হিসাববিজ্ঞানে ব্যবহৃত তিনটি “সি”
হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদনের জন্য সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য কিছু নীতিমালা অনুসরণ করার প্রয়োজন হয়।
এ সকল নীতিমালার মধ্যে এমন তিনটি নীতিমালা রয়েছে যেগুলোর প্রথম অক্ষর হচ্ছে “C”। এ নীতিগুলো হলো:
১. ক্রয়মূল্য নীতি (Cost Principle): এ ধারণার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো কারবারের জন্য ক্রয়কৃত স্থায়ী সম্পত্তিকে অবশ্যই সম্পত্তি ক্রয়ের যাবতীয় খরচসহ ক্রয়মূল্যে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
অর্থাৎ স্থায়ী সম্পত্তিসমূহ হিসাবের বইয়ে অবশ্যই ক্রয়মূল্য লিপিবদ্ধ করতে হবে।
এক্ষেত্রে সম্পত্তির প্রকৃত বাজার দর উঠা-নামা করলেও এ বাজার দরকে বিবেচনায় আনা হবে না।
এ ধারণার প্রধান সমস্যা হলো এই যে, উদ্বৃত্তপত্রের মাধ্যমে প্রদর্শিত সম্পত্তির ক্রয়মূল্য এবং প্রকৃত বাজারমূল্য অনেক সময়েই সমান হয় না।
মুদ্রাস্ফীতির কারণে এ নীতি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
কিন্তু সম্পত্তির বাজার মূল্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল হওয়ার কারণে এর প্রকৃত বাজারমূল্য নির্ণয় করা কঠিন বিধায় হিসাববিজ্ঞানীরা উদ্বৃত্তপত্রে সম্পত্তিকে ক্রয়মূল্যে প্রদর্শন করতে অধিকতর আগ্রহী।
“আর পড়ুনঃ” ব্যাখ্যা করুন : 2/10, n/30 এবং 2/EOM, n/60
২. ধারাবাহিকতা/সামঞ্জস্যতার নীতি (Consistency Principle): এ নীতির মূল বক্তব্য হলো হিসাবনিকাশের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি, কৌশল বা প্রয়োগ নীতি ব্যবহার করা হবে তা যেন সব সময় অনুসরণ করা হয়।
যেমন: আসবাবপত্রের অবচয় ধার্যের ক্ষেত্রে যদি একবার সরলরৈখিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তবে পরবর্তী বছরসমূহেও উক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
সামঞ্জস্যতার নীতির ফলে বিভিন্ন হিসাবকালের আর্থিক ফলাফলের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ সহজ হয়। উল্লেখ্য যে, প্রয়োজন হলে হিসাবরক্ষণ পদ্ধতির পরিবর্তন আনা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিবর্তনের কারণ এবং পরিবর্তনের ফলে কারবারের আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
হিসাববিজ্ঞানে ব্যবহৃত তিনটি “সি”
৩. রক্ষণশীলতার ধারণা (Conservatism Principle): এ ধারণার মূল বক্তব্য হলো সম্ভাব্য লাভ দেখা দিলে তা হিসাবভুক্ত করা যাবে না তবে সম্ভাব্য ক্ষতি দেখা দিলে তা হিসাবভুক্ত করতে হবে।
রক্ষণশীলতার প্রথা অনুসরণ করার ফলে সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য প্রয়োজনীয়ত ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় এবং প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকির পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব হয়।
এ প্রথার ব্যবহারের জন্যই হিসাবে সমাপনী মজুদ পণ্যের ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্য ও বাজার মূল্য এ দু’য়ের মধ্যে যেটি ছোট তা হিসাবভুক্ত করা হয়।
এ মতবাদের বিপক্ষে যুক্তি হলো ইহা পূর্ণ প্রকাশকরণ নীতির পরিপন্থি এবং আর্থিক লেনদেনসমূহ অতিরিক্ত ক প্রকাশ করলে গুপ্ত সঞ্চিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে এবং এই মতবাদ অত্যাধিক প্রয়োগ হলে লাভের পরিমাণ কখনই জানা যাবে না।