হিসাববিজ্ঞান সমীকরণ কী? Debit এবং Credit নির্ণয়ে এই সমীকরণ কীভাবে ব্যবহৃত হয়?

হিসাববিজ্ঞান সমীকরণ কী? Debit এবং Credit নির্ণয়ে এই সমীকরণ কীভাবে ব্যবহৃত হয়? (State the accounting equation. How can you apply this equation in making debits and credit?)

অথবা, হিসাব সমীকরণ কী? আপনি কোথায় হিসাব সমীকরণ দেখতে পান? কীভাবে? (What is accounting equation? Where do you find the reflections of the equation? How?)

হিসাব সমীকরণ: হিসাবরক্ষণের কার্যাবলিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এতদসংক্রান্ত প্রতিটি লেনদেনের দুইটি পক্ষ বা হিসাব খাত থাকে। একটি গ্রহীতা বা ডেবিট পক্ষ এবং অন্যটি দাতা বা ক্রেডিট পক্ষ। এই বিষয়টি মূলত দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি থেকে উদ্ভাবিত হয়েছে। এ পদ্ধতির মূলকথা হচ্ছে প্রতিটি লেনদেনের জন্য যে পরিমাণ টাকা ডেবিট করা হবে ঠিক সেই পরিমাণ টাকা ক্রেডিট করতে হবে। সর্বদাই একটি অপরটির সমান থাকে। এর উপর ভিত্তি করেই আধুনিক হিসাবশাস্ত্রবিদগণ একটি গাণিতিক সূত্র প্রদান করেন। এই সূত্রই হিসাব সমীকরণ নামে পরিচিত।

যে গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে ব্যবসায়ের মোট সম্পত্তি ও মোট দায়ের সম্পর্ক প্রকাশ করা হয় তাকে হিসাব সমীকরণ বলে। ব্যবসায়ের মোট সম্পত্তিকে A এবং সম্পত্তির উপর অধিকারকে E ধরলে সমীকরণটি দাঁড়ায়, A = E (A = Assets, E = Equity)। সঙ্গত কারণেই উল্লিখিত সমীকরণটি নিম্নরূপে প্রকাশ করা যায় :

হিসাব সমীকরণ কী? আপনি কোথায় হিসাব সমীকরণ দেখতে পান? কীভাবে?

মোট সম্পত্তি = মোট দায় = অন্তর্দায় + বহির্দায়

Total Assets = Total Liabilities = Interal Equity + External Equity

ΣA = ΣE = ΣIE + ΣEE [এখানে, IE = Internal Equity, EE = External Equity] +
or, ΣA = ΣE = ΣP + ΣEE [এখানে, P বলতে Proprietorship অর্থাৎ‍ Capital-কে বুঝায়]

অংশ: প্রতিটি লেনদেন তা যত সহজ বা জটিল হোক না কেন তার প্রভাব সমীকরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে এবং দেখানো হয় যে, প্রতিটি লেনদেন শেষে হিসাব সমীকরণের সমতা রক্ষা করেই চলছে। হিসাব সমীকরণের ব্যবহার অত্যধিক। নিচে হিসাব সমীকরণের ব্যবহার আলোচনা করা হলো :

১. তহবিলের উৎস (Sources of Fund): হিসাব সমীকরণের মাধ্যমে ব্যবসায়ের তহবিলের উৎস সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। তহবিলের উৎস দুই প্রকার হতে পারে; যথা—

(ক) মূলধন বা মালিকানা স্বত্ব (Capital or Owner’s Equity) এবং
(খ) পাওনাদারদের স্বত্ব বা বহির্দায় (Creditor’s Equity or Liabilities)

২. তহবিলের ব্যবহার (Application of fund): হিসাব সমীকরণের মাধ্যমে তহবিলের সঠিক ব্যবহার জানা যায়। তহবিল কিভাবে, কোন্ কোন্ খাতে কত ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঠিক চিত্র পাওয়া যায়। সাধারণত স্থায়ী ও চলতি সম্পত্তি অর্জন ও বিবিধ খরচ খাতে তহবিল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

হিসাব সমীকরণ কী? আপনি কোথায় হিসাব সমীকরণ দেখতে পান? কীভাবে?

