হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা করুন। (Describe the objectives of Accounting) JAIBB
বর্তমান যুগে কারবারি প্রতিষ্ঠানের প্রভৃতি পরিবর্তিত হয়েছে, বাণিজ্যিক জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফলে হিসাববিজ্ঞানের সংজ্ঞাও পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে হিসাববিজ্ঞান বলতে বুঝানো হয় অর্থনৈতিক তথ্য চিহ্নিত করা,
তা সংগ্রহ করা, শ্রেণীবদ্ধ করা, সংক্ষিপ্ত করা এবং
স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলকে প্রয়োজন অনুসারে যথোপযুক্ত পদ্ধতিতে সরবরাহ করার কলাকৌশল যাতে তারা সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
ব্যবস্থাপনায় হাত থেকে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করাও হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য : উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে আধুনিক ব্যবসায়ে হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্যকে নিম্নোক্তভাবে উপস্থাপন করা যায়
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে? (What is Accounting? JAIBB
১. লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording of transactions) হিসাববিজ্ঞানের প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিক লেনদেনগুলোকে ধারাবাহিক ও সুষ্ঠুভাবে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা।
এর ফলে স্মৃতিশক্তির সাহায্য ছাড়াই প্রতিটি লেনদেনের সঠিক প্রভৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
এই উদ্দেশ্যে লেনদেনসমূহকে প্রাথমিক পর্যায়ে জাবেদা ও বিশেষ জাবেনা অর্থাৎ নগদান বই, জন্ম বই,
জন্ম ফেরত বই, বিক্রয় ফেরত বই, প্রাপ্য বিল বই ও প্রদেয় বিল বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এবং পড়ে এগুলোকে স্থায়ীভাবে খতিয়ানের মাধ্যমে বিভিন্ন হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়।
“আর পড়ুনঃ” What are the features of business communication? JAIBB
২. অর্থনৈতিক তথ্যগুলোকে স্থায়ী সংরক্ষণ (Permanent recording of economic data) স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করে সফল লেনসেন স্মরণ রাখা ও এদের প্রকৃতি অনুধাবন করা সম্ভব নয়।
বিশেষ করে তথ্যের সংখ্যা প্রচুর হলে নিখুঁজভাবে এগুলো স্মরণ রাখা যায় না। এমতাবস্থায় হিসাবরক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক তথ্যগুলোকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
৩. সম্পত্তি পায় সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করা (Information representing about assets and liabilities): কোন নির্দিষ্ট সমমান্তে প্রতিষ্ঠানে কি পরিমাণ সম্পত্তি ও
দায় আছে তার সঠিক চিত্র স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলের কাছে তুলে ধরা হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যগুলোর অন্যতম।
হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীগণ উপস্থাপিত তথ্যের বিশ্লেষণ করে নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা করুন।
৪. লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা (Informing about profit und loss): হিসাবকালের শেষে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করা হয়।
কোন প্রতিষ্ঠাদের লাভ বা ক্ষতি এর বিভিন্ন আর্থিক অনুপাত নির্ধারণে ব্যবহার করা হয়। এ সকল অনুপাত বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
৫. আর্থিক ফলাফল নির্ণয় (Determining financial result): কোন নির্দিষ্ট সময়ে লাভ-লোকসান নির্ণয়ের মাধ্যমে লেনদেনের আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
“আর পড়ুনঃ” Discuss the importance of communication business. (BDE)
৬. সম্পতি ও মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ (Information supplying about assets and (equity) : লেনদেন সংগঠিত হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ও মালিকানা স্বত্ত্বে পরিবর্তন সাধিত হয়।
হিসাবকাল শেষে সম্পত্তি ও মালিকানা স্বত্ত্বের যে তথ্য উপস্থাপন করা হয় তা বিশ্লেষণ করে সম্পত্তি ও মালিকানা স্বত্ত্বের (owner’s equity) মধ্যে তুলনা করা সম্ভব হয়।
৭. তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ : নিয়মিত ও সঠিক হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে চলতি হিসাবকালের সাথে এক বা
একাধিক হিসাবকালের তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করা হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
৮. বিরোধ মীমাংলা (Settlement of despite) : মাসিক ও তৃতীয় পক্ষের মধ্যে এবং অংশীদারি ব্যবসায়ের অংশীদারদের মধ্যে আর্থিক বিরোধ মীমাংসা করা হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
৯. অর্থ আত্মসাৎ ও যায় নিয়ন্ত্রণ (Controlling money grapped and cost): জালজুয়াচুরি মাধ্যমে অর্থ আত্নসাৎ প্রতিরোধ এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা হিসাববিজ্ঞানের আর একটি উদ্দেশ্য।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সুষ্ঠুভাবে হিসাব সংরক্ষণ করা হলে অর্থ আত্মসাৎ ও যায় নিয়ন্ত্রণ করা সহজতর হয়।
“আর পড়ুনঃ” How communication related with management? (BDE)
১০. মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি (Creating value and accountability) :
ব্যক্তি ও ব্যবসায়ের মধ্যে উন্নত মূল্যবোধ সজাগ করা এবং হিসাবের স্বচ্ছতা ও উপযুক্ত জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে অপব্যয়,
অধিক ব্যয় ও তহবিল তহুরূপ রোধকল্পে সচেতনতা সৃষ্টি করা হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
১১. কর নির্ধারণে সহায়তা (Helping In fixation of tax) : স্বীকৃত হিসাব পদ্ধতিতে সুষ্ঠুভাবে হিসাব সংরক্ষিত হলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা
বিক্রয় বার কর্তৃপক্ষের নিকট তা অধিক গ্রহণযোগ্য হয় বলে আয়কর ও বিক্রয় কর বা ড্যাট নির্ধারণ ও নিষ্পত্তি অনেক সহজ হয়।
হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা করুন।
১২. নগদ টাকার অবস্থা নিরূপণ (Ascertainment of financial position) :
নগদান বইয়ের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নগদ টাকার অবস্থা সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত হওয়া হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
১৩. নীতি নির্ধারণ ও মূল্যায়ন (Determination and evaluation of policy) : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনার জন্য আর্থিক বিবরণসমূহ বিশ্লেষণ ও
ব্যাখ্যা করে ব্যবস্থাপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে পরিচালনা নীতি নির্ধারণ ও মূল্যায়নে সাহায্য করে।
“আর পড়ুনঃ” What is Business Communication? (BDE)
১৪. হিসাবে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই (Testing arithmatical accuracy of accounts) :বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো
হিসাবসমূহ সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে কি না তৎসম্পর্কে নিশ্চিত থাকা।
রেওয়ামিল প্রস্তুতের মাধ্যমে সংরক্ষিত হিসাবসমূহের গাণিতিক শুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
রেওয়ামিল মিলে গেলে প্রমাণিত হয় যে, সংরক্ষিত হিসাবসমূহ গাণিতিকভাবে শুদ্ধ।
১৫. আইনগত বাধা-নিষেধ পালন (Comparative analysis) : বর্তমান যুগের প্রায় সব ব্যবসায়ই কোন না কোন আইনের আওতায় পড়ে।
তাই উক্ত আইনগুলোর বাধা-নিষেধ-এর প্রতি লক্ষ্য রেখে হিসাব তৈরি ও পেশা করা হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম বিশেষ উদ্দেশ্য।
পরিশেষে বলা যায়, হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হলো—মালিক, ব্যবস্থাপক, ঋণদাতা, বিনিয়োগকারী, সরকার, কর কর্তৃপক্ষ,
শ্রমিক সংঘ ইত্যাদি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলকে অর্থনৈতিক তথ্য সরবরাহ করা।