনে করা হয়। সঞ্চয়ী হিসাবে সুদ পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন এক (০১) থেকে পাঁচ (০৫) তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে, দৈনিক স্থিতি গড়ে সর্বনিম্ন ৫০০০/- টাকা হতে হবে, কোন মাসে তিন (০৩) বারের অধিক বা একবারে মোট স্থিতির ২৫ শতাংশ বা তদুর্দ্ধ অংকের টাকা উত্তোলন করলে উক্ত মাসে সুদ দেয়া হবেনা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে জেনে নিতে হবে। সঞ্চয়ী হিসাব আবার কয়েক ধরনের হয় যেমন-

ব্যক্তিক সঞ্চয়ী হিসাব (একক/যৌথ নামে):
উপযুক্ত শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশের যেকোন স্বল্প আয়ের মানুষ, চাকুরিজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গৃহস্থ-গৃহিণী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ একক বা যৌথ নামে ব্যক্তিক সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারেন। আঠারো (১৮) বছরের নিচে কোন নাবালক আইনগত অভিভাবক নিযুক্ত করে এই হিসাব খুলতে পারেন।

প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয়ী হিসাব:
যেকোনো সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন স্কুল-কলেজ, সরকারি-আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, মন্দির-মসজিদ, মাদ্রাসা-এতিমখানা, সমিতি, ক্লাব, ট্রাস্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা একক বা যৌথ নামে সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারে।

শিক্ষার্থী সঞ্চয়ী হিসাব:
ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য এবং ব্যাংকিং বিষয়ে ছোটবেলা থেকেই সম্যক জ্ঞান অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যাংকে স্কুল-ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। আঠারো (১৮) বছরের নিচে যেকোন শিক্ষার্থী পিতা-মাতা বা কোন আইনগত অভিভাবক নিযুক্ত করে মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়ে শিক্ষার্থী সঞ্চয়ী হিসাব (Student Savings Account) খুলতে পারেন। এই হিসাবে বৃত্তি/উপবৃত্তির টাকাও জমা করা যায়। কোন সার্ভিস চার্জ কর্তন করা হয়না। এছাড়া ব্যক্তিক সঞ্চয়ী হিসাব এর মত অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থী সঞ্চয়ী হিসাবে পাওয়া যায়

শিক্ষার্থী সঞ্চয়ী হিসাব খোলার শর্তাবলী

ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের পরিচিতিমূলক তথ্য প্রদান করতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র এবং আইডি কার্ড প্রদান করতে হবে।

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি ইত্যাদি পরীক্ষা সনদের কপি প্রদান করতে হবে।

প্রাপ্ত-বয়স্ক হলে ছাত্র-ছাত্রী নিজেরাই হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন।

কৃষক সঞ্চয়ী হিসাব :
কৃষকগণ মাত্র ১০ টাকা জমা দিয়ে সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারবেন। রাষ্ট্রীয় চার বাণিজ্যিক ব্যাংক তথা সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা এবং তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক তথা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকে কৃষক সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যায়। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে কৃষক সঞ্চয়ী হিসাব খোলার কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি ভর্তুকির টাকা প্রদান, কৃষি ঋণ বিতরণসহ কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় লেনদেনের জন্য কৃষককে এই হিসাব খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়। কৃষককে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে কৃষিকার্ড সংগ্রহ করতে হয়। কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের তালিকা ব্যাংকে প্রেরণ করে। কৃষিকার্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গেলে তালিকায় নাম দেখে কৃষক সঞ্চয়ী হিসাব খুলে দেয়া হয়। এই হিসাবের জন্য পরিচয়দানকারী (Introducer) বা কোন জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন নেই। কৃষিকার্ডই এক্ষেত্রে পরিচয়পত্রের ভূমিকা পালন করে। তবে কৃষক এবং নমিনির দুই (০২) কপি করে ছবি এবং শুধু নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হবে।

পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু-কিশোর সঞ্চয়ী হিসাব:
ছিন্নমূল পথশিশু ও কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের ব্যাংকিং-এর আওতায় নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংকে এই হিসাব খোলার কার্যক্রম শুরু করে। এই হিসাবে কোন সার্ভিস চার্জ কর্তন করা হয়না। শিশুর পিতা-মাতা বেঁচে থাকলে তাঁদের যেকোনো একজন এবং উক্ত শিশুর যৌথ স্বাক্ষরে হিসাবটি পরিচালিত হবে। এনজিওর মনোনীত একজন প্রতিনিধি সার্বিকভাবে বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন। পিতা-মাতা না থাকলে এনজিও-র মনোনীত অভিভাবক এবং উক্ত শিশুর যৌথ স্বাক্ষরে হিসাবটি পরিচালিত হবে। শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হলে হিসাব পরিচালনার সকল দায়িত্ব তার উপর বর্তাবে।

