GAAP বলতে কি বুঝায়? আর্থিক বিবরণী তৈরিতে ইহা কিভাবে প্রভাব বিস্তার করে? (What is GAAP (Generally Accepted Accounting Principles)? How does it influence the preparation of financial statements?) JAIBB
সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালার সংজ্ঞা: সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলতে এমন কতগুলো মৌলিক বা স্বতঃসিদ্ধ সত্যকে বুঝায় যেগুলো হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় এবং সকল ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
স্বতঃসিদ্ধ সত্যকে বুঝায় যেগুলো হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় এবং সকল ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
স্বতঃসিদ্ধ বলতে এমন সত্যকে বুঝায় যার কোনো প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ নিজেই নিজের সভ্যতা প্রমাণ করতে পারে।
মূলত সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা (Generally Accepted Accounting Principles) বলতে হিসাব সম্পর্কে কিছু ধারণা এবং এর প্রয়োগকে বুঝায়।
১৯৭৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক হিসাব মান কমিটি International Accounting Standard Committee IASC (বর্তমানে যা International Accounting Standard Board বা IASB নামে পরিচিত)
এবং Financial Accounting Stanard Board বা FASB প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিসাববিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দর্শন ও প্রয়োগ রীতি নির্দেশকারী ধারণা ও প্রখাসমূহকে পৃথকভাবে বিবেচনা না করে সবগুলোকে একত্রে হিসাব নীতি (Accounting Principles) বলে গণ্য করা হয়।
যেগুলো সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা বলে পরিচিত।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হিসাব সংগঠন Financial Accounting Standard Board of USA এবং Securities and Exchange Commission-SEC এই নীতিগুলোর প্রতিষ্ঠাতা যা বিশ্বের সকল হিসাববিজ্ঞানিগণ মেনে চলেন।
“আর পড়ুনঃ” হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীগণ তত্ত্বসমূহের কি ধরনের ব্যবহার করেন তা উল্লেখ করুন।
GAAP বলতে কি বুঝায়
বিভিন্ন সংস্থা ও হিসাববিজ্ঞানী সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা সম্পর্কে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
নিম্নের তাদের কয়েকটি সংজ্ঞা প্রদত্ত হলো
“আর পড়ুনঃ” হিসাব তথ্যের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারকারী কারা? JAIBB
আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ সার্টিফাইট পাবলিক একাউন্ট্যান্টস (American Institute of Certfied Public Accountants-AICPA)-এর মতে, “Generally Accepted Accounting Principles are those principles which have substantial authoritative support.” অর্থাৎ সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা হলো যেসব নীতিমালা যেগুলোর বলিষ্ঠ কর্তৃত্বপূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
অধ্যাপক ডব্লিউ, বি. মিগস ও আর. এফ. মিগস ( Prof. W. B. Meigs & R. F. Meigs) বলেন, “Generally Accepted Accounting Principles (GAAP) is the accounting concepts, measurement techniques and standards of presentation used in financial statements.” সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা হলো আর্থিক বিবরণীসমূহের উপস্থাপনে ব্যবহৃত হিসাবসংক্রান্ত ধারণা, পরিমাণ কৌশল এবং মান
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে,
হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে যেসব নিয়মকানুন বা ধারণা সাধারণভাবে অনুসরণ করা হয় এবং সকলের নিকট কোনো প্রকার প্রমাণ ছাড়াই গ্রহণযোগ্য হয় তা-ই সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা।
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের ক্রিয়ামূলক এবং পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যাবলি আলোচনা করুন।
আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণে সর্বজনস্বীকন্তু হিসাববিজ্ঞান নীতিমালার ব্যবহার: সর্বজনীনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা অনুসরণ করে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হলে তা থেকে প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের যথার্থ ও ন্যায়সঙ্গত চিত্র পাওয়া যায়।
নিচে আর্থিক হিসাব বিবরণী প্রস্তুতকরণে সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালার ব্যবহার সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো :
(ক) অনুমানসমূহ (Assumptions): হিসাববিজ্ঞানে অনুমান বলতে পূর্বানুমানকে বুঝায়।
অন্যভাবে বলা যায়, অনুমান হলো যুক্তি বা ভিত্তি বা প্রমাণ ছাড়া গৃহীত কোনো বর্ণনা।
FASB সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক হিসাব সংস্থা কর্তৃক সমর্থিত এবং সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞানের কতগুলো অনুমান বা ধারণা রয়েছে।
আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণে এসব অনুমান বা ধারণার ব্যবহারসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:
GAAP বলতে কি বুঝায়
১. মুদ্রমান একক ধারণা / অনুমান (Monetary unit assumption): মুদ্রা হলো বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম।
তাই মুদ্রামানের ভিত্তিতে লেনদেনগুলোকে হিসাবভুক্ত করতে হয়। অর্থের অঙ্কে লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধকরণ এবং সম্পত্তি ও দায়ের মূল্যায়ন সর্বদাই সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়।
এ ধারণা অনুযায়ী কেবলমাত্র অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য ঘটনাবলিই আর্থিক হিসাব বিবরণীতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
যেসব কার্যাবলির আর্থিক মূল্যায়ন করা যায় না সেগুলোকে হিসাবের আওতা থেকে বাদ দিতে হবে।
অর্থাৎ আর্থিক বিবরণীতে দেখানো যাবে না।
“আর পড়ুনঃ” একটি আধুনিক ব্যাংকে হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।
২. অর্থনৈতিক সত্তা ধারণা / অনুমান (Economic entity assumption): এই ধারণা বা অনুমান অনুসারে কারবারকে তার মালিক বা মালিকদের নিকট থেকে পৃথক মনে করা হয়। তাই মালিকের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক লেনদেন কারবারের অর্থনৈতিক লেনদেনের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
মালিককে ব্যবসায়ের অন্যান্য পাওনাদারের মতোই বিবেচনা করা হয়।
এজন্য ব্যবসায়ের সব সম্পত্তির উপর মালিকসহ সকল পাওনাদারদের দাবি থাকে।
এজন্যই কারবারের মোট সম্পত্তি সর্বদা মোট দায়ের সমান হয়।
তাই প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্তপত্রে একদিকে সব সম্পত্তি দেখানো হয় এবং অন্যদিকে সব দায় (মালিকের মূলধন ও অন্যান্য দায়) দেখানো হয়।
অর্থাৎ Total Assets Total Liabilities + Capital হলে উদ্বৃত্তপত্রের উভয় দিক সমান হয়।
৩. হিসাবকাল ধারণা / অনুমান (Time period assumption): একটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব অনন্তকাল বা চিরস্থায়ী বলে ধরা হলেও হিসাবের সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠানের আয়ুষ্কালকে কয়েকটি সমান ভাগে ভাগ করা হয়।
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদনের সুবিধার্থে এবং প্রতিষ্ঠানভেদে হিসাবকাল মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক কিংবা এক বছরের জন্য বিভক্ত হতে পারে।
সচরাচর এক বছর সময়কে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান হিসাবকাল হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। হিসাবকাল বলতে একটি নির্দিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সময়কে বুঝায়।
যার শেষে উক্ত সময়ের মধ্যে সংঘটিত আর্থিক কার্যকলাপণের ফলাফল দেখিয়ে লাভ লোকসান হিসাব এবং উক্ত সময়ের শেষ দিনের আর্থিক অবস্থা দেখিয়ে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত করা হয়।
একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করার সময় মূলধন জাতীয় ব্যয়ের আনুপাতিক অংশ খরচ হিসবে লাভ-ক্ষতি হিসাবে এবং বাকি অংশ (যে অংশ থেকে এখনো সেবা পাওয়া যায় নি) বিলম্বিত করে রাখা হয় এবং তা উদ্বৃত্তপত্রে সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়।
