হিসাববিজ্ঞান তথ্যের গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

চারটি গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা

হিসাববিজ্ঞান তথ্যের প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের গুণাবলি ব্যাখ্যা করুন। (Explain the primary and secondary qualities of accounting information.) অথবা, হিসাববিজ্ঞান তথ্যের গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? (What are the qualitative characteristics of accounting information?)

হিসাববিজ্ঞান তথ্যের দুই ধরনের গুণবাচক বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। যথা :
(i) প্রাথমিক গুণাবলি; (ii) মাধ্যমিক গুণাবলি। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

প্রাথমিক গুণাবলি ( Primary Qualities): আর্থিক লেনদেনের সাথে সম্পর্কযুক্ত তথ্যাবলি সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের কাছে অর্থবহ উপায়ে পরিবেশন করা হিসাববিজ্ঞানের একটি প্রধান কাজ।
হিসাবরক্ষণ মূলত একটি সেবামূলক কাজ।
এজন্য আর্থিক বিবরণীতে বর্ণিত তথ্যসমূহ এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ যেমন— মালিক, পাওনাদার, বিনিয়োগকারী, ব্যবস্থাপক ও ঋণদাতাদের প্রয়োজন মেটাবার পক্ষে উপযোগী ও প্রাসঙ্গিক হয়।
এছাড়া এসব তথ্যগুলো নৈর্ব্যক্তিক, নির্ভরযোগ্য হবে এবং কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত হতে হবে।
এরূপ তথ্যের নিম্নোক্ত প্রাথমিক গুণগত বৈশিষ্ট্য থাকতে হয় :

“আর পড়ুনঃ” নৈতিকতার সংজ্ঞা দিন। কেন নৈতিকতা ব্যবসায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?

১. প্রাসঙ্গিকতা (Relevance): প্রাসঙ্গিকতা বলতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উক্ত তথ্যের সম্পৃক্ততাকে বুঝায়।
প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলো ব্যবহারকারীদেরকে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ঘটনাবলির শেষ ফলাফল সম্পর্কে ধারনা দিতে সাহায্য করে।
প্রাসঙ্গিক তথ্যের পূর্বাভাস মূল্য, ফলাবর্তন মূল্য এবং সময়োপযোগিতা থাকতে হবে।

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের ধারণা, প্রক্রিয়া এবং মান উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ কী কী?

হিসাববিজ্ঞান তথ্যের গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

(ক) পূর্বাভাস মূল্য (Predictive value) : অতীত তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের কোন বিষয় সম্পর্কে অনুমান করাকে পূর্বাভাস বলে।
প্রাসঙ্গিক হতে হলে তথ্যের পূর্বাভাস মূল্য থাকতে হয়।
যেমন কোন একটি প্রতিষ্ঠান তার এক বছরের চূড়ান্ত আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করল।
এতে প্রকাশিত নীট মুনাফাকে প্রাসঙ্গিক তথ্যরূপে বিবেচনা করা যাবে।
কারণ এর ভিত্তিতে পরবর্তী বছরের নীট মুনাফার পূর্বাভাসমূলক ধারণা পাওয়া যায়।

(খ) ফলাবর্তন মূল্য (Feedback value): প্রাসঙ্গিক হতে হলে তথ্যের ফলাবর্তন মূল্য থাকতে হয়।
এখানে ফলাবর্তন বলতে কার্যাবলির ফলাফল পরিমাপককে বুঝায়।
যেমন—একটি প্রতিষ্ঠান তার বার্ষিক চূড়ান্ত আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করল ।
এ বিবরণীতে প্রদর্শিত নীট মুনাফা অতীত কার্যাবলির পরিমাপক বলে এর ফলাবর্তন মূল্য আছে।
অতএব এখানে নীট মুনাফা একটি প্রসাঙ্গিক তথ্য।

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের নৈতিকতা বলতে কী বুঝায়? JAIBB

(গ) সময়োপযোগিতা (Timeliness) : কোন তথ্য প্রাসঙ্গিক হতে হলে উহাতে সময়োপযোগিতা থাকতে হবে।
তথ্যের সময়োপযোগিতা বলতে তথ্যসমূহ সময়মত পরিবেশন করাকে বুঝায় যা দ্বারা এর সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
তথ্যসমূহ সময়মত পরিবেশন করা না হলে সে তথ্য প্রাসঙ্গিক হবে না।
যদি কোন প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত আর্থিক

