হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বলতে কী বুঝেন? সীমাবদ্ধতাগুলো বিবৃত করুন। JAIBB

চারটি গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা

হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বলতে কী বুঝেন? সীমাবদ্ধতাগুলো বিবৃত করুন। (What do you mean by accounting constraints? Mention the constraints.)
অথবা, হিসাববিজ্ঞানের নীতিগুলোর বাধাসমূহ ব্যাখ্যা করুন। (Explain the constraints of accounting principles.)

যে ধারণাগুলো হিসাববিজ্ঞানের নীতির প্রয়োগকে প্রভাবিত করে তাদেরকে হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বলা হয়।
হিসাববিজ্ঞানের এ সকল সীমাবদ্ধতা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সঠিক নীতি নির্ধারণ, হিসাবরক্ষণে তার প্রয়োগ এবং আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণে সাহায্য করে।
পক্ষান্তরে, এগুলো আবার হিসাববিজ্ঞানের কোন সাধারণ নীতি প্রয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা চারটি। যথা

১. ব্যয়-সুবিধা সম্পর্ক সীমাবদ্ধতা (Cost-benefit relationship constraint): হিসাব তথ্য পরিবেশন করতে একদিকে যেমন ব্যয় হয় তেমনি উক্ত তথ্য হতে সুবিধাও পাওয়া যায়।
ব্যয়ের তুলনায় সুবিধা বেশি হলে ব্যবহারকারীদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য হয়।
পক্ষান্তরে, বায়ের তুলনায় সুবিধা কম হলে তা ব্যবহারকারীদের নিকট বর্জনীয় হয়।
পূর্ণ প্রকাশ নীতি অনুযায়ী আর্থিক বিবরণীতে প্রতিষ্ঠানের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পরিবেশন করা অপরিহার্য।
কিন্তু এ নীতি পুরোপুরি প্রয়োগ করতে গিয়ে যদি ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় তাহলে উক্ত তথ্য হতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা অর্থাৎ ব্যয় বেশি বলে গণ্য হবে।
এরূপ অবস্থায় তথ্যটি বর্জনীয় হবে। এর গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে উক্ত পূর্ণ প্রকাশনীতি পুরোপুরি প্রয়োগ না করে ভারসাম্য বজায় রেখে প্রয়োগ করতে হবে।
অর্থাৎ ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুন্ন না হয় আবার তথ্যের জন্য যারা আগ্রহী তাদের ধারণা যাতে পরিষ্কার হয় সেভাবে তথ্যগুলো পরিবেশন করতে হবে।
হিসাববিবরণীতে হিসাবের মৌলিক নীতি পুরোপুরি প্রয়োগে এভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের ধারণা/অনুমান বলতে কী বুঝেন? এগুলো বর্ণনা করুন। JAIBB

হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বলতে কী বুঝেন? সীমাবদ্ধতাগুলো বিবৃত করুন।

২. বস্তুনিষ্ঠতার সীমাবদ্ধতা (Materiality constraint): একটি হিসাবখাত বা দফাকে আর্থিক বিবরণীতে কতটুকু গুরুত্ব সহকারে দেখাতে হবে তা বস্তুনিষ্ঠতার মূল বিষয়।
একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক আর্থিক অবস্থা এবং কার্যক্রমের উপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম কোন বিষয় বা দফাকে প্রাসঙ্গিক বিষয় বলা হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, ব্যবসার বিনিয়োগকারী বা পাওনাদারদের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন বিষয়গুলোকে প্রাসঙ্গিক বিষয় বলা হয়।
কোন বিষয় বা দফা অন্তর্ভুক্ত হলে বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যদি কোন প্রভাব বিস্তার না করতে পারে তবে তাকে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বলা হয়।
হিসাবরক্ষক তার নিজস্ব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিচারবুদ্ধির আলোকে কোনটি প্রাসঙ্গিক বা কোনটি অপ্রাসঙ্গিক তা বিবেচনা করে

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞান তথ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী কে? JAIBB

হিসাবভুক্ত করে থাকেন । যেমন—কারবারের প্রয়োজনে কয়েকটি পেপারওয়েট ক্রয় করা হলো। এগুলো কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে।
কিন্তু এদেরকে সম্পদ হিসেবে উদ্বৃতপত্রে না দেখিয়ে চলতি বছরের খরচ হিসেবে দেখালে বিনিয়োগকারী বা পাওনাদারগণ কোন সমালোচনা করবে না আবার GAAP নির্দেশিত নীতিমালা ভঙ্গ হয়েছে এমন অভিযোগও কেউ করবে না। তাই পেপারওয়েট ক্রয়ের ব্যয় একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বা দফা।
কোন কোন প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে একটি টাকার অংক নির্ধারণ করে।

হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বলতে কী বুঝেন? সীমাবদ্ধতাগুলো বিবৃত করুন।

৩. শিল্প ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা (Industry practice constraint): কারবারের বিভিন্নতার কারণে বিশেষ করে সেবা, রেল, ব্যাংক, বীমা এসবক্ষেত্রে হিসাবনীতি চর্চা ও প্রয়োগ কিছু কিছু বিষয়ে উপেক্ষা করা হয় অর্থাৎ, এসব ক্ষেত্রে বিশেষ হিসাব অনুমোদন করা হয় বলে হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক নীতির প্রয়োগ উপেক্ষিত হয়।
এসবক্ষেত্রে অফিসিয়াল ঘোষণার মাধ্যমে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে বিভিন্নতা আনা হয়।
এসব বিভিন্নতা কারণসহ হিসাবে প্রকাশ করতে হয়। এভাবে কারবারের বিভিন্নতা এবং বিশেষ হিসাব চর্চার কারণে হিসাববিজ্ঞান নীতি প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

“আর পড়ুনঃ” ব্যাংকিং ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞানের সুবিধা বা উপকারিতাসমূহ বর্ণনা করুন। JAIBB

৪, রক্ষণশীলতার সীমাবদ্ধতা (Conservatism constraint): ব্যবসার লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন করা।
ব্যবসা জগতে অনিশ্চয়তার কারণে পূর্ব হতে সম্ভাব্য লোকাসানের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করাকে রক্ষণশীলতা বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, লাভের চেয়ে লোকসানের বিষয়ে সচেতন হওয়াকে রক্ষণশীলতা বলা হয়।
বছরের লাভ-লোকসান নির্ণয় করার সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।
এ সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী সম্ভাব্য সকল প্রকার ক্ষতি ও ব্যয়কে হিসাবভুক্ত করা হয়।
পক্ষান্তরে, সম্ভাব্য আয়কে হিসাবভুক্ত করা হয় না। যেমন—দেনাদারবৃন্দের উপর পাওনা সঞ্চিতি ও বাট্ট। সঞ্চিতি সম্ভাব্য ক্ষতি হলেও লাভ-লোকসান হিসাবে ও উদ্ধতপত্রে দেখানো হয়। অন্যদিকে আয় কম ধরা ও ব্যয় বেশি ধরার আর একটি উদাহরণ হলো সমাপনী মজুদ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ : বাজারমূল্য বা ক্রয়মূল্য এ দুইয়ের মধ্যে কমটি মজুদ পণ্যের মূল্য ধরে হিসাবভুক্ত করা হয়।
সুতরাং রক্ষণশীলতার কারণে হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক নীতি প্রয়োগে বাধাগ্রস্ত হয়।

About Post Author

Related posts