ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ, বা ভোগে নয়, ত্যাগেই মনুষ্যত্বের বিকাশ?
উত্তরঃ ভোগ মানুষকে ইন্দ্রিয়প্রবন করে আর ত্যাগ মানুষের জীবনকে মহত্ব দান করে। ভোগপ্রবণতা কখনোই মানুষকে প্রকৃত অর্থে সুখী করে না আর মনুষ্যত্বের ও বিকাশ ঘটায় না। ত্যাগের মাধ্যমেই পাওয়া যায় প্রকৃত সুখ। ভোগ ও ত্যাগ দুটি পরস্পরবিরোধী পথ। ভোগবাদিতা মানবজীবনের আদর্শ নয়। পরার্থে আত্মত্যাগই মনুষ্যত্বের আদর্শ। পৃথিবীর মানুষ প্রবৃওির দাস। প্রবৃওি মানুষকে ভোগপ্রবন করে। প্রবৃওির হাত থেকে মুক্তির মাধ্যমে মানুষের আত্মমুক্তি ঘটে। আর এ মুক্তির মাধ্যমেই মহৎ জীবনের আস্বাদ পাওয়া যায়। ভোগের মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। ফলে ভোগ করতে হয় সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা। ভোগপ্রবণতা মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর করে তুলে। ভোগবাদী মানুষের দ্বারা পৃথিবীতে কোন মহৎ কাজ করা সম্ভব হয় না। তাদেরকে জগৎ বেশি দিন মনে রাখে না। অপরের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আর ত্যাগী মানুষ তার মহৎ গুণের জন্য স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকেন। ত্যাগের মাধ্যমে তারা পৃথিবীর অমরত্ব লাভ করেন। যুগে যুগে জ্ঞানী-গুণী পন্ডিত ব্যক্তিরা ত্যাগী মনোভাবের কারণেই মানবকল্যাণে ব্রতী হয়েছেন। মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল প্রমূখ মানবজাতির কল্যাণের জন্য বহুু ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। তাই ত্যাগই আমাদের চরিত্রের আদর্শ হওয়া উচিত। তবে ত্যাগ মানে নিজেকে সর্বস্বান্ত করা কিংবা, নিজের জীবন ও পরিবারকে বিসর্জন নয়। অন্যের কল্যাণের জন্য ত্যাগই হচ্ছে যথার্থ ত্যাগ। এর মাধ্যমে প্রকৃত সুখ লাভ করা যায় এবং যথার্থ মনুষ্যত্বের পরিচয় ঘটে। জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করতে হলে স্বার্থ ত্যাগ করা উচিত। ভোগী মানুষ বাঁচে তার পরিবার-পরিজনের পরিধির মধ্যে আর ত্যাগী মানুষ বাঁচে কালের অনন্ত প্রবাহে।