উল্লিখিত সঞ্চয়ী হিসাবসমূহ ছাড়াও ব্যাংকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, দারিদ্র্য ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, অবসরকালীন ভাতাসহ প্রভৃতি সরকারি অনুদান প্রদান করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়।

সঞ্চয়ী হিসাবের সুবিধা

• ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, চেক বই প্রদানসহ ঋণ সুবিধা প্রদান।

• অনলাইনে ফান্ড ট্রান্সফারের সুবিধা।

• মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা।

• অবাধ লেনদেনের সুবিধা (ঘোষিত Transaction Profile অনুযায়ী)।

অনলাইনে যেকোন শাখায় জমা বা উত্তোলন সুবিধা।

• প্রতি ছয় (০৬) মাস পরপর (জুন ও ডিসেম্বরে) সুদ পাওয়া যায় (শর্তসাপেক্ষে)।

• বছরে দুই (০২) বার (জুন ও ডিসেম্বর পরবর্তী) ফ্রি হিসাব বিবরণী (Acc Statement) পাওয়া যায়।

• RTGS BEFTN সুবিধা পাওয়া যায়।

হিসাব একই ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়।

অন্যান্য শর্তাবলী ও প্রয়োজনীয় তথ্য

• সপ্তাহে দুই (০২) বারের অধিক টাকা উত্তোলন করলে এবং প্রতিমাসে একটি নিদিষ্ট গড়-পরিমাণ টাকা না থাকলে সুদ পাওয়া যায়না।

• সুদের হার অপেক্ষাকৃত কম (৩-৪%)।

• গ্রাহক মৃত্যুবরণ করলে হিসাব বন্ধ হয়ে যাবে।

সাধারণত ছয় (০৬) মাস একটানা লেনদেন না করলে হিসাবটি Dormant (সুপ্ত) এবং এক (০১) বছর একটানা লেনদেন না করলে In-Operative (নিষ্ক্রিয়) হয়ে যাবে। তবে শাখায় আবেদন করে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে পুণরায় হিসাব সচল (Active) করে নেয়া যায়।

• ন্যূনতম স্থিতি (Minimum Balance) না রাখলে হিসাব In-Operative হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ন্যূনতম স্থিতি জমা দিয়ে পুণরায় হিসাবটি সক্রিয় (Active) করে নিতে হবে।

চলতি হিসাব (Current Account):
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উভয়েই চলতি হিসাব খুলতে পারেন। তবে সাধারনত ব্যবসায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই চলতি হিসাব বেশি খুলে থাকেন। কারণ ব্যবসায়ীদের বেশি সংখ্যক ও অধিক পরিমাণে লেনদেন করতে হয়। চলতি হিসাবে গ্রাহকের ঘোষিত Transaction Profile (TP) অনুযায়ী দিনে যতবার খুশি জমা বা উত্তোলন করা যায়। এই হিসাবের স্থিতির বিপরীতে ব্যাংক কোন সুদ প্রদান করেনা। এ কারণে ব্যাংকিং-এ এ ধরনের হিসাবকে No Cost হিসাব বলা হয়।

চলতি হিসাবের সুবিধা:
•একক বা যৌথ নামে হিসাব খোলা যায়।

•ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, চেক বই ইস্যু করা হয়।

•ফান্ড ট্রান্সফার, RTGS ও BEFTN সুবিধা পাওয়া যায়।

•মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা।

•অবাধ লেনদেনের সুবিধা (Transaction Profile অনুযায়ী)।

•হিসাব একই ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়।

•অনলাইনে যে কোন শাখায় জমা বা উত্তোলন করা যায়।

• বছরে দুই (০২) বার (জুন ও ডিসেম্বর পরবর্তী) ফ্রি হিসাব বিবরণী (Acc Statement) পাওয়া যায়।

