কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, বা মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নয়?
উত্তরঃ মহৎ কাজই মানুষকে পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখে, কীর্তিমান এবং চিরস্মরণীয় করে। বয়স কখনো মানুষকে চিরস্মরণীয় করার মাপকাঠি নয়।মহৎ মানুষ পৃথিবী থেকে দৈহিকভাবে মৃত্যুবরণ করলও পিছনে থেকে থেকে যায় তার মহৎ কর্ম। আর এ মহৎ কর্ম সাক্ষ্য দেয় কীর্তি ও গৌরবের। মানুষকে জীবনকে বয়সে সীমারেখা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। দীর্ঘজীবী মানুষ যদি জীবনে কোনো ভালো কাজ না করে তবে সে জীবন অর্থহীন।এ অর্থহীন জীবন নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর বেশি দিন তাকে মানুষ সরনে রাখে না। সে জীবন নিরবে ঝরে যায়। কিন্তু ও যে মানুষ তার ছোট্ট জীবনকে দেশ, জাতি ও সমগ্র পৃথিবীর কল্যাণের কাজে লাগান তার জীবন হয় সার্থক। এ জীবন তার মহৎ কর্মের জন্য স্মরণীয় বরণীয় হয়। তাকে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। কবি, কর্মের মহৎ গুণেই অমরত্ব লাভ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম অনেক বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তার ৪০ বছর বয়সের পর বাকশক্তি ছিল না। তিনি তাঁর কর্মময় জীবনে যে সময়টুকু মহৎ সাহিত্য সাধনায় ব্যয় করেছেন, সে মহৎ কাজের জন্য তিনি গৌরবান্বিত হয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুল সুকতারার মতো উজ্জ্বল হয়ে আছেন বয়সের জন্য নয়, তারা অসাদারণ স্বার্থকর্মের জন্য। অন্যদিকে, কবি সুকান্ত মাত্র একুশ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু এত অল্প সময়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের যে অবদান রেখে গেছেন তাতে তার কোন মৃত্যু হবে না তিনি চিরস্মরণীয়। এমনই অনেক জ্ঞানী-গুণী দার্শনিক, বৈঙ্গানিক অসংখ্য অবদান রেখে গেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তারা কখনো হারিয়ে যাবেন না। পৃথিবীর বুকে তারা তাদের মহৎ কর্মের জন্য স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন। মানুষ বেশি বয়স পর্যন্ত বাচলেও সেই সময়টুকু যদি কোন মহৎ কাজে না লাগায় তবে তার কোনো স্থায়ী মূল্য নেই। কাজেই বয়স নয়, মহৎ কর্ম মানুষকে কীর্তিমান করে। বয়স মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আর কর্ম মানুষকে দেয় অনুপ্রেরণা। কর্ম মানুষকে তার মৃত্যুর পরেও অন্যদের কাছে বাঁচিয়ে রাখে।