‘হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করুন।

চারটি গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা

‘হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করুন। (“Accounting is called the language of business”-Explain the statement.) BDE, JAIBB

পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে থাকে। ভাষা মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করায় বাহন।
প্রত্যেক ভাষা যেমন কোন অবস্থা আপন করার জন্য ব্যবহৃত হয় তেমনি হিসাব ব্যবস্থা কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা উপস্থাপিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সোনা হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়। ব্যবসায়ের প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
হিসাব ব্যবহার করার প্রধান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এ হিসাববিদ্যা বিশেষ সাহায্য করে থাকে।
কারবারের নানা তথ্য প্রকাশের ভাষাই হিসাববিজ্ঞান।
প্রত্যেক ভাষায় কতকগুলো প্রতীক চিহ্ন বা শব্দ থাকে এবং ঐসব প্রতীকের মাধ্যমে জ্ঞাপনকারী বা প্রেরক যেমন তার বক্তব্য তুলে ধরে বা গ্রাহককে জ্ঞাপন করে তেমনি হিসাববিজ্ঞানেও আর্থিক ঘটনা জ্ঞাপন করার জন্য বিভিন্ন সংখ্যা বা সংকেত চিহ্নের মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরা হয়। হিসাবরক্ষক প্রেরকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের মালিকগণও অনুতপভাবে গ্রাহকরূপে ও কাজ করে থাকেন এবং হিসাবপত্র মাধ্যম রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আবার ভাষাতে যেমন কতকগুলো সংকেত, শব্দ ও প্রতীক ব্যবহৃত হয় হিসাব ব্যবস্থাতেও তেমন শব্দ, প্রতীক ও চিহ্ন ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
এই ভাষা সাধারণ কথা বলার ভাষা নয়। এতে কতকগুলো সুসংবদ্ধ ও নিয়মানুগ প্রতীক, শব্দ, সংখ্যা,হক, রেখা, চিত্র প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়; যেগুলোর মাধ্যমে প্রেরক ও গ্রাহক অর্থাৎ হিসাবরক্ষক বা হিসাব ব্যবহারকারী উভয়ের নিকট পরিচিত হিসাব ব্যবস্থার কতকগুলো বিশেষ পদ্ধতি ও কলাকৌশল প্রয়োগ করা হয়। যেমন—ডেবিট, ক্রেডিট, জেন টানা, সম্পত্তি, দায়, অবচয় প্রভৃতি শব্দ বিশেষ অর্থ বহন করে। বিভিন্ন নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন হক ও তালিকা প্রস্তুত হয়ে থাকে। এসব নিয়ম বা প্রচলিত পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিগণ হিসাবের বক্তব্য বুঝতে পারেন। যারা সকল কলাকৌশল যা নিয়মপদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত নয় তাদের কাছে হিসাবরক্ষণের বক্তবা অস্পষ্টই থেকে যায়। এ সকল কারণে হিসাবকে আর্থিক ঘটনা প্রকাশের ভাষা বলা হয়।

‘হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করুন।

আধুনিক হিসাববিজ্ঞানীদের মতে হিসাবরক্ষণ বা হিসাববিজ্ঞান কারবারের নানা তথ্য প্রকাশের ভাষা।
হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে নিম্নবর্ণিত তথ্যসমূহ প্রকাশ হয়ে থাকে :

“আর পড়ুনঃ” কেন বকেয়াভিত্তিক আর্থিক বিবরণী নগদানভিত্তিক আর্থিক বিবরণীর তুলনায় বেশি তথ্য সরবরাহ করে?

১. নির্দিষ্ট হিসাবকালে ব্যবসায়ের মোট কত টাকার মাল ক্রয় করা হয়েছে, কত টাকার মাল বিক্রি করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে নগদ লেনদেন কত? ২. নির্দিষ্ট তারিখে ব্যবসায়ের মোট সম্পত্তি ও মোট দায়ের পরিমাণ কত?
৩. নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে কারবারের মোট মুনাফা ও নীট মুনাফা কত অর্জিত হয়েছে।
৪. পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বর্তমান বছরের নীটলাভ সম্পত্তি ও দায়ের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে না বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫. ব্যবসায়ে মোট ঋণের পরিমাণ কত?
৬. কারবারের স্থায়ী ও চলতি সম্পত্তি এবং দায়ের অনুপাত কত?
৭. বিভিন্ন আয়ের ও ব্যয়ের খাত এবং কিভাবে আয় বাড়ানো যায় বা ব্যয় কমানো যায়?
৮. ব্যবসায়ের নগদ তহবিলের পরিমাণ কত?
৯. সঞ্চিতি, ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা ও অবনভির পরিমাণ প্রকাশ।
১০. কারবারের আয়তন সম্প্রসারণ করা হলে প্রয়োজনীয় অর্থ ও ঋণের পরিমাণ নির্ণয় সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ।
১১. বিনিয়োগের উপর লাভের হার (ROI)।
১২. আয়কর ও আয়কর সঞ্চিতির পরিমাণ।
১৩. সম্ভাব্য পায় সম্পর্কে অবগত করে।

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের functional এবং operational সংজ্ঞা দিন।

সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, হিসাববিজ্ঞান হলো ব্যবসায়ের ভাষা।
এ প্রসঙ্গে Masion, Davidson & Schinder তাদের ‘Fundamentals Accounting’ বইতে বলেছেন, “হিসাববিজ্ঞান হলো একটি ভাষা যাতে অধিকাংশ ব্যবসায়িক ঘটনাবলি প্রকাশিত হয়।”

About Post Author

Related posts