• হিসাবে লেনেদেন সন্তোষজনক হলে পরবর্তীতে ব্যবসায়িক ঋণ নিতে সহায়ক হয়।

• ব্যবসায়িক বা বড় লেনদেনের সুবিধা।

• Overdraft Loan (জমাতিরিক্ত ঋণ) সুবিধা পাওয়া যায় (কোন কোন ব্যাংকে)।

• অধিক পরিমাণ টাকা উত্তোলনের জন্য অগ্রিম নোটিশ প্রদানের প্রয়োজন নেই।

অন্যান্য শর্তাবলী ও প্রয়োজনীয় তথ্য

• চলতি হিসাবে কোন সুদ প্রদান করা হয়না।

• ব্যক্তি বা প্রোপাইটরশিপ হিসাব ব্যতীত অন্যান্য চলতি হিসাবে নমিনি নিযুক্ত করা যায়না।

• ন্যূনতম স্থিতির পরিমাণ বেশি (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা)। ব্যাংক ভেদে এ পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।

• ট্রেড লাইসেন্স-এর মেয়াদ শেষ হলে বা ন্যূনতম স্থিতি (Minimum Balance) না রাখলে হিসাব In-Operative হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স সরবরাহ করে বা ন্যূনতম স্থিতি নিশ্চিত করে পুনরায় সচল করতে হবে।

• সাধারণত ছয় (০৬) মাস একটানা লেনদেন না করলে হিসাবটি Dormant (সুপ্ত) এবং এক (০১) বছর একটানা লেনদেন না করলে In-Operative (নিষ্ক্রিয়) হয়ে যাবে। তবে শাখায় আবেদন করে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে পুণরায় হিসাবটি সক্রিয় (Active) করে নেয়া যায়।

Short Term Deposit/Special Notice Deposit (STD/SND)
হিসাব: আঠারো (১৮) বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের কোন ব্যক্তি (সাধারণত বিত্তবান) এবং বৃহৎ কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য STD হিসাব খোলা হয়। STD হিসাবের টাকা উত্তোলনের জন্য কমপক্ষে সাত (০৭) দিন পূর্বে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে ব্যাংকে লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হয়। নোটিশ প্রদান ব্যতীত অর্থ উত্তোলন করলে উক্ত মাসের স্থিতির বিপরীতে কোন সুদ প্রদান করা হয়না। তবে যেকোন সময় নোটিশ ছাড়াই অর্থ জমা করা যায়। অপ্রাপ্ত-বয়স্ক কোন ব্যক্তি এই হিসাব খুলতে পারেনা।

STD/SND হিসাবের সুবিধা

• সুদ পাওয়া যায় (শর্তসাপেক্ষে)।

• ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, চেক বই ইস্যু করা হয়।

• ফান্ড ট্রান্সফার, RTGS ও BEFTN সুবিধা পাওয়া যায়।

• মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা।

• অবাধ লেনদেনের সুবিধা (TP অনুযায়ী)।

• হিসাব একই ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়।

• অনলাইনে যে কোন শাখায় জমা বা উত্তোলন করা যায়।

• বছরে দুই (০২) বার (জুন ও ডিসেম্বর পরবর্তী) ফ্রি হিসাব বিবরণী (Acc Statement) পাওয়া যায়।

• ব্যক্তি (সাধারনত নীট সম্পদের অধিকারী) ও প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলা যায়।

• ব্যক্তি বা প্রোপাইটরশিপ হিসাবে নমিনি নিযুক্ত করা যায়।

• বড় অংকের লেনদেনের সুবিধা।

অন্যান্য শর্তাবলীও প্রয়োজনীয় তথ্য

• টাকা উত্তোলনের কমপক্ষে সাত (০৭) দিন পূর্বে নোটিশ না দিলে সংশ্লিষ্ট মাসে সুদ দেয়া হয় না।

• আঠারো (১৮) বছরের নিচে কেউ এই হিসাব খুলতে পারে না।

• ব্যক্তি বা প্রোপাইটরশিপ হিসাব ব্যতীত অন্যান্য এসএনডি হিসাবে নমিনি নিযুক্ত করা যায়না।

