তালমাখনা খাওয়ার সঠিক নিয়ম, তালমাখনা ছবি
তালমাখনা একটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজ ওষুধ। যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনার ব্যাপক ভুমিকা ও ভেষজ গুণাবলি আছে। এক প্রকার লতাগুল্ম জাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদের বীজ। গাছটি বেশ শক্ত । এটি প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা, তবে অধিকাংশ গাছই ৩০ সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকে। গাছের কাণ্ড শাখায়িত। কাঁটার রঙ হালকা হলদে ও বাদামি, পাতার রঙ কিছুটা তামাটে সবুজ। পাতাগুলো গিঁট থেকে বের হয়ে বাইরের দিকে লম্বা হয় আর ভেতরের দিকের পাতাগুলো হয় খাটো। কাঁটা আর পাতা উভয়ই ওপরের দিকে খাড়াভাবে থাকে। এছাড়া ফুলগুলোও ফোটে গিঁট থেকে তবে ফুল ফোটে ডিসেম্বরে। এ গাছ জলাভূমির ধারে জন্মে থাকে। ফুলগুলো দেখতে পাবেন উজ্জ্বল বেগুনি বা লালচে বেগুনি রঙের, মাঝে মধ্যে সাদাটে হয়। তালমাখনা পাতা, বীজ ও শিকড় ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক তালমাখনা কি, কোথায় পাওয়া যায় ও এর ভূমিকা।
তালমাখনা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
তালমাখনা কোথায় পাবেনঃ
তালমাখানা পাবেন বাইনাতির দোকানে, যারা বিষেশ করে রকম ঔষধি গাছ গাছান্ত বিক্রি করে থাকে।
ব্যবহার্য অংশঃ তালমাখনা বীজ ।
যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনার উপকারিতা :
তালমাখনা দেহ ও মনের প্রফুল্লতা আনে। শুধু তাই নয়, যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতে তালমাখনার ভূমিকা ম্যাজিকের মত। এক কথায় এটি শুক্রবর্ধক, যৌনশক্তিবর্ধক, বীর্য গাঢ়কারক ও স্বপ্নদোষ নিবারক। লিউকোরিয়া, শুক্রমেহ, যৌনদুর্বলতা ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায় বিশেষ কার্যকর। ডায়াবেটিসসহ যে কোনো কারণে যদি যৌনদুর্বলতা আসে তালমাখনা দিয়ে তৈরি ওষুধে তা দ্রুত দূর করা যায়। তালমাখনার পাতা ও শাখার জোসান্দা লিভার এবং কিডনির প্রতিবন্ধকতা দূর করে। এটি কোষ্ঠ পরিষ্কারক, মূত্র ও ঘর্ম প্রবাহক। তালমাখনার পাতার প্রলেপ বাত ও সন্ধি ব্যথা উপশমে যথেষ্ট ভুমিকা রাখে।
বিশেষ ক্ষেত্রে কার্যকারিতাঃ
তালমাখনা নিঃসন্দেহে হজমকারক, বায়ুনিঃসারক এবং পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক
জেনে রাখুন তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম এবং রোগ
অনুযায়ী ব্যবহার পদ্ধতিঃ
রোগের নামঃ সাধারণ দুর্বলতায় অথবা দেহের পুষ্টি সাধনে –
ব্যবহার পদ্ধতিঃ
৪ গ্রাম তালমাখনা পাউডার ও তালমিছরি সম পরিমান একত্রে মিশিয়ে দুধসহ প্রত্যহ সকালে খালিপেটে এবং রাত্রে শয়নকালে খাবেন।
রোগের নামঃ শুক্রমেহ ও লিউকোরিয়ায়
ব্যবহার পদ্ধতিঃ
৪ গ্রাম তালমাখনা পাউডার ও ১ গ্রাম পরিমাণ তেঁতুল বীজ পাউডার একত্রে মিশিয়ে দুধসহ প্রত্যহ ২ বার খাবেন।
রোগের নামঃ যৌন ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায়
ব্যবহার পদ্ধতিঃ
৩ গ্রাম তালমাখনা পাউডার, ১ গ্রাম পরিমাণ অশ্বগন্ধা পাউডার ও ৩ চা চামচ মধু একত্রে মিশিয়ে প্রত্যহ ২ বার খাবেন।
