খতিয়ান কাকে বলে? খতিয়ানের উপকারিতা বর্ণনা করুন।

খতিয়ান কাকে বলে? খতিয়ানের উপকারিতা বর্ণনা করুন। (What is Ledger? Discuss its advantages.)

খতিয়ান: ইংরেজি “Ledge” শব্দ হতে “Ledger” শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।
ইংরেজি “Ledge” শব্দের অর্থ হলো তাক, আর “Ledger” শব্দের অর্থ হলো খতিয়ান।
তাকে যেমন গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়, খতিয়ান বা লেজারেও কারবারের লেনদেনগুলোকে শ্রেণীবদ্ধভাবে সাজিয়ে লিপিবন্ধ করা হয়।
কোন লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। খতিয়ান হিসাব চক্রের দ্বিতীয় ধাপ।
খতিয়ানে লেনদেনগুলোকে শ্রেণীবদ্ধভাবে সাজিয়ে লেখা হয় বলে কারবারের মোট দেনা,
মোট পাওনা, বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তির পরিমাণ, বিভিন্ন খাতে আয়-ব্যয়ের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় সহজেই জানা যায়।

Arther Fieldhouse-এর মতে, “Ledger is the permanent store house of all transactions.” অর্থাৎ খতিয়ান হলো সকল লেনদেনের স্থায়ী ভাণ্ডার।

“আর পড়ুনঃ”প্রাসঙ্গিক ব্যয় বিশ্লেষণ (Relevant Cost Analysis)

Prof. Chambers-এর মতে, “Ledger is the principle book of accounts among merchants in which the entries in all other books are entered.” অর্থাৎ খতিয়ান হলো ব্যবসায়ীদের হিসাবের প্রধান বই যার মধ্যে অন্যান্য বইগুলোর দাখিলাসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়।

LC. Croper-এর মতে, “The book in which a trader’s transactions are recorded in a classified permanent form is called the ledger.” অর্থাৎ হিসাবের যে বইতে কারবারি লেনদেনগুলোকে শ্রেণীবিন্যাস করে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

সুতরাং সংক্ষেপে বলা যায়, যে হিসাবের বইতে কোন কারবার প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লেনদেনসমূহকে সংক্ষিপ্ত করে।
শ্রেণীবদ্ধ অবস্থায় বিভিন্ন শিরোনামে বিভক্ত করে পাকাপাকিভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

খতিয়ানের উপকারিতা: খতিয়ানের বহুবিধ সুবিধা রয়েছে।
এজন্য খতিয়ানকে সকল হিসাব বহির রাজা বলা হয়। খতিয়ানের প্রধান প্রধান সুবিধা নিচে বর্ণনা করা হলো :

১. দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির প্রয়োগ: খতিয়ানে প্রতিটি হিসাব খাতকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির সূত্রানুযায়ী ডেবিট ও ক্রেডিটে বিভক্ত করে লিপিবদ্ধ করা হয়। সুতরাং জাবেদা হতে ডেবিট হিসাব খাতটিকে খতিয়ানে ডেবিট পাশে এবং ক্রেডিট হিসাব খাতটিকে খতিয়ানের ক্রেডিট পাশে লিপিবদ্ধ করা হয়।

খতিয়ান কাকে বলে? খতিয়ানের উপকারিতা বর্ণনা করুন।

২. মোট দেনা-পাওনার পরিমাণ নির্ণয়: খতিয়ানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাব পৃথক পৃথকভাবে রাখা হয়। ফলে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কারবারের দেনা-পাওনার পরিমাণ নির্ধারণ করা সহজতর হয়।

৩. ভুলত্রুটি ও জালিয়াতি উদ্ঘাটন এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা: খতিয়ানের সাহায্যে হিসাবের ভুলত্রুটি ও জালিয়াতি সহজেই ধরা পড়ে এবং এটা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা যায়।

৪. হিসাব খাতসমূহ শ্রেণীবিন্যাস করে সংরক্ষণ: খতিয়ানে প্রতিটি হিসাব খাতের জন্য পৃথক পৃথক পৃষ্ঠা ব্যবহার করা হয় এবং প্রত্যেক হিসাব খাতের শিরোনাম থাকে। ফলে হিসাবরক্ষণ কাজ সহজ হয়।

৫. রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ : খতিয়ান হতে বিভিন্ন হিসাব খাতের ডেবিট ও ক্রেডিট উদ্বৃত্তের মাধ্যমে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা যায়। রেওয়ামিলের সাহায্যে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা সম্ভবপর হয়।

৬. লাভ-লোকসান নিরূপণ: খতিয়ানে রক্ষিত নামিক হিসাবের সাহায্যে নির্দিষ্ট সময়ের শেষে লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুত করে কারবারের নীট লাভ ও নীট লোকসান নির্ণয় করা যায়।

৭. উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত: খতিয়ানে বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তি ও দায়দেনার হিসাব খাত সংরক্ষিত হয়।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত করে কারবারের সঠিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা সম্ভবপর হয়।

৮. গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ: খতিয়ানে বিভিন্ন হিসাব খাত পৃথক পৃথকভাবে সংরক্ষিত হয়।
ফলে কারবারের মোট ক্রয়, মোট বিক্রয়, মোট সম্পত্তি, মোট দায়, বিবিধ দেনাদার,
বিবিধ পাওনাদার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।

৯. হিসাবের কারচুপি ও জালিয়াতি রোধ: যথাযথভাবে খতিয়ান সংরক্ষণ করলে হিসাবের কারচুপি ও জালিয়াতি সহজেই ধরা পড়ে। ফলে হিসাবের কারচুপি ও জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হয়।

১০. মোট সম্পত্তির পরিমাণ নির্ণয়: খতিয়ানের সাহায্যে কোন কারবার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তির মোট পরিমাণ নিরূপণ করা যায়।

About Post Author

Related posts