হিসাববিজ্ঞানের ক্রিয়ামূলক এবং পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যাবলি আলোচনা করুন।
(Explain the functional and operational activities of Accounting.)
হিসাববিজ্ঞানের কার্যাবলিকে দু’ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হলো:
(ক) ক্রিয়ামূলক/ঐতিহাসিক/তত্ত্বাবধান মূলক কার্যাবলি (Functional/Historical / Stewardship function):
১. লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording of Transaction)
২. লেনদেনের শ্রেণীবদ্ধকরণ ও স্থানান্তর (Classification and posting of Transaction)
৩. লেনদেনের সংক্ষিপ্ত (Summarizing of Transactions)
৪. আর্থিক ফলাফল নির্ণয় (Determination of financial result)
৫. আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন (Exibition of the financial position)
৬. আর্থিক তথ্য জ্ঞাপন (Communicating the financial information)
৭. আর্থিক অবস্থার বিশ্লেষণ (Analysis of Financial position)
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের functional এবং operational সংজ্ঞা দিন।
(খ) পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনীয় কার্যাবলি (Operational or managerial function):
১. নীতি নির্ধারণ ও পরিচালনা প্রণয়ন (Formulation of policy and preparation plan)
২. বাজেট প্রস্তুতকরণ (Preparation of Budget)
৩. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ (Cost Control)
৪. কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়ন (Evaluation of workers’ performance
৫. ভুল ও জুয়াচুরি প্রতিরোধ (Parvention of Errors of frauds)
৬. তহবিলের উৎস নির্ধারণ (Determining the sources of fund)
উপরে বর্ণিত দুধরনের কার্যাবলি নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
“আর পড়ুনঃ” একটি আধুনিক ব্যাংকে হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।
(ক) প্রধামূলক বা তত্ত্বাবধানমূলক কাজ (Historical or stewardship functions): হিসাবরক্ষককে সাধারণত প্রতিষ্ঠানের সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকারের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে গণ্য করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে তিনিই একটি প্রতিষ্ঠানের সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হয়।
তার দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি প্রতিষ্ঠানের সমুদয় আর্থিক লেনদেনের সুষ্ঠু হিসাবরক্ষণ করেন এবং এগুলোই হিসাবরক্ষণের তত্ত্বাবধানমূলক কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়।
তত্ত্বাবধানমূলক কাজগুলো নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো
১. অর্থনৈতিক লেনদেনের লিপিবদ্ধকরণ (Recording of financial transactions): হিসাবরক্ষণের প্রথম কাজ হলো লেনদেনসমূহ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে হিসাবের প্রাথমিক বই জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা। লেনদেনগুলো আবেদাভুক্ত করা হলে হিসাবের পাকা বই খতিয়ানে হিসাবখাত অনুযায়ী স্থানান্তর করা সহজ হয়।
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বলতে কী বুঝেন? সীমাবদ্ধতাগুলো বিবৃত করুন। JAIBB
২. শ্রেণীবদ্ধকরণ (Classifying): লেনদেনগুলো জাবেদায় লিপিবদ্ধ করার পর সেগুলোকে শ্রেণীবিভাগ করে পৃথক পৃথকভাবে খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করতে হয়।
হিসাববিজ্ঞানের ক্রিয়ামূলক এবং পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যাবলি আলোচনা করুন।
৩. সংক্ষিপ্তকরণ (Summarising): লেনদেনগুলোকে খতিয়ানে হিসাবের আওতায় লিপিবদ্ধ করার পর সেগুলোকে ডোর টানার মাধ্যমে বন্ধ করতে হয়।
খতিয়ান হিসাবের বিভিন্ন জেরের সাহায্যে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি বিবরণী প্রস্তুত করা হয় যাকে রেওয়ামিল বলা হয়।
৪. নীট ফলাফল নির্ণয় (Determining of the net results): হিসাবরক্ষণের প্রধান কাজ কেবল লেনদেনগুলোর বিভিন্ন হিসাবের বইয়ে লিপিবদ্ধ করা নয়।
হিসাবকালের শেষে উক্ত হিসাবকালের ব্যবসার নীট ফ ডাও নির্ধারণ করা হয়। রেওয়ামিলে উল্লেখিত খতিয়ান জেরগুলোর মধ্যে যেগুলো রাজস্ব জাতীয় আয়-ব্যয় সেগুলোর সাহায্যে ক্রয়-বিক্রয় হিসাব এবং লাভ-ক্ষতি হিসাব প্রস্তুত করে একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের ব্যবসায়ের নীট লাভ হয়েছে না নীট ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করা হয়। সুতরাং, ক্রয়-বিক্রয় হিসাব এবং লাভ- ৪-ক্ষতি হিসাব প্রস্তুত করা হিসাবরক্ষণের অন্যতম কাজ।
