আপনার জীবনে সােশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রভাব যেন না পড়ে তার কারণ গুলি জেনে নিন।

মাত্র কয়েক বছর আগ পর্যন্ত আমরা ডিজিটাল কোনাে ডিভাইসের সাহায্য ছাড়াই অনেক কাজ করতাম। কাজগুলির মধ্যে লেখালেখি থেকে শুরু করে কেনাকাটা করা পর্যন্ত অনেক কিছুই ছিল। এখন সেসব কাজের কথা মাথায় আসলে প্রথমেই আমরা সেলফোন বা পিসির দিকে হাত বাড়াই।

এভাবেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে আমরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করে তুলছি। ফলে এসব ডিভাইসের ব্যবহারও দিনদিন বাড়ছে।

তবে সােশ্যাল মিডিয়ার কারণেই বর্তমানে ডিজিটাল ডিভাইসগুলি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষই কোনাে না কোনাে সােশ্যাল মিডিয়া অথবা সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম নিয়মিত ব্যবহার করেন।

ফলে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন যেসব চাহিদা পূরণ করতে হয়, তার অনেককিছুই সােশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পূরণ হয়ে যাচ্ছে। পরিচিত মানুষদের সাথে নিয়মিত যােগাযােগের পাশাপাশি কেনাকাটা, ব্যবসা কিংবা দেশ-বিদেশের খবরাখবর জানার জন্য এখন বেশিরভাগ মানুষ সােশ্যাল মিডিয়ার ওপরই নির্ভর করে।

অর্থাৎ, সােশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে আমাদের জীবনে একধরনের ডিজিটাল পরিবর্তন আসছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে করে এই পরিবর্তন আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে না দাড়ায়

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মনােবিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণায় সােশ্যাল
মিডিয়ার খারাপ দিকগুলি উঠে এসেছে৷ সেই গবেষণায় দেখা গেছে, সােশ্যাল মিডিয়া আমাদের মানসিক চাপ, একাকীত্ব কিংবা অদক্ষতার অনুভূতি বাড়িয়ে তুলতে পারে। অর্থাৎ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাবধান না হলে সােশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে৷
তাই সােশ্যাল মিডিয়া কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের সবার জীবনে যেই ডিজিটাল পরিবর্তন আসছে, তার ক্ষতিকর দিকগুলি এড়িয়ে চলা উচিৎ।

১. চেক করা কমান

সাম্প্রতিক সময়ে সােশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ওপর একটা জরিপ চালানাে হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, যারা বারাবার সােশ্যাল মিডিয়া চেক করে আর যাদের ডিভাইসে বেশি নােটিফিকেশন আসে, অন্যদের তুলনায় তারা মানসিক চাপে বেশি ভােগে।

আরেকটা গবেষণায় উঠে এসেছ, ফোনে কিংবা পিসিতে ইমেইলের
নােটিফিকেশন বেশি আসলে আমাদের কর্মদক্ষতা কমে যেতে পারে। সেই গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমেইলের ইনবক্সা চেক করার কাজটা দিনে। সর্বোচ্চ ৩ বারের মধ্যে সীমিত রাখা উচিৎ।

এভাবে অনলাইন ব্যবহারকারীদের মানসিক চাপ অনেকটাই কমে আসতে পারে। তাই আপনার ডিভাইসের সেটিংয়ে গিয়ে যেকোনাে অ্যাপের ক্ষেত্রে নােটিফিকেশনের সর্বোচ্চ লিমিটেশন বা সীমা ঠিক করে রাখুন। এতে করে সােশ্যাল মিডিয়া কিংবা ইমেইলের মতাে অন্যান্য প্রোগ্রাম কিংবা সাইট চেক করার পরিমাণ এমনিতেই কমে আসবে।

২. ভেবেচিন্তে পােস্ট করুন।

কয়েক বছর আগে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টুইট করার সময় হিংসাত্মক শব্দ ব্যবহার করেন, তাদের হৃদরােগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ওপরে করা আরেকটা গবেষণায় একই ধরনের ফলাফল উঠে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, যারা ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন, তাদের ডিপ্রেশন আর অবসাদে ভােগার আশঙ্কা বেড়ে যায়৷

