দাও ফিরেয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর?
উত্তরঃ অরণ্যের সঙ্গে মানুষের অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক। মানুষের সুখে দুখে একটি স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। অন্যদিকে রোমান্টিক ও সৃষ্টিশীল মানুষের কাছে অরণ্যহীন নগর জীবন এক যন্ত্রণাদায়ক স্থান। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ অরণ্যের কাছাকাছি জীবনযাপন করে। তখন থেকে অরণ্য যেন মানুষকে সস্নেহে লালন-পালন করার ভার নিজের হাতে নিয়ে নেয়। নানারকম ফুল ফলসহ বিভিন্ন খাবার দাবার মানুষ অরণ্য হতেই সংগ্রহ করত। জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে অক্সিজেন তা মানুষ অন্যের কাছে থেকেই পেয়ে থাকে। অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অরণ্যের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। কিন্তু অরণ্যে বর্তমানে প্রায় ধ্বংসের মুখে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে নিজেদের বর্তমান প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে সেখানে নগর পওণ করেছে। আবার মানুষ তার গৃহনির্মাণ, প্রয়োজনীয় আসবাবপএ নির্মাণ, জ্বালানি সমস্যা সমাধানসহ নানা প্রয়োজনে অরন্যের প্রধান সম্পাদ বৃক্ষকে অকাতরে কেটে ফেলছে। ফলে মানুষের সাধারণ জীবনযাপন প্রক্রিয়া ও আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে অরণ্য প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মানুষ যে নগর পত্তন করেছে, সে নগর মানুষকে সুখ দিতে পারছে না। নাগরিক জীবনে মানুষের সুপ্ত বাসনা ও সৃষ্টিশীলতার অকালমৃত্যু ঘটে। এখানে সবাই ব্যস্ত, অণ্যের দুঃখের কথা শোনার কারো সময় নেই। একে অন্যের প্রতি স্নেহ-মমতা, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা, আন্তরিকতা এসব যেন এখানে একেবারেই অনুপস্থিতি, যেটুকু আছে সেটুকুও যেন প্রকৃতির স্পর্শহীন কৃত্রিমতার আবরণে আচ্ছাদিত। নাগরিক জীবনে মানুষগুলোর স্বভাবও যন্ত্রের মতো। এ কারনেই বোধহয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি – ইটের পরে ইট মাঝে মানুষ কীট। মানুষের জীবনে অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিনারা বৃক্ষ আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। বৃক্ষহীন পৃথিবী বেঁচে থাকার জন্য অনুপযুক্ত। তাই দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর – এ আহ্বান আজ আর কেবল কোন রোমান্টিক বা সৃষ্টিশীল মানুষের নয়, এটি আজ সব সচেতন মানুষেরই প্রাণের দাবি।