৫. আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন (Exhibiting financial affairs): উচ্চতপত্র প্রণয়ন করা হিসাবরক্ষণের অন্যতম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা প্রদর্শনের জন্য হিসাব বছরের শেষে উদ্বতপত্র প্রস্তুত করা হয়। উদ্বৃতপত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দায় ও সম্পত্তির চিত্র পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের ধারণা/অনুমান বলতে কী বুঝেন? এগুলো বর্ণনা করুন। JAIBB
৬, আর্থিক তথ্যের বিশ্লেষণ (Analysis of financial data): প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত হিসাব হতে যে বিভিন্ন আর্থিক তথ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। ঐ সকল তথ্য হতে প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা, মুনাফা অর্জনের ক্ষমতা, কার্যকলাপ সংক্রান্ত দক্ষতা, স্বচ্ছতা প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
অনুপাত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সমস্ত তথ্য জানা যায়।
৭. আর্থিক তথ্য আপন (Communicating financial information): প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট পক্ষ, যেমন— মালিক, কর্মচারী, সরবরাহকারী, বিনিয়োগকারী, গবেষক, সরকার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান সম্পৰ্কীয় বিভিন্ন আর্থিক তথ্য জানতে আগ্রহী থাকে। হিসাবরক্ষণের অন্যতম কাজ হলো বিভিন্ন প্রতিবেদনের সাহায্যে তাদের এ সমস্ত তথ্য নিয়মিতভাবে সরবরাহ করা।
হিসাববিজ্ঞানের ক্রিয়ামূলক এবং পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যাবলি আলোচনা করুন। হিসাববিজ্ঞানের ক্রিয়ামূলক
(খ) পরিচালনা সংক্রান্ত কাজ (Managerial functions): কারবার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন প্রকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
সে সমস্ত সিদ্ধান্ত অতীত কার্যকলাপের পর্যালোচনা করে গ্রহণ করতে হয়।
হিসাবরক্ষণের মাধ্যমে অতীতের কার্যকলাপ সংক্রান্ত সমস্ত বিবরণ সরবরাহ করে এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের
উপযোগী করে তোলা হয়। হিসাবরক্ষণের এ কাজগুলো পরিচালন সংক্রান্ত কাজ হিসাবে পরিচিত। নিচে এ কাজগুলো আলোচনা করা হলো :
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে? (What is Accounting? JAIBB
১. আর্থিক নীতি নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন (Control of Financial policy and formulation of planning): বিভিন্ন আর্থিক তথ্য ব্যবস্থাপনার কাছে পেশ করা হয় যাতে ব্যবস্থাপনার পক্ষে আর্থিক নীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং সে সাথে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যাবলি ও কর্মপন্থা রূপায়নে পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব হয়।
২. ৰাজেট প্রস্তুতি (Preparation of budget): প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের দরুন সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাবতৈরি করাও হিসাবরক্ষণের পরিচালন-সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এ বাজেট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আর্থিক তথ্য হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থাপনাকে সরবরাহ করে। পরে সম্পাদিত কার্যাবলিকে বাজেটে প্রস্তুত অনুমিত কার্যাবলির সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়।
৩. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ (Cost control): প্রতিটি ব্যয়ের ক্ষেত্রে আগে থেকেই আদর্শ বায় (standard cost) নির্ধারণ করা হয়। এজন্য অতীতের কার্যকলাপ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য হিসাবরক্ষণ হতে পাওয়া যায়। আদর্শ ব্যয় নিরূপণ করার পর প্রকৃত ব্যয়ের তুলনা করে কার্যকলাপের দক্ষতা যাচাই করা হয়। এভাবে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
৪. কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন (Evaluation of workers’ performance): প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগের কর্মীগণ তাদের উপর আরোপিত কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করেছে কিনা তা যাচাই করা হয়। এজন্য যেসব তথ্যের প্রয়োজন তা হিসাবরক্ষণ সরবরাহ করে।
৫. ভুল ও ভুয়াচুরি প্রতিরোধ (Prevention of errors and frauds): কর্মীদের সম্পাদিত কাজের যথাযথ তদারকি আরোপ করা হয়। ফলে সম্ভাব্য ভুল ও জুয়াচুরি প্রতিরোধ করাও অনেকখানি সম্ভব হয়।