এখানে উপস্থাপন করা হলো। আমার পছন্দের দুটি পল্লী সাহিত্যের উপাদান হল মৈমনসিংহ গীতিকা ও খনার বচন।
মৈমনসিংহ গীতিকা
নিন্মে মৈমনসিংহ গীতিকা সম্পর্কে দশটি বাক্য লেখা হলো:
১. ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত পালা গান গুলো কে একত্রে মৈমনসিংহ-গীতিকা বলা হয়
২. দীনেশচন্দ্র সেন ইংরেজি ballad এর বাংলা পরিভাষা হিসাবে “গীতিকা” শব্দটি গ্রহণ করেন।
৩. রচয়িতাদের আবির্ভাব কাল, কাব্যের জীবনকথা, আর্থ-সামাজিক পটভূমি, ভাষাদর্শ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করে গীতিকাগুলি মধ্যযুগে রচিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
৪. এই গানগুলাে প্রাচীন কাল থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসালেও ১৯২৩-৩২ সালে ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন এই গানগুলাে সম্পাদনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রকাশ করেন।
৫. নেত্রকোনা জেলার আইথর নামক স্থানের অধিবাসী চন্দ্রকুমার দে এসব গাঁথা সংগ্রহ করছিলেন।
৬. মৈমনসিংহ গীতিকায় ১০টি গীতিকা স্থান পেয়েছে। যথা- মহুয়া, নলুয়া, চন্দ্রাবতী, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা ও দেওয়ানা মদিন।
৭. গীতিকার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে পার্থিব জীবনকথা, ধর্ম নয়।
৮. মৈমনসিংহ গীতিকার দস্যু কেনারামের পালা ছাড়া বাকি ৯টি পালার মুখ্য বিষয় নরনারীর লৌকিক প্রেম, প্রেমের পরিণতি কোনােটির মিলনাত্মক, কোনােটির বিয়ােগান্তক।
৯. গীতিকাগুলিতে পুরুষ চরিত্রের তুলনায় নারী চরিত্রের ভূমিকা উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত, প্রেমের প্রতিষ্ঠায় তারাই বেশি সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছে।
১০. মৈমনসিংহ গীতিকা বিশ্বের ২৩টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ময়মনসিংহ গীতিকার মদিনা বিবির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন ফরাসি দেশের কালজয়ী সাহিত্যিক এবং দার্শনিক রােমাঁ রােলা
খনার বচন
নিন্মে খনার বচন সম্পর্কে দশটি বাক্য লেখা হলো:
১. খনার বচন আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। ধারনা করা হয় সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্যর রাজত্বকালে খনার বচন রচিত হয়েছিল।
২. খনার বচন মুলত কৃষিভিত্তিক ছড়া।
৩. অনেকের মতে খনা নান্নী জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বাঙালি নারী।
৪. খনার বচন গুলাে চার ভাগে বিভক্ত, যেমন: কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার, কৃষিকাজ ফলিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবহাওয়া জ্ঞান শস্যের যত্ব সম্পর্কিত উপদজেম
৫. খনার ভবিষ্যদ্বাণীগুলােই “খনার বচন’ নামে বহুল পরিচিত।
৬. ধান, কলা ও গরুকে খনার বচনে তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্ব দিয়ে অধিক সংখ্যক বচন রচিত হয়েছে।
৭. মাটি, আবহাওয়া, ঋতুর অদল-বদল, মেঘ-বৃষ্টির শ্রেণীকরণ ও সময় নির্ঘণ্ট, আবহাওয়ার আন্দাজ, দুর্যোগ ও প্রাকৃতিক পরিবর্তনের আগাম প্রস্ততি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুঃসময়ের আগাম হিসাবনিকাশ, প্রাকৃতিক নির্দেশনা ইত্যদি নিয়ে খনার বচন রয়েছে।
৮. খনা সম্পর্কে বাংলা ও উড়িয়া ভাষায় কিংবদন্তী আছে।
৯. অজস্র খনার বচন যুগ-যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন-জীবনের সাথে মিশে আছে।
১০. খনার বচনের একটি উদাহরণ হলাে : পূর্ণিমা অমাবস্যায় যে ধরে হাল তার দুঃখ হয় চিরকাল।