প্রতিবেদন হিসাবকাল শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রস্তুত করে প্রকাশ করলে তা সময়োপযোগী হয়।
কিন্তু তা যদি পরবর্তী বছরের ৬/৭ মাস পার হয়ে গেলে প্রস্তুত এবং পেশ করা হয় তবে তা ব্যবহারযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।

২. নির্ভরযোগ্যতা (Reliability): ব্যবহার উপযোগী হওয়ার জন্য তথ্য নির্ভরযোগ্য হতে হবে।
তথ্য নির্ভুল ও নিরপেক্ষ হলে নির্ভরযোগ্যতার গুণ অর্জন করে।
যে বিষয়ে ব্যবহারকারীগণকে তথ্য দিতে চায় তা সঠিকভাবে প্রদান করতে সক্ষম হলে উক্ত তথ্যকে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। তথ্যসমূহ নির্ভরযোগ্য হতে হলে এর নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকতে

হিসাববিজ্ঞান তথ্যের গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

(ক) প্রমাণযোগ্যতা (Varifiable): যাচাইযোগ্যতা সম্পন্ন বিভিন্ন স্বাধীন ব্যক্তি বা একাধিক হিসাব নিরীক্ষক যখন একই পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে কোন বিষয়ের উপর একটি ফলাফল বা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তখনই এর বিষয়বস্তুকে প্রমাণসাপেক্ষ বলে ধরা যায়।
যেমন- —-উদ্বৃত্তপত্রের একটি স্থায়ী সম্পদের অবচয় যদি সরলরৈখিক পদ্ধতিতে ধরা হয়েছে বলে নোট থাকে তখন যে কেউ উক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করলে একই পরিমাণ অবচয় নির্ণীত হবে।
এটাই প্রমাণযোগ্যতার বৈশিষ্ট্য।

“আর পড়ুনঃ” আর্থিক হিসাববিজ্ঞান এবং প্রতিবেদন প্রস্তুতের ধারণাগত কাঠামো আলোচনা করুন।

(খ) বিশ্বস্তভাবে উপস্থাপন (Faithful presentation): প্রদর্শিত তথ্যগুলোর বর্ণনা বা সংখ্যার পরিমাণ বাস্তব অবস্থার সাথে মিল রেখে উপস্থাপনাকে বিশ্বস্তভাবে উপস্থাপন বলে।
যেমন- কোম্পানির মোট বার্ষিক বিক্রয় যদি ১৫৯ লাখ টাকা হয়ে থাকে তাকে আয় বিবরণীতে ১৬০ লাখ টাকা (আসন্ন) বলে প্রকাশ করাকে বিশ্বস্ত উপস্থাপন বলা যায় না।

(গ) নিরপেক্ষতা (Neutrality): নিরপেক্ষতা কোন বিশেষ গোষ্ঠী, ব্যক্তি বা সংস্থার প্রতি আনুকূল্য বিহীনভাবে তথ্য প্রকাশ করাকে বুঝায়।
যদি তথ্য উপস্থাপনের দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত ফলাফল পাভের লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত বা বিচারকে প্রভাবিত করে তখন ঐ তথ্য উপস্থাপন নিরপেক্ষ হব না।

সুতরাং হিসাব তথ্যকে সঠিক ও যথার্থ তথ্য হিসাবে বিবেচিত হতে হলে উপরে বর্ণিত প্রাথমিক গুণগত বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।

“আর পড়ুনঃ” অব ব্যালেন্স শীট উপকরণ (Off Balance Sheet item)

মাধ্যমিক গুণাবলি (Secondary Qualitives): হিসাব তথ্যের মাধ্যমিক গুণাবলি নিচে বর্ণিত হলো :

(১) তুলনাযোগ্য (Comparability): হিসাব তথ্যসমূহ এমন হওয়া উচিত যাতে একই জাতীয় অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করা যায়।
উত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এরূপ তথ্য কার্যকর তথ্য হিসেবে কাজ করে।

(২) সামঞ্জস্যতা (Consistency) : হিসাব তথ্য এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে পূর্বের তথ্যের সাথে সামঞ্জস্য থাকে।
অর্থাৎ প্রতি বছর একই নীতি ব্যবহার করে হিসাব প্রস্তুত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ যদি অবচয় নির্ধারণে সরলরৈখিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তবে পরবর্তী বছরগুলোতেও ঐ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।

About Post Author

Related posts