স্থায়ী আমানত Fixed Deposit Receipt (FDR):
যে আমানত একটি নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর সুদসহ ফেরত পাওয়া যায় তাকে স্থায়ী আমানত বলে। এধরনের আমানতের বিপরীতে ব্যাংক আকর্ষণীয় হারে সুদ প্রদান করে। স্থায়ী আমানতের মেয়াদ সাধারণত তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর, পাঁচ বছর বা ততোধিক হতে পারে। স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ব্যাংক থেকে চেক এর মতো একটি ইন্সট্রুমেন্ট প্রদান করা হয়, যাতে আমানতের পরিমাণ, সুদের হার, মেয়াদপূর্তির তারিখ, আমানতকারীর নাম ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। ইন্সট্রুমেন্টটি হারিয়ে গেলে গ্রাহককে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই এটি অতি যত্নে সংরক্ষণ করতে হবে এবং মেয়াদপূর্তির পর গ্রাহক নিজে এটি নিয়ে ব্যাংকে উপস্থিত হলে আমানতের টাকা সুদ সহ ফেরত দেয়া হবে। মেয়াদপূর্তির আগে গ্রাহক মারা গেলে নমিনিকে উক্ত ইন্সট্রুমেন্টটি নিয়ে ব্যাংকে আসতে হবে।

স্থায়ী আমানত হিসাবের সুবিধা

• একই নামে একাধিক হিসাব খোলা যায়।

• একক বা যৌথ নামে হিসাব খোলা যায়।

• উচ্চ হারে সুদ পাওয়া যায়।

• মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙানো যায়, তবে সেক্ষেত্রে সুদের হার পুরো বা আংশিক ছেড়ে দিতে হয়।

• হিসাব একই ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়।

• স্থায়ী আমানতের বিপরীতে জমাকৃত আমানতের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাওয়া যায়।

• Auto-Renewal হয় (কোন কোন ক্ষেত্রে)।

• আইনগত অভিভাবক নিযুক্ত করে নাবালকের নামে হিসাব খোলা যায়।

স্থায়ী আমানত হিসাব খোলার শর্তাবলী

• উক্ত হিসাবের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি সেটেলমেন্ট একাউন্ট (সঞ্চয়ী/চলতি হিসাব) থাকতে হবে। মেয়াদপূর্তির পরে বা পূর্বে আমানতের টাকা (আসল বা সুদ) সেটেলমেন্ট হিসাবে স্থানান্তর করা হবে।

• উক্ত স্থায়ী আমানত খোলার পর আমানতের পরিমাণ, সুদহার বা মেয়াদ-এর সময়সীমা, মালিকানা ইত্যাদির কোন কিছুই পরিবর্তনযোগ্য নয়। মেয়াদপূর্তির পূর্বে গ্রাহক মৃত্যুবরণ করলে হিসাবটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং নমিনীকে উক্ত এফডিআর ব্লক/ইন্সট্রুমেন্টটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।

• ডেবিট কার্ড, চেক বই বা ফান্ড ট্রান্সফার সুবিধা প্রদান করা হয়না।

• গ্রাহককে প্রদত্ত এফডিআর ব্লক/ইন্সট্রুমেন্টটি হস্তান্তরযোগ্য নয় অর্থাৎ অন্য কাউকে এর মালিকানা হস্তান্তর করা যাবেনা বা অন্য কেউ এটি ব্যাংকে উপস্থাপন করে টাকা উত্তোলন করতে পারবে না।

মাসিক সঞ্চয়ী স্কিম হিসাব/Deposit Pension Scheme (DPS)
প্রতিমাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকা বাধ্যতামূলকভাবে জমা করার লক্ষ্যে যে হিসাব খোলা হয় তাই মাসিক সঞ্চয়ী স্কিম হিসাব। স্কিম হিসাবও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মেয়াদে খোলা হয়। মেয়াদ শেষে আকর্ষণীয় হারে সুদসহ আমানত ফেরত পাওয়া যায়। সাধারণত ৫০০, ১০০০, ১৫০০, ২০০০, ২৫০০, ৫০০০ টাকা হতে শুরু করে ২৫০০০ বা ততোধিক পর্যন্ত পরিমাণ টাকা জমা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও একটি ব্যাংকে লাখপতি, কোটিপতি বা মিলিয়নিয়ার স্কিমসহ বিভিন্ন ধরনের স্কিম চালু থাকে। এগুলোর কিস্তির পরিমাণ, সময়কাল ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসমূহ জেনে নিয়ে গ্রাহকের সামর্থ্য অনুযায়ী খুলতে হবে।

স্কিম হিসাবের সুবিধা

• আকর্ষণীয় হারে সুদ প্রদান করা হয়।

• একই নামে একাধিক হিসাব খোলা যায়।

• একক বা যৌথ নামে হিসাব খোলা যায়।

• আইনগত অভিভাবক নিযুক্ত করে নাবালকের নামে হিসাব খোলা যায়।

• মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙ্গানো যায়, তবে সেক্ষেত্রে সুদের হার পুরো বা আংশিক ছেড়ে দিতে হয়।

