ব্যাংকের লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুতের নিয়মাবলি ব্যাখ্যা করুন। (Explain the rules for the preparation of profit and loss A/c of Bank.)
ব্যাংকিং কোম্পানির লাভ-লোকসান হিসাব কোম্পানি আইনে উল্লেখিত ফরম ‘B’ অনুযায়ী প্রস্তুত করতে হয়।
লাভ লোকসান হিসাবের ডেবিট এবং ক্রেডিট পার্শ্বে কি কি দফা প্রদর্শন করতে হবে তা ফরম—’B’ তে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে পর্যায়ক্রমিকভাবে এ দফাগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :
লাভ-লোকসান হিসাবের ডেবিট পার্শ্ব:
১. বিভিন্ন ধরনের আমানত (Deposits) এবং ঋণের (Borrowings) উপর প্রদত্ত সুদ। এটা ব্যাংকের প্রধান ব্যয়।
২. বেতন, ভাতা ও প্রভিডেন্ট ফান্ডে দান (Salaries, Allowances and provident fund contribution)।
এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যবস্থাপক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রদত্ত বেতন-ভাতাদি আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে।
৩. পরিচালক এবং স্থায়ীয় পর্ষদ সদস্যদিগকে প্রদত্ত ফি ও ভাতা।
8. ভাড়া, কর, বীমা প্রিমিয়াম, বৈদ্যুতিক খরচ (Rent, Taxes, insurance, lighting etc.)
৫. আইন খরচ (Law charges ) ।
৬. ডাক, তার ও ডাকটিকেট খরচ (Postage, telegrams and stamps)
৭. নিরীক্ষাকের ফি (Auditor’s fees)। ব্যাংকের সম্পত্তির অবচয় ও মেরামত খরচ (Depreciation and repairs to the banking company’s property)।
৯. মনোহারি, ছাপা ও বিজ্ঞাপন ব্যয় (Stationery, Printing and Advertising)”।
১০. ব্যাংক পর্যায় বহির্ভূত সম্পত্তিসমূহের বিক্রয় বা লেনদেন হতে উদ্ভূত ক্ষতি (Loss from sale of or dealing with non-banking assets)
১১. উপরোক্ত খাতসমূহের আওতায় পড়ে না, এমন সকল বিবিধ ব্যয় (Other expenditure)।
লাভ-লোকসান হিসাবের ক্রেডিট পার্শ্ব:
১. সুদ ও বাট্টা (Interest and Discount)। এটা ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আয়
ব্যাংকের লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুতের নিয়মাবলি ব্যাখ্যা করুন।
২. কমিশন, বিনিময় ও দালালি (Commission, Exchange and Brokerage
৩. ভাড়া (Rent), ব্যাংকের নিজস্ব জায়গা-জমি, দালানকোঠা ইত্যাদি ভাড়ায় খাটিয়ে অর্জিত আয়।
৪. বিনিয়োগ, স্বর্ণ, রৌপ্য, ভূমি, প্রাঙ্গন ও অন্যান্য সম্পত্তির বিক্রয়লব্ধ নিট মুনাফা।
৫. ব্যাংক পর্যায় বহির্ভূত সম্পত্তিসমূহের বিক্রয় বা লেনদেন হইতে উদ্ভূত মুনাফা।
৬. উপরোক্ত সুনির্দষ্ট খাতসমূহের আওতায় পড়ে না, এমন সকল বিবিধ আয়।
উপরোক্ত আয়-ব্যয়সমূহ লিপিবদ্ধ করার পর লাভ-ক্ষতি হিসাবের মিলকরণের (Balancing) মাধ্যমে কোম্পানির লাভ বা লোকসান জানা যায়।
ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি হিসাব প্রণয়নের সময় নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন: ১. সুদ ও বাটা (Interest and Discount) হতে (i) রেওয়ামিল ও সমন্বয়ে উল্লেখিত কু-ঋণ, (ii) সমন্বয়ে উল্লেখিত সন্দেহজনক ঋণ-সঞ্চিত, (iii) হিসাব কালান্তে মেয়াদ অনুত্তীর্ণ বাটাকৃত বিলের ছাড় (Rebate on bills discounted) এবং (iv) বিনিয়োগ, স্বর্ণ, রৌপ্য, জায়গা-জমি, দালান-কোঠা, ইত্যাদি সম্পত্তির বিক্রয় বা পুনঃমূল্যায়নজনিত ক্ষতি বাদ দিয়ে দেখাতে হবে। তবে এ বিয়োগের কাজ লাভ-ক্ষতি হিসাবের ইনার কলামে করা যাবে না-পৃথক কোন জায়গায় সুদ ও বাটা হতে উল্লেখিত দফাসমূহ বাদ দিয়ে সমন্বিত সুদ ও বাট্টা লাভ-ক্ষতি হিসাবে ক্রেডিট করতে হবে। কারণ, এ সমস্ত ক্ষতি চূড়ান্ত হিসাবে প্রদর্শন করলে ব্যাংকের প্রতি জনসাধারণের অনাস্থা জন্মাবার আশংকা থাকে। অথচ ব্যাংকিং ব্যবসায় সম্পূর্ণভাবে জনসাধারণের আস্থা ও বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল।
ব্যাংকের লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুতের নিয়মাবলি ব্যাখ্যা করুন।
২. রেওয়ামিলে উল্লেখিত সন্দেহজনক ঋণ সঞ্চিতি (Provision for doubtfur debts) লাভক্ষতি হিসাবে ক্রেডিট না করে ঋঋণ ও আগাম (Loans and advance) হতে বাদ দিয়ে দেখাতে হবে।
৩. বাট্টাকৃত বিলের উপর ছাড় (Rebate on bills discounted)-এর প্রারম্ভিক জের যদি রেওয়ামিলে দেয়া থাকে তবে তাকে চলতি হিসাবকালের আয় ধরে সুদ ও বাট্টার সাথে যোগ করতে হবে।
৪. বাট্টাকৃত বিলের উপর ছাড়-এর সমাপনী জের যদি রেওয়ামিলে দেয়া থাকে তবে সুদ ও বাট্টা হতে তাকে বিয়োগ করার প্রয়োজন নেই; কেবলমাত্র উদ্বৃত্তপত্রের দায় হিসাবে দেখাতে হবে।
উল্লেখ্য যে, রেওয়ামিলে উল্লেখিত বাট্টাকৃত বিলের উপর ছাড় প্রারম্ভিক না সমাপনী এ সম্বন্ধে কোন ইঙ্গিত দেয়া না থাকলে তাকে অবশ্যই সমাপনী ছাড় বিবেচনা করতে হবে।
৫. হিসাবকালের শেষ দিনে মেয়াদ অনুত্তীর্ণ বাট্টা (অর্থাৎ বাট্টাকৃত বিলের উপর ছাড়)-এর সমাপনী জের যদি সমন্বয়ে উল্লেখ থাকে, তবে তাকে সুদ ও বাট্টা হতে বাদ দিতে হবে এবং উদ্বৃত্তপত্রে দায় হিসাবে দেখাতে হবে।
৬. যদি মেয়াদ অনুত্তীর্ণ বিলের উপর ছাড়-এর প্রারম্ভিক ও সমাপনী জের উভয়ই সমন্বয়ে দেয়া থাকে, তবে বুঝতে হবে যে, তাদের কোনটিই হাসবভুক্ত করা হয়নি।
কিন্তু বিগত বছরের মেয়াদ অনুত্তীর্ণ বিলসমূহের মেয়াদ চলতি বছরে উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় আনুপাতিক বাট্টা চলতি বছরের আয় হিসাবে হিসাবভুক্ত করা উচিত।
কাজেই চলতি বছরের প্রকৃত মুনাফা নির্ণয় করতে হলে প্রারম্ভিক ছাড়-এর পরিমাণ সুদ ও বাট্টার সাথে যোগ করতে হবে।
আবার, প্রারম্ভিক ছাড়, যাহা বিগত বছরের সমাপনী ছাড়, হিসাবভুক্ত না হওয়ার কারণে বিগত বছরের মুনাফা বেশি দেখানো হয়েছিল।
সুতরাং এটাকে উদ্বৃত্তপত্রে বিগত বছরের মুনাফার জের হতে বাদ দিতে হবে। অন্যদিকে, সমাপনী জের সুদ ও বাট্টা হতে বাদ দিতে হবে এবং উদ্বৃত্তপত্রে দায় হিসেবে দেখাতে হবে।