ঘটনা কাকে বলে? ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলে উপস্থাপন করুন।

ঘটনা কাকে বলে? ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলে উপস্থাপন করুন। (What is event? If there is any difference between event and transaction, present it.)

ঘটনা: ঘটনা বলতে সাধারণত কোন কিছু সংঘটিত হওয়াকে বুঝায়। যেমন স্কুলে যাওয়া, অফিসে যাওয়া, বাজার করা ইত্যাদি।
অর্থাৎ মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে তার প্রত্যেকটাই এক একটি ঘটনা।

কিন্তু হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ঘটনাকে ভিন্নভাবে দেখা হয়। হিসাববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত যে কোন কর্মই হচ্ছে ঘটনা যা কিনা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনে সক্ষম।
সুতরাং ঘটনাকে দুইভাগে ভাগ করা যায়:

“আর পড়ুনঃ” হিসাব লিপিবদ্ধকরণে দ্বৈত লিপিবদ্ধকরণ নীতি বলতে কি বুঝায় ?

১. অনার্থিক ঘটনা (Non-monetary event): যে সমস্ত ঘটনা অর্থের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় অর্থাৎ যা কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় না তাকে অনার্থিক ঘটনা বলে। যেমন—পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, সভায় বক্তৃতা দেওয়া, খেলায় জয়লাভ করা, মালের ফরমায়েশ প্রদান ইত্যাদি।

“আর পড়ুনঃ” লেদদেন লিপিবদ্ধকরণের ধাপগুলো কী কী?

২. আর্থিক ঘটনা (Monetary event): যে সমস্ত ঘটনা অর্থের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অর্থাৎ যা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এবং যা অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য তাকে আর্থিক ঘটনা বলে। যেমন—মেয়ের বিয়ের খরচ, দৈনন্দিন বাজার খরচ, বাড়িঘর তৈরির খরচ, ভাড়া প্রদান ইত্যাদি।।

সুতরাং হিসাববিজ্ঞানের ভাষায় অর্থের মূল্যে পরিমাপযোগ্য কোন একক বা সমষ্টিগত কর্মকাণ্ডের সাহায্যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধনকে ঘটনা বলা হয়।

“আর পড়ুনঃ” কারবারি লেনদেনের সংজ্ঞা দিন।

ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলে উপস্থাপন করুন

পার্থক্য: নিচে ঘটনা ও লেনদেনের মধ্যে পার্থক্যসমূহ ছক আকারে উপস্থাপন করা হলো:

পার্থক্য তালিকা

পার্থক্যের বিষয় (Point of differences) ঘটনা (Event) লেনদেন (Transaction)
১. সংজ্ঞা (Definition) মানব জীবনে সংঘটিত প্রতিটি কাজকেই ঘটনা বলা হয়। যে সকল ঘটনার দ্বারা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তাকে লেনদেন বলে।
২. পরিধি (Scope) ঘটনার পরিধি ব্যাপক। লেনদেনের পরিধি সীমিত।
৩. উদ্দেশ্য (Objective) সকল ঘটনার পিছনে পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য নাও থাকতে পারে। প্রতিটি লেনদেনের পিছনে উদ্দেশ্য বিদ্যমান থাকে।
৪. আর্থিক মূল্য (Money value) ঘটনার আর্থিক মূল্য থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। প্রতিটি লেনদেনের অবশ্যই আর্থিক মূল্য থাকতে হবে।
৫. আর্থিক পরিবর্তন (Change in financial position) ঘটনার দ্বারা আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও হতে পারে আবার নাও হতে পারে। লেনদেনের ফলে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
৬. পক্ষ (Sides) ঘটনা সংঘটনের জন্য সব সময় দুটি পক্ষের প্রয়োজন নেই। লেনদেনের ক্ষেত্রে অবশ্যই দুটি পক্ষ থাকবে।
৭. বিনিময় (Exchange) ঘটনার দ্বারা সব সময় পণ্য বা সেবার বিনিময় না হলেও চলে। লেনদেনের ফলে পণ্য বা সেবার বিনিময় হবে।
৮. সম্পর্ক (Relation) একটি ঘটনার সঙ্গে আরেকটি ঘটনার সম্পর্ক থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। প্রতিটি লেনদেনই স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বাধীন।
৯. প্রামাণ্য দলিল (Documentary evidence) ঘটনার সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদি থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। লেনদেনের সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদি অবশ্যই থাকতে হবে।
১০. শ্রেণীবিভাগ (Types) ঘটনাসমূহকে আর্থিক ও অনার্থিক এই দুইভাগে ভাগ করা হয়।  

লেনদেনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা গেলেও প্রধানত আস্তঃলেনদেন বহিঃলেনদেন এই দুইভাগে ভাগ করা যায়।

১১. হিসাব সংরক্ষণ (Accounts keeping) সব ঘটনার হিসাব সংরক্ষণের দরকার পড়ে সব লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়।

উপরিউক্ত পার্থক্যসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, ঘটনা একটি ব্যাপক বিষয় এবং লেনদেন এর একটি অংশ মাত্র। অর্থাৎ‍ আর্থিক ঘটনাসমূহ লেনদেনের আওতাভুক্ত এবং আর্থিক অনার্থিক সব ধরনের বিষয় ঘটনার আওতাভুক্ত।

About Post Author

Related posts