আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা কর। ( Discuss different methods of
অথবা, আর্থিক বিশ্লেষণের প্রধান কৌশল কী কী? (What are the major tools of financial analysing financial statement.) analysis?)
যে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এজন্য বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
একজন আর্থিক বিশ্লেষক আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন কৌশলের মধ্য হতে সর্বাপেক্ষা উপযোগী কৌশলটি সহজেই চিহ্নিত করতে পারেন।
আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের জন্য যে সকল কৌশল ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৌশলসমূহ হচ্ছে :
“আর পড়ুনঃ” আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করুন।
(ক) তুলনামূলক আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ (Comparative financial statement analysis)
(খ) ঝোঁক বিশ্লেষণ (Trend analysis) (গ) অনুপাত বিশ্লেষণ (Ratio analysis)
(ঘ) সাধারণ আকারের বিবরণী বিশ্লেষণ (Common size statement analysis)
(ঙ) বিশেষায়িত বিশ্লেষণ (Specialized Analysis) নিম্নে কৌশলসমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল :
(ক) তুলনামূলক আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ (Comparative financial statement analysis) : তুলনামূলক আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ কৌশলের মাধ্যমে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রমের এক বছরের আর্থিক বিবরণীর সাথে অন্য বছরের আর্থিক বিবরণীর তুলনা করা হয় এবং আর্থিক বিবরণীর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন হিসাবের পরিবর্তন চিহ্নিত করা হয় । এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে সকল বিষয়ের পরিবর্তন চিহ্নিত করা হয় তা পরবর্তীতে ঐ পরিবর্তনের কারণ চিহ্নিত করে এর প্রতিকারের উপায় নিরূপণ করতে সাহায্য করে।
“আর পড়ুনঃ” কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
(খ) ঝোঁক বিশ্লেষণ (Trend analysis) : তুলনামূলক আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের এক বছর থেকে অন্য বছরের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু যখন তিন বা ততোধিক বছরের উপাত্ত দিয়ে তুলনামূলক আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করা হয় তখন বিশ্লেষণটি জটিল হয়ে পড়ে। এই জটিলতা অবসানের জন্য তিন বা ততোধিক বছরের আর্থিক বিশ্লেষণে ঝোঁক বিশ্লেষণ (Trend analysis) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কোন একটি বছরকে ভিত্তি বছর ধরে পরবর্তী বছরগুলোর পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয় ঝোঁক বিশ্লেষণের তিনটি পদ্ধতি আছে। যথা
আর্থিক বিশ্লেষণের প্রধান কৌশল কী কী?
১. ঝোঁকের শতকরা হিসাব করে এবং তুলনা করে।
২. ঝোঁক অনুপাতের হিসাব করে এবং তুলনা করে।
৩. রেখাচিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে।
(গ) সাধারণ আকারের বিবরণী বিশ্লেষণ (Common size statement analysis) : সাধারণ আকারের বিবরণী বিশ্লেষণ (Common size statement analysis) এ আর্থিক বিবরণীকে শতকরা হারের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে আর্থিক বিবরণীর (আয় বিবরণী ও উদ্বৃত্তপত্র) উপাদানগুলোকে মোট সম্পত্তি, মোট দায় ও নীট বিক্রয় ইত্যাদিতে বিভক্ত করা হয় এবং শতকরা হারের ভিত্তিতে দেখানো হয়। যেমন মোট সম্পত্তিকে ১০০% হিসেবে দেখানো হয় এবং এর ভিত্তিতে প্রতিটি সম্পত্তি মোট সম্পত্তির কত অংশ তা দেখানো হয়। একইভাবে নীট বিক্রয়কে ১০০% হিসেবে দেখানো হয় এবং এর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপাদানগুলোকে শতকরা হারে দেখানো হয়। সাধারণ আকারের বিবরণী বিশ্লেষণ (Common size statement analysis) কে আবার শতকরা বিশ্লেষণ (Percentage analysis) ও বলা হয় ।
(ঘ) অনুপাত বিশ্লেষণ (Ratio analysis) : আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের কৌশলসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, বহুল ব্যবহৃত ও ফলপ্রসূ পদ্ধতি হচ্ছে অনুপাত বিশ্লেষণ (Ratio analysis)। যার মাধ্যমে আর্থিক বিবরণীর উপাদান সমূহের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করা হয়।
(ঙ) বিশেষায়িত বিশ্লেষণ (Specialized analysis) : আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের উপরোক্ত কৌশলসমূহ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আরো কিছু কৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো :
১. নগদ প্রবাহ বিশ্লেষণ (Cash flow analysis)
২. তহবিল প্রবাহ বিশ্লেষণ (Fund flow analysis)
৩. নীট কার্যকরী মূলধন বিশ্লেষণ (Working capital analysis)
৪. সমচ্ছেদ বিন্দু বিশ্লেষণ (Break-even analysis)
৫. মোট লাভের পরিবর্তন বিবরণী (Statement of changes in financial position)
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসায়িক দক্ষতা পরিমাপ করার জন্য আর্থিক বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আর্থিক বিশ্লেষকদের উপরোক্ত কৌশলসমূহ প্রয়োগ করতে হয়। যদিও আর্থিক বিশ্লেষণের জন্য একাধিক কৌশল রয়েছে তথাপি যে কৌশলটি সর্বাপেক্ষা ফলপ্রসূ তা হলো বিশ্লেষণ। মূলত অনুপাত বিশ্লেষণের মাধ্যমেই ব্যবসায়িক কর্মদক্ষতার প্রায় সকল দিক উদ্ভাবন করা সম্ভব।