হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

চারটি গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা

হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা সংক্ষেপে আলোচনা করুন। (Discuss shortly the principles of accounting.)

হিসাবের বইতে কারবারি লেনদেনগুলো হিসাবভুক্ত করতে এবং প্রতিবেদনে উপস্থাপন করতে সার্বজনীন সম্মতির ভিত্তিতে গৃহীত যে নিয়মাবলি বা
নিয়ন্ত্রণ ধারা প্রয়োগ করা হয় তাকে হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক নীতি বলা হয়। অনুমানের (Assumptions) ভিত্তিতে হিসাববিজ্ঞানের কিছু নীতিমালা উদ্ভব হয়েছে। মৌলিক নীতিমালা (Basie Principles) এবং অনুমানের (Assumptions) মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তা হলো আর্থিক বিবরণী বা
চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুত করতে যে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলো অবশ্যই আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ করতে হয়। পক্ষান্তরে,
অনুমানগুলো উল্লেখ করতে হয় না অর্থাৎ অনুল্লিখিত থাকে। হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক নীতি চারটি। যথা—

১. ঐতিহাসিক বায় নীতি (Historial cost principle) : এ নীতির মূল বক্তব্য হলো সম্পত্তিসমূহকে উক্ত সম্পত্তি অর্জনে প্রদত্ত অর্থ অর্থাৎ ক্রয়মূল্যে লিপিবদ্ধ করতে হবে। পরবর্তীতে বাজার মূল্য যাই হোক না কেন স্থায়ী সম্পত্তি অবশ্যই ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে।
চলতি সম্পত্তির আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ এক বছর হওয়ায় এর মূল্যায়নে এ নীতি প্রযোজ্য নয়।
অর্থাৎ চলতি সম্পত্তির মূল্যায়নে রক্ষণশীলতার নীতি অনুসারে তার ক্রয়মূল্য অথবা বাজার মূল্য এদের মধ্যে বেটি কম সেটিকে ধরা হয়।
বিশেষভাবে উল্লেখ যে ক্রয়মূল্য নীতি চলতি সম্পত্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লিপিবদ্ধকরণর সময় প্রযোজ্য এবং স্থায়ী সম্পত্তির ক্ষেত্রে সবসময় প্রযোজ্য।
আজকের হিসাবভুক্ত বিষয় পরবর্তীতে ঐতিহাসিক রূপ নেয়। এমনিভাবে দশ বছর, বিশ বছর পূর্বের হিসাব তথ্য বর্তমানে ঐতিহাসিকভাবে দেখা দেয়। যেমন—এক খণ্ড জমির ১০ বছর পূর্বে মূল্য ছিল ১০,০০০ টাকা যা বর্তমানে ২,০০,০০০ টাকায় বিক্রি হতে পারে।

Discuss shortly the principles of accounting.

২. রাজস্ব স্বীকৃতি নীতি (Revenue recognition principle): পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে আয়ের সূত্রপাত ঘটে। এ নীতি প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি নিরূপণের ক্ষেত্রে অধিক ব্যবহৃত হয়। রাজস্ব স্বীকৃতি নীতিতে কোন আয়কে কখন আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়। এ নীতি অনুযায়ী যখন ক্রেতার নিকট পণ্যের মালিকানাসত্ত্ব হস্তান্তরিত হয় বা কোন সেবা প্রদান সম্পন্ন হয় এবং তার ফলে ক্রেতা বা সেবা গ্রহণকারীর নিকট হতে অর্থ পাওয়ার বা আদায়ের অধিকার সৃষ্টি হয় তখন তা হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন— রহিমের নিকট ১০,০০০ টাকার পণ্য ধারে বিক্রি করা হলো। এক্ষেত্রে পণ্যের মালিকানা স্বত্ত্ব ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হওয়ায় নগদ টাকা না পাওয়া গেলেও ক্রেতার নিকট হতে বিক্রয় মূল্য আদায়ের অধিকার সৃষ্টি হয়েছে বিধায় এ বিক্রয়কে আয় হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হবে। পক্ষান্তরে, সোহেলের নিকট ৭,০০০ টাকার পণ্য “বিক্রয় অথবা ফেরত” শর্তে প্রেরণ করা হলো, এক্ষেত্রে পণ্যের মালিকানা স্বত্ব ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হয়নি বলে তালে আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করা যাবে না। কমিশন অর্জিত হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায় নি, বিনিয়োগের বকেয়া সুদ, বকেয়া উপ-ভাড়া ইত্যাদিকে আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হবে যদিও নগদ অর্থ পাওয়া যায়নি। রাজস্ব স্বীকৃতি নীতির এটাই প্রতিপাদ্য বিষয়।

হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

৩. মিলকরণ নীতি (Matching principle): মিলকরণ নীতির অর্থ হলো আয়ের সাথে ব্যয়ের সংযোগসাধন।
এ নীতি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের মধ্যে প্রাপ্ত ও প্রাপ্য মুনাফা জাতীয় আয়সমূহ হতে ঐ নির্দিষ্ট হিসাবকালের মধ্যে প্রদত্ত ॥ও প্রদেয় সকল মুনাফা জাতীয় খরচসমূহ বাদ দিয়ে ব্যবসায়িক লাভ বা ক্ষতি নির্ণয় করা হয়। এ নীতিতে শুধুমাত্র চলতি হিসাবকালের প্রাপ্ত ও প্রাপ্য মুনাফা জাতীয় আয়ের সাথে উক্ত চলতি হিসাবকালের প্রদত্ত ও প্রদেয় মুনাফা জাতীয় খরচের সংযোগ সাধন করা হয়। ঐসব আয়-ব্যয়ের পূর্ববর্তী হিসাবকালের সংযোগসাধন হবে না। যেমন—এ নীতি অনুযায়ী পূর্ববর্তী হিসাবকালের কোন মুনাফা জাতীয় আয় চলতি সালে পাওয়া গেলে তাকে চলতি সালের আয় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। পক্ষান্তরে, চলতি সালে অর্জিত কোন মুনাফা জাতীয় আয় নগদে না পাওয়া গেলে তাকে চলতি নালের আয় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। একইভাবে চলতি হিসাবকালের মুনাফা জাতীয় খরচের মধ্যে পরবর্তী হিসাবকালের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকলে চলতি হিসাবকালের বচ হিসেবে বিবেচিত হবে না। পক্ষান্তরে চলতি হিসাবকালের মুনাফাজাতীয় খরচ বকেয়া থাকলে তা চলতি হিসাবকালের খরচ হিসেবে বিবেচিত হবে।

হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

সুতরাং একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের মুনাফা জাতীয় প্রাপ্ত ও প্রাপ্য আয় হতে উক্ত সময়ের মুনাফা জাতীয় প্রদত্ত ও
প্রদেয় খরচ সমন্বয় করে মুনাফা নির্ধারণ করতে হবে। এটাই মিলকরণ নীতির মূল বক্তব্য।

৪. পূর্ণ প্রকাশকরণ নীতি (Full disclosure principle): এ নীতির মূল বক্তব্য হলো একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল ও
আর্থিক অবস্থার সঠিক মূল্যায়নকে প্রভাবিত করে এমন সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আর্থিক বিবরণীতে যথাযথভাবে প্রকাশ করতে হবে যাতে আর্থিক বিবরণীর ব্যবহারকারীগণ
প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
এ নীতি অনুযায়ী প্রতিটি আর্থিক বিবরণী প্রতিষ্ঠানের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পরিবেশন করতে হবে।
কোন তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন রাখা যাবে না। হিসাবরক্ষণ পদ্ধতিতে কোনরূপ পরিবর্তন ঘটানো হলে তার বিস্তারিত
পরিবর্তনের প্রকৃতি বিশদভাবে প্রকাশ করতে হবে। আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের পূর্বে কোন ঘটনা সংঘটিত হলে তা প্রকাশ করতে হবে।
সম্প্রতি অধিকাংশ বৃহৎ কারবার প্রতিষ্ঠান যৌথমূলধনী হওয়ায় পূর্ণ প্রকাশকরণ নীতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
কারণ যৌথমূলধনী প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ব্যবস্থাপনা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক অবস্থায় থাকে।
এ কারণে স্থায়ী সম্পত্তি, মজুদ পণ্য এবং বিনিয়োগ মূল্যায়নের ভিত্তি উদ্বতপত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। কারণ এখানে মালিক, পাওনাদার এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর ব্যাপক এবং বাস্তব স্বার্থ জড়িত রয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠান কোন মামলায় জড়িত হলে, কোন চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হলে ইত্যাদি বিষয়ও প্রকাশ করা উচিত।

About Post Author

Related posts