তাই অনলাইনে আপনার কার্যক্রমের ফলে নিজের শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থের যাতে ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। সেজন্য কোনাে ছবি, ভিডিও বা লেখা পােস্ট করার আগেই সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার কথা চিন্তাভাবনা করে রাখুন

৩. অনলাইনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন

সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় থেকে শুধুমাত্র অন্যদের ফলাে করার বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন, এতে করে সােশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর অন্যদের প্রতি হিংসা জন্মাতে পারে। এছাড়াও এর ফলে তারা অন্যদের সাথে নিজের সামাজিক অবস্থানের তুলনা করতে পারেন।

ফলে স্ট্রেস বা মানসিক চাপে পড়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। একইভাবে সক্রিয়ভাবে সােশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার কিছু উপকারী দিক রয়েছে। যেমন, সােশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে একদিকে
অনেকের সাথেই নতুন করে যােগাযােগ তৈরি হয়। অন্যদি অন্যান্য
ব্যবহারকারীর মতামতকে শ্রদ্ধা করে গঠনমূলক আলাপ আলােচনা করলে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

৪. মৃণা ছড়ায়, এমন কনেট বর্জন করুন

কোনাে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য যেসব পােস্ট করা হয়, সেগুলি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। অনলাইনে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে বলা হয় সাইবারবুলিং (Cyberbullying)। সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকে ইন্টারনেটে সাইবারবুলিং এর হার অনেক বেড়ে গেছে।

আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, কোনাে পােস্টের মাধ্যমে সাইবাবুলিং হচ্ছে, তাহলে সেই পােস্ট রিপাের্ট করুন৷ একইসাথে সােশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রেও সতর্ক হােন।

৫. বাস্তব অবস্থা বজায় রাখুন

অনেকেই আছেন, যারা সােশ্যাল মিডিয়ায় সেলিব্রেটি আর জনপ্রিয় প্রােফাইলের মানুষদের দেখে নিজের অবস্থান নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তাই সােশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সময় একটা বিষয় মনে রাখতে হবে সেটা হলাে, অন্যেরা সেসব তথ্যই নিজেদের সােশ্যাল মিডিয়ায় পােস্ট করে, যেসব তথ্য তারা অন্যদেরকে জানাতে চায়।

অর্থাৎ, যেহেতু তাদের জীবনের সবকিছু আপনি জানতে পারছেন
না, তাই সােশ্যাল মিডিয়ায় তাদের পােস্ট দেখেই নিজের সাথে তুলনা করার কোনাে অর্থ নেই৷

এছাড়া আপনি বাস্তবে যেমন, তেমনভাবেই সােশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করুন৷ এতে করে যেমন অন্যদের সাথে আপনার আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হবে, তেমন মানসিকভাবেও আপনি চাপমুক্ত থাকবেন।

৬. কাজের সময়সীমা নির্দিষ্ট রাখুন

প্রতিদিন আপনার কাজের সময়টা যাতে মনােযােগ দিয়ে কাজ করতে পারেন, সেজন্য রুটিন তৈরি করে রাখতে পারেন৷ কাজের সময় সােশ্যাল মিডিয়া কিংবা অনলাইনে সময় কাটানাের জন্য ডিভাইস ব্যবহার করতে থাকলে কাজে মনােযােগ আসবে না। তাই পড়াশোনা কিংবা কাজের সময়টাতে সােশ্যাল মিডিয়া যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন৷

৭. ঘুমানাের আগে ডিভাইস ব্যবহার করবেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঘুমানাের আগে সােশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, তারা সাধারণত ঘুম নিয়ে সমস্যায় ভােগেন৷ আর সময়ের সাথে সাথে দিনের বেলায় কাজ করার সময়ও তাদের কর্মক্ষমতা কমে আসতে থাকে।

ধন্যবাদ

About Post Author

Related posts