দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার?
উত্তরঃ সভ্যজগতে মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্য সমাজ বিভিন্ন আইন কানুন প্রণয়ন করে এবং সেগুলো ভঙ্গকারীর ক্ষেত্রে শাস্তিরও বিধান রয়েছে। আর এ দণ্ডবিধান তখনই যথোপযুক্ত হয় যখন বিচার নিরপেক্ষ ও মানবিক হয়। অপরাধীকে দণ্ড দেওয়া হয় তার বিবেকবোধকে জাগ্রত করার জন্য, তার মধ্যে অনুশোচনার বোধ সৃষ্টির জন্য।কিন্তু আমাদের সমাজ অপরাধীকে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে মেনে নেয় না,ফলে সে অনেক সময় অবিচারের শিকার হয়। এজন্য একজন বিচারকের দায়িত্ব ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পাদন করা। তাকে সর্বদাই মনে রাখতে হবে অপরাধী ও একজন মানুষ।তাই বিচারক যদি অপরাধীর মানসিক অবস্থা ও মানবিক দিক বিচার করে তার শাস্তি বিধান করেন, তখনই সে বিচার হয় যথার্থ। যিনি ওই কাজগুলো করেন না তিনি কখনো নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিচারক হতে পারে না। অপরাধীর অপরাধের কারণ বিবেচনা করে বিচারক যদি তদনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং দণ্ডদানের অপরাধীর সমব্যাথী হন তবে তা হবে যথার্থ বিচার। অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করা হয় তাকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে। কিন্তু নিষ্ঠুর বিচার অনেক সময় তা না করে তার প্রতিশোধস্পৃহা ও অপরাধপ্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে। অপরাধীকে ন্যায়ের পথে আনা বা সংশোধনের সুযোগ করে দেওয়াই বিচারকের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ মানুষ মাত্রই ভুল করে। আর সেজন্য অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কথায় বলে, পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করো।এ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে বিচারক তার মমত্ববোধ ও সমবেদনা দিয়ে অপরাধী মনুষ্যত্বকে ও জাগিয়ে তুলতে পারেন। ন্যায়বিচার পেতে হলে প্রকৃত বিচারক প্রয়োজন। তিনি প্রকৃত বিচারক যিনি অপরাধীর অপরাধের যথার্থ বিচার করেন তার বিবেক ও মনুষত্ব দিয়ে এবং অপরাধীর জন্য সমবেদনা প্রকাশের মাধ্যম না।ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সমষ্টিক স্বার্থকে বড় করে দেখার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।
দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার ( ভাব সম্প্রসারণ)