এক হাজার মাটির হিসাব
মনে করি ১৫৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮০ ফুট প্রস্থের একটি পুকুরটি ৫ ফুট গভীর করতে হবে।
তাহলে কত ঘনফুট মাটি কাটতে হবে।
উল্লেখ্য, উক্ত পুকুরের ঢাল হবে ১ : ১ অর্থ্যাৎ গভীরতা : ঢাল = ১ : ১।
প্রতি হাজার মাটি কাটতে ৩০০০/- টাকা লাগলে পুকুরটি খনন করতে মোট কত টাকা খরচ হবে?
সমাধানঃ সম্পূর্ণ পুকুরটি আয়তাকারে খনন করলে মাটি কাটতে হতো-
১৫৪ × ৮০ × ৫ = ৬১৬০০ ঘনফুট
কিন্তু যখন ঢাল রাখা হচ্ছে তখন এই পরিমাণ মাটি খননের দরকার হচ্ছে না,
কারণ ঢাল যে পর্যন্ত বিস্তৃত সে পর্যন্ত আয়তাকারে মাটি খনন করলে যে
পরিমাণ মাটি কাটার প্রয়োজন হতো ঢাল থাকার কারণে তার অর্ধেক পরিমাণ মাটি কাটার প্রয়োজন হবে।
অর্থ্যাৎ ঢাল থাকার কারণে ৬১৬০০ ঘনফুট মাটি কাটার দরকার হবে না।
প্রকৃত মাটি খননের পরিমাণ এর চেয়ে কম হবে।
মাটিকাটার হিসাব
যখন ঢাল ১ : ১ তখন ঢালের নীচের প্রান্ত পুকুরের পাড় থেকে ৫ ফুট দূরে গিয়ে পুকুরের তলায় মিশবে (কারণ গভীরতা ৫ ফুটের সম পরিমাণ বিস্তৃত হবে ঢাল)।
অর্থ্যাৎ দুই পাশ থেকে ৫ + ৫ = ১০ ফুট জায়গা কমে যাবে। সুতরাং পুকুরের কেন্দ্রের পরিমাপ হবে-
দৈর্ঘ্য = ১৫৪ – ১০ = ১৪৪ ফুট
প্রস্থ = ৮০ – ১০ = ৭০ ফুট এবং
গভীরতা = ৫ ফুট
যার আয়তন হবে = ১৪৪ × ৭০ × ৫ = ৫০৪০০ ঘনফুট
অতএব, প্রকৃত মাটি খননের পরিমাণ/আয়তন হবে (৬১৬০০ + ৫০৪০০)/২ = ৫৬০০০ ঘনফুট
এখন এই হিসাব সঠিক আছে কিনা অন্য পদ্ধতিতে যাচাই করে দেখা যাক-
এই পদ্ধতিতে প্রথমে ঢাল বাদে পুকুরের ভিতরের অংশের মাটি খননের পরিমাপ বের করতে হবে।
উপরের হিসাব থেকে আমরা পাই সেই পরিমাণ হলো = ৫০৪০০ ঘনফুট — (১)
এখন আমরা যে অংশ জুড়ে ঢাল বিস্তৃত সে অংশের মাটি খননের হিসাব বের করব। ঢালকে আমরা একটি বড় আকারের ত্রিভূজ ধরতে পারি যার ভূমির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট। এবং উক্ত ত্রিভূজের পুরুত্বও আছে। আমরা সাধারণভাবে ছবিতে যে ত্রিভূজ আঁকি তার কিন্তু পুরুত্ব থাকেনা। ত্রিভূজের আয়তন বের করতে গিয়ে আমরা সেজন্য আয়তনকে বলে থাকি ক্ষেত্রফল। কারণ, আয়তন হতে গেলে তিনটি মাত্রা অবশ্যই থাকতে হবে, যথাঃ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, এবং বেধ বা পুরুত্ব। কিন্তু ছবির ত্রিভূজের কেবল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থাকে, বেধ থাকে না। ছবির ত্রিভূজের ক্ষেত্রে যে পুরুত্ব থাকে তাকে তল ধরা হয়। তল এমনি একটি পরিমাপ যার সাথে যেকোন একককে গুণ করে ঐ এককে ফলাফল বের করা যায়। অর্থ্যাৎ তাকে ইঞ্চি দ্বারা গুণ করলে ইঞ্চি এককে প্রকাশ করা যায়, আবার ফুট দ্বারা গুণ করে ফুট এককে প্রকাশ করা যায়।
মাটির হিসাব
সুতরাং আমরা যদি ঢালরূপ ত্রিভূজের একটি তলের আয়তন/ক্ষেত্রফল বের করতে পারি এবং সেটাকে তার পুরুত্ব (দৈর্ঘ্য) দ্বারা গুণ করি তাহলে পুকুরের সেই পাড়ের/দিকের প্রকৃত আয়তন বের করতে পারি। এখন দেখা যাক ঢালের উপরি তলের ক্ষেত্রফল কত যার ভূমি ৫ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট। ত্রিভূজের ক্ষেত্রফলের সূত্র বসিয়ে পাই ১/২ × ৫ × ৫ = ১২.৫ বর্গফুট।
তাহলে পুকুরের দৈর্ঘ্য বরাবর ২ টি ঢালের আয়তন হবে = ২ × ১২.৫ × ১৪৯ ঘনফুট বা ৩৭২৫ ঘনফুট — (২)
(দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ওভারল্যাপ করায় প্রতিটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়টি) প্রকৃত পরিমাপের চেয়ে ৫ ফুট কম হবে, কারণ ঢালের অনুপাত থেকে এটা বুঝা যাচ্ছে যে, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়ে ৫ ফুট এলাকা জুড়ে পরস্পরকে ওভারল্যাপ করে আছে।
অন্যদিকে, পুকুরের প্রস্থ বরাবর ২ টি ঢালের আয়তন হবে = ২ × ১২.৫ × ৭৫ ঘনফুট বা ১৮৭৫ ঘনফুট — (৩)
সুতরাং (১), (২), ও (৩) নং উপাত্ত থেকে পাওয়া যায় ৫০৪০০ + ৩৭২৫ + ১৮৭৫ = ৫৬০০০ ঘনফুট মাটি।
শ্রমিকরা এক হাজার ঘনফুট মাটিকে বলে এক হাজার মাটি। অতএব, তাদের ভাষায় পুকুরটি খনন করতে ৫৬ হাজার মাটি কাটতে হবে। সুতরাং পুকুরটি খনন করতে মোট ৩০০০ × ৫৬ = ১৬৮০০০ টাকা খরচ হবে (প্রতি হাজার মাটি ৩০০০ টাকা হিসেবে)।
পূর্বে খননকৃত পুকুর বা জলাশয় পুনঃখননের ক্ষেত্রে পূর্বে কৃত কাজের পরিমাণ (প্রি ওয়ার্ক এস্টিমেট) খনন শুরুর আগেই হিসাব করে নিতে হবে। পুনঃখননের পর মোট গভীরতা যেন হিসাব করা যায় তার জন্য স্থির কোন চিহ্ন বা প্লাটফর্ম থেকে হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। খনন কাজ শেষ হলে খননকৃত জলাশয়ের তলা থেকে সব জায়গায় পানির গভীরতা সমান থাকলে বুঝতে হবে খননের পরিমাণ সঠিক আছে। পুনঃখনন শুরুর আগে জলাশয়ের তলা উচু নিচু থাকলে গভীরতা মাপার ক্ষেত্রে গড় মান ধরতে হবে।