• একই ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় হিসাব স্থানান্তর করা যায়।

• সাধারণত এক (০১) বছর পর জমাস্থিতির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণসুবিধা গ্রহণ করা যায়।

• অগ্রিম কিস্তি প্রদানের সুযোগ রয়েছে।

• অনলাইন ব্যাংকিং এ যেকোন শাখা হতে কিস্তির টাকা জমা দেওয়া যায়।

• গ্রাহক চাইলে সঞ্চয়ী/চলতি হিসাব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাসিক কিস্তির টাকা কর্তনের সুযোগ আছে (এক্ষেত্রে চার্জ প্রযোজ্য)।

এসএমএস এলার্ট সার্ভিস চালু করা যায়।

প্রয়োজনীয় তথ্য ও শর্তাবলি

• গ্রাহকের একটি সেটেলমেন্ট (সঞ্চয়ী/চলতি) একাউন্ট থাকতে হবে। না থাকলে খুলে নিতে হবে। মেয়াদপূর্তির পরে বা পূর্বে আমানতের টাকা (আসল বা সুদ) সেটেলমেন্ট হিসাবে স্থানান্তর করা হবে।

• স্কীম হিসাবের বিপরীতে কোন ব্লক বা কোন ইন্সট্রুমেন্ট প্রদান করা হয়না। নগদ জমাস্লিপের মাধ্যমে প্রতি মাসে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কিস্তির টাকা জমা দিতে হয়। কোন মাসে কিস্তি না দেয়া হলে পরবর্তী মাসে নির্ধারিত হারে জরিমানাসহ সকল কিস্তি একসাথে জমা দেয়া যায়।

• হিসাব খোলার পর কিস্তির পরিমাণ, সুদের হার, মেয়াদের সময়সীমা, হিসাবের মালিকানা ইত্যাদি পরিবর্তনযোগ্য নয়।

• ব্যাংক ভেদে পরপর তিন (০৩) বা চার (০৪) কিস্তি না দিলে হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

• মেয়াদপূর্তির পূর্বে গ্রাহক মৃত্যুবরণ করলে হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে হিসাবের অর্থ উত্তোলনের জন্য নমিনীকে পরিচয়পত্রসহ সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।

• স্কীম হিসাবের বিপরীতে কোন ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, চেক বই, ফান্ড ট্রান্সফার সুবিধা প্রদান করা হয়না।

নমিনী কর্তৃক টাকা উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

• হাতে লেখা আবেদনপত্র।

• পৌরসভা বা হাসপাতাল কর্তৃক প্রদত্ত হিসাবধারীর মৃত্যুসনদ।

চেয়ারম্যান/কমিশনার/মেয়র কর্তৃক প্রদত্ত নমিনীর পরিচয়পত্র সনদ।

• জন্মসনদ/জাতীয় পরিচয়পত্র ও দুই (০২) কপি ছবি।

• ব্যাংক হতে সরবরাহকৃত Indemnity Bond-এ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার দুজন গ্রাহকের স্বাক্ষর।

উত্তরাধিকারী কর্তৃক টাকা উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

• হাতে লেখা আবেদনপত্র।

• পৌরসভা বা হাসপাতাল কর্তৃক প্রদত্ত হিসাবধারীর মৃত্যুসনদ।

• চেয়ারম্যান/মেয়র কর্তৃক প্রদত্ত উত্তরাধিকারীর পরিচিতি সনদ ও স্বাক্ষর সত্যায়ন।

• আদালত কর্তৃক প্রদত্ত ওয়ারিশগণের তালিকা (Succession Certificate)

• সকল ওয়ারিশদের দুই (০২) কপি করে সত্যায়িত ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র।

• সকল ওয়ারিশগণ কর্তৃক একজন ওয়ারিশকে টাকা প্রদানের ক্ষমতা প্রদানের দলিল।

• প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে স্বাক্ষরিত হলফনামা।

• ব্যাংক হতে সরবরাহকৃত Indemnity Bond and Surety Bond এ স্বাক্ষর করতে হবে।

• দুইশত (২০০/-) টাকা মূল্যের আঠালো স্ট্যাম্প।

বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক, বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক,বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক
বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক, বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক,বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক, বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক হিসাব ও বৈশিষ্ট্য

About Post Author

Related posts