ক্ষমতা, লোভ, লালসা, অন্যায়, অত্যাচার, প্রতিবাদ, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ, করুণা, ভালোবাসা আর ঘৃনার সংমিশ্রণে এক অমর সৃষ্টি হচ্ছে গেম অব থ্রোনস। কিছু শব্দের গাথুনিতে যার বর্ননা দেওয়া সম্ভব নয়।
ড্রামা, রোমাঞ্চ, ফ্যান্টাসি, থ্রিলার এবং কিঞ্চিৎ হরর মিশ্রিত এই সিরিজ কেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সিরিজ তা না দেখলে অনুভব করতে পারবে না কেউ।
সাতটা রাজ্য নিয়ে একটা মহাদেশ যার নাম ওয়েস্টেরস এবং রাজধানী কিংসল্যান্ডিংস। এই কিংসল্যান্ডিংস এই অবস্থিত সবার আকাঙ্ক্ষিত হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সিংহাসন “আয়রন থ্রোন”।
সাত রাজ্যের সাত গোষ্ঠি (স্টার্ক, টারগেরিয়ান, ল্যানিস্টার, ব্যারাথিয়ন, গ্রেজয়, টাইরেল এবং মার্টেল) সবাই আয়রন থ্রোনের প্রতি অনুগত। ঘটনা ক্রমে উইন্টারফেলের প্রধান “নেড স্টার্ক” কিংসল্যান্ডিংস এর রাজা রবার্ট ব্যারাথিয়ন এর হ্যান্ড হয়ে আসেন কিংসল্যান্ডিংস এ। এরপর রহস্যজনক ভাবে রাজা রবার্ট এর মৃত্যু এবং রবার্ট এর স্ত্রী সার্সি ল্যানিস্টার এর অবৈধ সিংহাসন দখলের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুল কাহিনি। নেড স্টার্ক কে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হয়। ফলে আয়রন থ্রোনকে ঘিরে ল্যানিস্টার এবং স্টার্কদের মধ্যে শুরু হয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ধিরে ধিরে সাতটি গোষ্ঠীই জরিয়ে পরে এই যুদ্ধে।
রব স্টার্ক, আরিয়া স্টার্ক, সানসা স্টার্ক এবং জন স্নো একেকজন প্রতিশোধের আগুনে জলতে থাকে নিজেদের মত করে। টারগেরিয়ান গোষ্ঠীর শেষ প্রদিপ “ডেনেয়রিস টারগেরিয়ান” (মাদার অব ড্রাগনস) তার সদ্য জন্মানো তিনটি ড্রাগন নিয়ে নেমে পরে নিজের অধিকার বুঝে নিতে সিংহাসন ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষে। এর মধ্যে ঘটে আরেক বিপত্তি। শত বছরের ফেলে আসা অতিত হোয়াইট ওয়াকার বা “আর্মি অব ডেড” তথা মৃতদের সৈন্যদলের পুনর্জাগারন ঘটে ( এরা অনেকটা জম্বির মত)। তাদের লক্ষ পৃথীবির সকল প্রানিকে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা!! হোয়াইট ওয়াকার থেকে মানব জাতিকে রক্ষার গুরুদায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেয় জন স্নো। এরপর একের পর এক মাথা নষ্ট টুইস্টের সাথে কাহিনী এগুতে থাকে। এতো গেলো প্লট, এবার নিজের অনুভূতি ব্যাক্ত করি।
গেম অব থ্রোনস এর থিম মিউজিক টা এখন পর্যন্ত আমার শোনা সেরা থিম মিউজিক। কাহিনী, স্ক্রিন প্লে, অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি, মিউজিক আর বিজিএম নিয়ে কিচ্ছু বলার নেই আসলে। সব কিছুতে ১০ এ ১০। কিন্তু প্রিয় ক্যারেক্টর গুলো নিয়ে দু লাইন না বললেই নয়।
