তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি, কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ?
উওরঃ তরুলতা কিংবা পশুপাখি তাদের নিজস্ব নামে পরিচিত হলেও একজন মানুষকে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য কঠোর সাধনা করতে হয়। যার মাধ্যমে বিবেক বুদ্ধি ও মননশক্তি অর্জন করে একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। এখানেই অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য। এ জগতে উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রাণের জগৎ। তরুলতা প্রাণ নিয়ে বৃদ্ধি লাভ করে এবং সৃষ্টির নিয়মে একসময় বিলীন হয়ে যায়। পশুপাখিও তেমনিই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তরুলতা তরুলতাই থেকে যায়, প্রাণী প্রাণীই থেকে যায়। জৈবিক সওার বাইরে এদের আর কোন সওা নেই। কিন্তু মানুষের রয়েছে ব্যক্তিগত সত্তাকে পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশের এবং সাধারন একটি প্রাণী থেকে প্রাণিশ্রেষ্ঠ হবার ক্ষমতা। জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ধারা মানুষ নিজেকে সভ্য ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে নিত্যনতুন বিষয়। মানুষ এ ক্ষমতা একদিনে অর্জন করে না, এমনিকি জন্মসূত্রেও কোন মানুষ এ ক্ষমতা লাভ করে না। এজন্য অনেক সাধনা, ত্যাগ,নিষ্টা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, সর্বোপরি শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে বহু বছর ধরে সাধনা করে চলেছে এবং এতে সার্থকতা লাভ করেছে মানুষ। তরুলতা ও পশুপাখির নিজ স্বরূপ বা সওা বিকাশের জন্য কোন জ্ঞান বা সাধনার প্রয়োজন হয় না। তাদের বৈশিষ্ট্য আপনা আপনিই বিকশিত হয়। এখানে মানুষ আর অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য। প্রকাশ করার নানা মাধ্যম থাকলেও কেবল নিরন্তর সাধনার দ্বারাই মানুষের আপনসত্তার সে প্রকাশভঙ্গি মানবীয় হয়ে ওঠে। মানুষ তার মহৎ কর্ম ও গুণাবলী জন্য মরেও অমর হয়ে থাকে। মানুষ ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করে রেখে যেতে চায়। মানুষই পারে একে অপরকে প্রীতি, মায়া-মমতা ও ভালোবাসার ডোরে আবদ্ধ করতে এবং সকল দুঃখকষ্টে সহযোগিতার হাত বাড়াতে। অন্য কোন প্রাণী তা পারে না। শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলি অর্জন করে, মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন করে তবেই পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভব। মানুষের সঙ্গে অন্য সকল জীবের এটিই মৌলিক পার্থক্য।