৩. অনুপাত নির্ণয় (Calculation of ratios): হিসাব সমীকরণের উভয় দিকের বিভিন্ন বিষয়ের বা তথ্য হতে সহজেই বিভিন্ন অনুপাত নির্ণয় করা যায়। সে সব অনুপাত আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয়।

৪. মালিকানা স্বত্বের দাবি (Owner’s claims): হিসাব সমীকরণে পাওনাদারবৃন্দের দাবি সমীকরণের বিপরীতে দেখিয়ে সম্পত্তির মালিকানা স্বত্বের প্রতিনিধিত্ব দেখানো যায়। অর্থাৎ‍ মোট সম্পত্তি = মোট দায় = পাওনাদার + মূলধন) সম্পত্তি হতে বহির্দায় বাদ দেওয়ার পর যা থাকে তা দ্বারা মালিকের মূলধন বা মালিকানা স্বত্ত্ব বুঝায়।

৫. উদ্বৃত্তপত্রের উভয় দিক সমান (Both sides of balance sheet are equal): হিসাব সমীকরণ যুক্তিত্ব মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, স্থিতিপত্রের উভয় দিকের টাকার পরিমাণ সমান হবে। এতে ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ের অবস্থা অর্থাৎ আর্থিক চিত্র উদ্বতপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে জানতে পারবে।

৬. হিসাব সমীকরণসমূহ স্বতঃসিদ্ধ (Accounting equation is self-evident): হিসাব সমীকরণসমূহ এক বিশেষ ধরনের সমীকরণ যা বিভিন্ন চলকের বিভিন্ন কার্যফল সম্পাদিত হলেও সমীকরণটি নিজস্ব গতিতে প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ হিসাব সমীকরণ আপনা হতেই প্রমাণিত হয়।

৭. ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় (Ascertrainment of debit and credit): হিসাববিজ্ঞানের দ্বৈতসত্তা হতে হিসাব সমীকরণের উৎপত্তি। হিসাব সমীকরণের মাধ্যমে লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করা সহজ হয়

৮. স্বীকৃত তথ্য (Recognized theory): হিসাব সমীকরণ দ্বারা নিম্নলিখিত সত্যগুলো প্রতিষ্ঠিত হয় :
(ক) সম্পত্তি বৃদ্ধির অর্থ মালিকানা স্বত্বের বা মূলধনের সমপরিমাণ বৃদ্ধি বা বহির্দায়ের বৃদ্ধি বা উভয়ের সমপরিমাণ বৃদ্ধি।
(খ) মূলধন বা বহির্দায়ের বৃদ্ধির অর্থ কোন সম্পদের বৃদ্ধি অথবা কোন দায়ের হ্রাস।
(গ) মূলধন হ্রাসের অর্থ সমপরিমাণ দায়ের বৃদ্ধি বা সমপরিমাণ সম্পদের হ্রাস।
(ঘ) সম্পত্তি বৃদ্ধির ফলে দায় বৃদ্ধি বা অন্য সম্পত্তি হ্রাস।
(ঙ) সম্পত্তি হ্রাসের অর্থ মূলধন বা দায় হ্রাস অথবা উভয়ের হ্রাস।
(চ) দায় বৃদ্ধির অর্থ সমপরিমাণ মূলধন হ্রাস বা সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি ।
(ছ) দায় হ্রাসের অর্থ সমপরিমাণ মূলধন বৃদ্ধি অথবা সম্পত্তির হ্রাস।
(জ) দায় হ্রাস ব্যতীত সম্পত্তির মূল্য হ্রাসের অর্থ সমপরিমাণ অন্য কোন সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি।

About Post Author

Related posts