এক্ষেত্রে সবার আগে নাম আসে ট্রিয়ন ল্যানিস্টার এর। হোয়াইট ওয়াকার এর গুরুদায়িত্ব জন স্নো নিলেও গেম অব থ্রোনস এর দায়িত্ব যেন ট্রিয়ন ল্যানিস্টার এর কাধে!! প্রথম প্রথম এই বামন কে বিরক্ত লেগেছিল। এর পরে ধিরে ধিরে ইনিই হয়ে গেল সবচেয়ে প্রিয় ক্যারেক্টর। সিজন ৪ এ এই বামনের কষ্টে কষ্টিত অনুভব করলাম। বামন হওয়ার অপরাধে বাবা বোনের চোখের বিষ ট্রিয়ন ল্যানিস্টার। পুরো সিরিজে ট্রিয়ন ল্যানিস্টার এর অভিনয় আর ইমোশনাল দৃশ্য গুলো অজান্তেই নিজের সাথে রিলেট করে ফেলেছিলাম।
জন স্নো এর কথা কি বলবো। পুরো সিরিজ জুড়ে জন স্নো ছিলো একটা ভরসার নাম। জন স্নোই যেন সব সমস্যার সমাধান এর চাবিকাঠি। জন স্নো স্ক্রিনে এসেছে মানে আর কোনো ভয় নেই। এক পর্যায়ে তো কনফিউজড হতে হয় যে কে সবচেয়ে প্রিয় ট্রিয়ন নাকি জন স্নো!
ডেনেয়রিস টার্গেরিয়ান ওরফে মাদার অব ড্রাগন। সে তার ড্রাগন দিয়ে পুড়িয়েছে কিংসল্যান্ডিংস আর তার অভিনয় এবং রূপ দিয়ে পুড়েছে সিনেপ্রেমিদের। তার ডায়লগ ডেলিভারি ছিলো যেন আগুনের ফুলকি! সে কি হিংস্র মানবি নাকি কোমল হৃদয়ের বাঘিনী, বুঝে উঠতে পারিনি। যখন ‘ড্রাকারিস’ বলে পুরো গুজবাম্প ফিল!
আরিয়া স্টার্ক একটা ভালোবাসার নাম। কি সুনিপুণ প্রতিশোধের নেশা তার! এই মেয়েটা যতক্ষণ স্ক্রিনে ছিলো কেমন একটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করে। শেষ সিজনে রবার্ট এর বাস্টার্ডের সাথে সেই সিনটা। পুড়েছে কোটি ছেলের হৃদয়!
সার্সি ল্যানিস্টার! যাকে আপনি ঘৃণা করতে ভালোবাসবেন!! “এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার” এই নীতি বাক্যটির রুপালি প্রতিফলন যেন সার্সি ল্যানিস্টার। ট্রিয়ন ল্যানিস্টার এবং সার্সি ল্যানিস্টার যেন পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। সার্সি ল্যানিস্টার ই যেন এই সিরিজের কেন্দ্র বিন্দু।
জেইমি ল্যানিস্টার, মিসান্দেই, সানসা স্টার্ক, থিয়ন গ্রেজয়, খাল দ্রোগো, বেইলিশ, দ্যা হাউন্ড সহ আরও যত ক্যারেক্টর আছে সবাই তাদের সেরাটা দিয়েছে। প্রতিটি ক্যারেক্টর সমান ভাবে নজর কেরেছে। যা আর কোনো সিরিজে পাইনি। ব্রেকিং ব্যাড বা অন্য কোনো সিরিজের সাথে তুলনা করতে চাই না। সব গুলোই আমার কাছে সেরা। গেম অব থ্রোনস একটু বেশিই প্রিয় এই যা।
গেম অব থ্রোনস আপনাকে হাসাবে, কাদাবে আবার রাগাবে। বাধ্য করেবে ভালোবাসতে আবার ঘৃণা করতে। একদম জীবন্ত অনুভূতি, আপনি অনুভব করতে পারবেন।
এপিসোড সংখ্যা : 73
সিরিজ টি ডাউনলোড লিংকঃ
এই সিরিজ টি Bangla Subtitle আছে সব গুলোর
Bangla Subtitle ডাউনলোড লিংকঃ