লেনদেনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন। (Discuss the nature or feature of transaction.)
কোন ঘটনা লেনদেন হতে হলে একে কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে, যা নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন (Change in financial position): কোন ঘটনা লেনদেন হতে হলে এটা অবশ্যই অর্থের মূল্যে পরিমাপযোগ্য হতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, রহিম করিমের নিকট ৫০০ টাকা পায়। এখন করিম দেউলিয়া ঘোষিত হলো।
তাহলে করিমের নিকট হতে রহিমের আর টাকা পাবার সম্ভাবনা নেই। ফলে রহিমের আর্থিক ক্ষতি হলো এবং এটা একটি লেনদেন।
২. অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য (Measurable in terms of money): কোন ঘটনা লেনদেন হতে হলে একে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য হতে হবে; যেমন—কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সুদক্ষ ম্যানেজার বাস দুর্ঘটনায় মারা গেলে নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে, কিন্তু উক্ত ঘটনাটি লেনদেন নয়। কারণ দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ টাকার দ্বারা পরিমাপযোগ্য নয়।
৩. স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন (Self-sufficient and independent): প্রতিটি লেনদেন স্বতন্ত্র ও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে।
অর্থাৎ একটি ঘটনা অন্য একটি ঘটনার উপর নির্ভরশীল নয়; যেমন—একজন খরিদ্দার ২,০০০ টাকার পণ্য ধারে ক্রয় করে এবং খরিদ্দার তিনমাস পরে উক্ত ২,০০০ টাকা পরিশোধ করে। পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং স্বাধীন হলেও এই ধারে বিক্রয় ও মূল্য প্রাপ্তি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন লেনদেন।
৪. দ্বৈত সত্তা (Duel aspect): লেনদেনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দ্বৈত সত্তা অর্থাৎ প্রতিটি লেনদেনে দুটি পক্ষ থাকবে।
একটি ডেবিট পক্ষ এবং অপরটি ক্রেডিট পক্ষ অর্থাৎ একপক্ষ সুবিধা গ্রহণকারী এবং অপর পক্ষ সুবিধা প্রদানকারী।
দুটি পক্ষ ব্যতীত কোন লেনদেন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, বেতন প্রদান করা হয় ১০০ টাকা।
এ ঘটনায় দুটি পক্ষ জড়িত একটি বেতন হিসাব এবং অপরটি নগদান হিসাব।
এক্ষেত্রে ব্যবসায় নগদ টাকা প্রদান করে এবং কর্মচারীরা বেতন বাবদ সুবিধা গ্রহণ করে। এ ঘটনায় দুটি হিসাব বা সত্ত্বা থাকায় এটা একটি লেনদেন।
৫. অদৃশ্যমান (Invisible): লেনদেন সব সময়ই দৃশ্যমান হবে এমন নয়।
কখনো এটি অদৃশ্যমান হতে পারে; যেমন–২,০০০ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো।
আসবাবপত্র ব্যবহারের ফলে অবচয় হয়েছে এবং কারবারের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অতএব এটা একটি লেনদেন।
৬. ইতিবৃত্তীয় ঘটনা (Historical events): কোন ঘটনা ইতঃপূর্বে ঘটে গেছে শুধু সেটাকেই লেনদেন বলে গণ্য করা হয় না।
ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এরূপ ঘটনাকেও লেনদেন বলে গণ্য করা হয়; যেমন—বৎসর শেষে দেনাদারের নিকট ১,০০০ টাকা প্রাপ্য আছে।
অনুমান করা হলো যে, ৫০০ টাকা এখনো অনাদায়ী আছে। বৎসরান্তে অনাদায়ী অর্থের জন্য অনাদায়ী দেনা সঞ্চিতিকে লেনদেনরূপে ধরে হিসাবভুক্ত করতে হবে।
৭. হিসাব-নিকাশের ভিত্তি (Basis of Accounting): হিসাব-নিকাশের প্রধানত দুটি ভিত্তি বিদ্যমান; যথা— নগদান ভিত্তিক এবং প্রাপ্য ও প্রদেয় ভিত্তিক।
নগদ টাকা আদান-প্রদানের মাধ্যমে যে লেনদেন হয় তাকে নগদান ভিত্তিক লেনদেন বলে।
আর টাকা পাওনা বা দেনা থাকলে এর ভিত্তিতে যে লেনদেন হয় তাকে প্রাপ্য ও প্রদেয় ভিত্তিক লেনদেন বলে:, যেমন—বিনিয়োগের সুদ পাওনা, বেতন বকেয়া ইত্যাদি প্রাপ্য প্রদেয় ভিত্তিক লেনদেন।
৮. বস্তুগত বা সেবার বিনিময় (Exchange of goods or services): লেনদেন হতে হলে বস্তুগত দ্রব্যসামগ্রী বা সেবার বিনিময় হতে হবে।
যেমন – ৬,০০০ টাকার বিনিময়ে একটি স্টিলের আলমারি ক্রয়, কর্মচারীদের বেতন প্রদান ২০,০০০ টাকা ইত্যাদি।
৯. প্রামাণ্য দলিল (Documentary evidence): কোন ঘটনা লেনদেন হতে হলে তার সপক্ষে অবশ্যই প্রমাণ থাকতে হবে।
যেমন—অফিসের জন্য নগদে আসবাবপত্র ক্রয় করা হলে প্রমাণস্বরূপ আসবাবপত্র এবং আসবাবপত্র ক্রয়ের ক্যাশমেমো উপস্থাপন করা।
নচেৎ নিরীক্ষক তার নিরাক্ষাকার্য সম্পাদনকালে উপযুক্ত দলিলাদির অভাবে কোন ঘটনাকে লেনদেন হিসাবে স্বীকৃতি নাও দিতে পারেন।