লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ দেখান

লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ দেখান। Show the classification of transaction.

প্রতিটি লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও প্রতিটি লেনদেন একই প্রকৃতির নয়। লেনদেনসমূহকে এদের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, সীমাবদ্ধতা এবং প্রভাবের উপর ভিত্তি করে প্রধানত চারভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে এ শ্রেণীবিভাগ ছক আকারে উপস্থাপন করা হলো:

লেনদেন
১. সংঘটনের ভিত্তিতে

২. পরিশোধের ভিত্তিতে

৩. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে

৪. দৃশ্য ও অদৃশ্যমান ভিত্তিতে

১. সংঘটনের ভিত্তিতে
বহিঃলেনদেন (External Transaction)

আন্তঃলেনদেন (Internal Transaction)

২. পরিশোধের ভিত্তিতে
নগদ লেনদেন (Cash Transaction)

ধারে লেনদেন ( Credit Transaction)

৩. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে
কারবারি লেনদেন (Business Transaction)

অব্যবসায়ী লেনদেন (Non-business Transaction)

ব্যক্তিগত লেনদেন (Personal Transaction)

৪. দৃশ্য ও অদৃশ্যমান ভিত্তিতে

দৃশ্যমান লেনদেন (Visible Transaction)

অদৃশ্যমান লেনদেন (Invisible Transaction)

নিম্নে বিভিন্ন প্রকার লেনদেনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো:

১. সংঘটনের ভিত্তিতে:
(ক) বহিঃলেনদেন (External Transaction): যে লেনদেন প্রতিষ্ঠানের বাইরের লোকের বা অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংঘটিত হয় তাকে বহিঃলেনদেন বলে। বাইরের লোকদের সঙ্গে সাধারণত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, অর্থ প্রদান, সেবা গ্রহণ প্রদান প্রভৃতি লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে; যেমন— রায়হান তার ব্যবসার ৫০০ টাকার পণ্য সুমিতের নিকট থেকে ক্রয় করল। রায়হানের ব্যবসার কাছে সুমিত একজন বাইরের লোক। সুতরাং এই লেনদেনটি রায়হানের ব্যবসায়ের বহিঃলেনদেন।

(খ) আন্তঃলেনদেন (Internal Transaction): যে লেনদেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয় তাকে আন্তঃলেনদেন বলে । প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে যে লেনদেন সৃষ্টি হয় সে লেনদেন সাধারণত অদৃশ্য থাকে; যেমন—সম্পত্তির অবচয়। এই অবচয় যখন অর্থে পরিমাপ করা হয় তখন অবচয়ের জন্য লেনদেন সৃষ্টি হয়।

২. পরিশোধের ভিত্তিতে
(ক) নগদ লেনদেন (Cash Transaction): যে লেনদেনে নগদ টাকা আদান-প্রদান করা হয় তাকে নগদ লেনদেন বলে। কোন লেনদেনে নগদ টাকা নেওয়া বা দেওয়া হলো কি না তা দেখে নগদ লেনদেন চিনতে পারা যায়; যেমন—–৫০০ টাকার পণ্য সৌরভ বিক্রয় করল, এক্ষেত্রে পণ্য বিক্রয় করে সৌরভ নগদ ৫০০ টাকা পেল। সুতরাং এটা একটা নগদ লেনদেন।

লেনদেনের শ্রেণীবিভাগ দেখান

(খ) ধারে লেনদেন (Credit Transaction): যে লেনদেনের দ্বারা ধারে ক্রয়-বিক্রয় হয় তাকে ধারে লেনদেন বলে। ধারে লেনদেনের ক্ষেত্রে শুধু পণ্য বিনিময় হয়, সঙ্গে সঙ্গে নগদ টাকা বিনিময় হয় না; যেমন—মিলির নিকট থেকে ২,০০০ টাকার পণ্য ধারে ক্রয় করা হলো।

৩. উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে:
(ক) কারবারি লেনদেন (Business Transaction): ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে যে সব লেনদেন সম্পন্ন হয় তাকে কারবারি লেনদেন বলে; যেমন—ক্রয়, বিক্রয়, ভাড়া প্রদান, বেতন প্রদান ইত্যাদি।

(খ) অব্যবসায়ী লেনদেন (Non-business Transaction): যে সব প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় না সে সব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনসমূহকে অব্যবসায়ী লেনদেন বলে; যেমন—দাতব্য প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালের লেনদেন ইত্যাদি।

(গ) ব্যক্তিগত লেনদেন (Personal Transaction) : ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনে যে সব লেনদেন সম্পন্ন হয়।
তাকে ব্যক্তিগত লেনদেন বলে; যেমন- জন্মদিনের উপহার, জীবন বীমার প্রিমিয়াম ইত্যাদি।

৪. দৃশ্য ও অদৃশ্যমানের ভিত্তিতে:
(ক) দৃশ্যমান লেনদেন (Visible Transaction):
যে সমস্ত লেনদেন প্রত্যক্ষ করা যায় বা দেখা যায় তাকে দৃশ্যমান লেনদেন বলে। বেশির ভাগ লেনদেন দৃশ্যমান হয়ে থাকে; যেমন—আসবাবপত্র ক্রয়, যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি।

(খ) অদৃশ্যমান লেনদেন (Invisible Transaction): যে সমস্ত লেনদেন প্রত্যক্ষ করা যায় না তাকে অদৃশ্যমান লেনদেন বলে; যেমন—সম্পত্তির অবচয়, অবহারে শেয়ার ইস্যু ইত্যাদি।

পরিশেষে বলা যায় যে, লেনদেনসমূহকে তাদের বৈশিষ্ট্য, ধরন ও প্রভাব অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় এবং ভাগগুলোর মধ্যে কতকগুলো আবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে ।

About Post Author

Related posts