এছাড়া যৌন সমস্যার জন্য আরেকটি সহজ ব্যবহার হচ্ছে ৫-৭ গ্রাম তালমাখনা ও সমপরিমাণ তালমিছরি এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার পান করুন। এতে আপনার যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি, বল বৃদ্ধি, বীর্য গাঢ়, বীর্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দ্রুত বীর্যপাত রোধসহ দিন দিন যৌন আগ্রহের উন্নতি হবে। তবে তালমাখনার পরিমাণ কখনই বাড়াবেন না, বাড়ালে বদ হজম হতে পারে।
সতর্কতাঃ নির্দিষ্ট মাত্রায় অধিক পরিমান সেবন করা সমীচীন নয়। এতে পেটে গ্যাস হতে পারে।
তালমাখনার ভেষজ গুনঃ
তালমাখনার ঔষধীগুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা । এর পাতা, শিকড় ও বীজ সবই উপকারী এবং রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর। এতে আছে এলকালয়েড্স, ফাইটোস্টেরোল, ও সুগন্ধের তৈলাক্ত পদার্থ। এছাড়া আছে এনজাইম, ডাইয়াসটেস ও লিপেস। যা প্রস্রাবসহ মূত্রনালির নানা রকম রোগে উপকারী। এমনকি মূত্রনালির পাথর মুক্ত করতেও এটি বেশ সাহায্য করে থাকে।এ সব ছাড়াও এর বীজের তেল জন্ডিস ও বাতজনিত রোগেও বেশ কার্যকরী। আপনি চাইলে এটা রান্নাতেও ব্যবহার করতে পারেন । তালমাখনার বীজ উপকারিতার দিক থেকে সব থেকে কার্যকরী। এটি একই সাথে মিষ্টি ও তিক্ত স্বাদযুক্ত এবং বীজে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার যা আপনার হজম বৃদ্ধিতে সহায়ক। তালমাখনার লো ফ্যাটযুক্ত বীজ ডায়াবেটিকস রোগের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। হার্টের পীড়া, পিত্তথলির পাথর, দুর্বলতা, গ্লডারের সমস্যা, যৌন সমস্যা এবং মানসিক অবসাদ সমাধানে এটি আশীর্বাদ স্বরূপ। সৌন্দর্য বিকাশেও তালমাখনার জুড়ি নেই। ত্বকে বয়সের ছাপ, মলিনতা এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতেও আপনি রোজ তালমাখনা ব্যবহার করতে পারেন।
বিঃদ্রঃ সাধারণভাবে তালমাখনা বা তালমাখনা পাউডার ভিজিয়ে শরবত তৈরী করে প্রতিদিন একবার বা কয়েক বার খেতে পারেন তবে ৫-৭ গ্রামের চেয়ে বেশি খাওয়ার দরকার নেই। স্বাদে বৈচিত্র আনার জন্য সাথে ইসবগুলের ভুষি মিক্স করতে পারেন।
বিঃদ্রঃ কুলেখাড়া বা কুলিকারহা বা কান্তা কালিকা বা ক্ষরিক বা গোকুলকাঁটা , দীর্ঘস্থায়ি সম্ভোগে যাঁরা আগ্রহী তাঁরা শোধিত আত্মগত (আলকুশী) বীজের গুড়ো আধা চামচ এবং কুলেখাড়া বীজের গুড়ো আধা চামচ একসাথে গরম দুধে গুলে খাবেন, তাহলে এটার দ্বারা ঐ উদ্দেশ্যটা সিদ্ধ হবে। কিন্তু এখানে একটা কথা আপনাদের জেনে রাখা দরকার যে, অনেকের ধারণা “তালমাখনা’ হলো কুলেখাড়া বীজ-সেটা কিন্তু ঠিক নয়; বরং বাজারে যেটা তালমাখনা বলে বিক্রি হয় ওটা আসলে পৃথক দ্রব্য,এছাড়া বাজারে যেটা কুলেখাড়া বা কোকিলাক্ষ বীজ বলে বিক্রি হয় সেটাও কুলেখাড়া বীজ নয়। আসল কুলেখাড়া বীজের রং হবে অবিকল কোকিলের চোখের রং এর মত।
বর্তমান বাজার অনুসারে ১ কেজি তালমাখনার দাম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা । তবে স্থান ভেদে ১ কেজি তালমাখনার দাম কম বা বেশি পেতে পারেন ।তবে গুড়া দাম একটু বেশি
তালমাখনার নাম চলিত নাম কুলেখাড়া । এর বৈজ্ঞানিক নাম Hygrophila spinosa, ইংরেজীতে বলা হয়, Star Thorn । তালমাখনায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধীগুন আছে । যেমন, জন্ডিজ ও বাত ব্যতা ক্ষেত্রে তালমাখনা সেবনে বেশ উপকারিতা পাওয়া যায় ।