GAAP বলতে কি বুঝায়
৪. চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা / অনুমান (Going concern assumption) : কোনো প্রতিষ্ঠান অন্তকাল ধরে চলতে থাকবে এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
অর্থাৎ কারবারটি অদূর ভবিষ্যতে বিক্রি হবে না বা বন্ধ হয়ে যাবে না; বরং স্বাধীনভাবে উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যাবে।
এ কারণে প্রতিষ্ঠানের ব্যয়সমূহকে প্রাপ্য সেবার মেয়াদের ভিত্তিতে মূলধন জাতীয় ব্যয় এবং মুনাফা জাতীয় ব্যয়—এই দুভাগে ভাগ করা হয়।
যেসব বায়ের উপযোগ দীর্ঘকাল ধরে পাওয়া যাবে তা হলো মূলধন জাতীয় ব্যয় এবং মুনাফা জাতীয় ব্যয়—এই দুভাগে ভাগ করা হয়।
যেসব ব্যয়ের উপযোগ দীর্ঘকাল ধরে পাওয়া যাবে তা হলো মূলধন জাতীয় ব্যয় এর যেসব ব্যয়ের উপযোগ স্বল্পকালেই শেষ হয়ে যাবে তা হলো মুনাফা জাতীয় ব্যয় তাছাড়া চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা অনুযায়ী সম্পত্তিগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হবে এবং দায়গুলো সাথে সাথে পরিশোধ করতে হবে না।
তাই সম্পত্তিগুলোকে বর্তমান আদায়যোগ্য মূল্যে এবং
দায়গুলোকে প্রয়োজনীয় টাকার অঙ্কে পরিমাপ করে তাৎক্ষণিক পরিশোধ না করে মেয়াদান্তে সাধারণত এক বছর শেষে প্রস্তুতকৃত উদ্বৃত্তপত্রের সম্পত্তি ও দায় পাশে দেখানো হয়।
অগ্রিম প্রদত্ত ব্যয়কে ও বলো আয়কে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে ভবিষ্যতে ব্যবসায়ের কার্যক্রম সচল থাকবে এবং বকেয়া আয় পাওয়া যাবে।
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের functional এবং operational সংজ্ঞা দিন।
(খ)নীতি সমূহ (Principles): নীতিসমূহ বলতে হিসাববিজ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মতবাদকে বুঝায়,
যা বর্তমান পদ্ধতি নির্বাচনের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে এবং হিসাবরক্ষণ কাজে ব্যবহৃত হয়। আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণে নীতিসমূহের ব্যবহার সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. আয় সনাক্তকরণ নীতি (Revenue recognition principle) হিসাবকাল বা হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠান যে অর্থ উপার্জন করে তা Revenue বা আয় হিসেবে ধরা হয়। আয়ের মধ্যে যেসব দফাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলো নিম্নরূপ :
(i) হিসাবকালে নগদে অর্জিত হয়েছে;
(ii) হিসাবকালে অর্জিত হয়েছে কিন্তু এখনো বকেয়া রয়েছে এবং
(iii) বিগত হিসাবকালে নগদে পাওয়া গিয়েছে ও চলতি হিসাবকালে অর্জিত হয়েছে এমন আয়।
GAAP বলতে কি বুঝায়
কিন্তু এমন কতগুলো ক্ষেত্র আছে যেখানে কয়েক বছর পর মোট আয় নির্ণয় করা হয়।
যেমন— ঠিকাকাৰ্য (Contract), কিস্তিতে বিক্রয় (Installment sales)।
এক্ষেত্রে আয় সনাকরণ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
এসব ক্ষেত্রে আয় সনাক্তকরণের জন্য সম্পাদনের শতকরা হার পদ্ধতি (Percentage of completion method) এবং কিত্তি পদ্ধতি (Installement method) ব্যবহার করা হয়।
“আর পড়ুনঃ” কারবার প্রতিষ্ঠানের গঠন কীভাবে হিসাববিজ্ঞানকে প্রভাবিত করে? JAIBB
২. আয়-ব্যয় সংযোগ নীতি/খরচের স্বীকৃত (Matching principle / Expense recognition): মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আয় করতে হবে তার সাথে ব্যয় বহন করা আবশ্যক। বকেয়াভিত্তিক হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে মোট প্রাপ্ত ও প্রাপ্য আয় থেকে মোট প্রদত্ত ও প্রদেয় ব্যয় বাদ দিলে নীট মুনাফা পাওয়া যায়।
আয়ব্যয় সংযোগ নীতি অনুসারে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের মাধ্যমে যে আয় হয় তা থেকে উক্ত আয় অর্জনের সাথে সংশ্লিষ্ট খরচসমূহ বাদ দিতে হয়।
খরচের স্বীকৃতি আয়ের স্বীকৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন :
১. প্রত্যঙ্গ খরচ (Direct expense): এটি সরাসরি স্বীকৃত খরচরূপে গণ্য।
২. পরোক্ষ খরচ (Indirect expense): এটি সরাসরি স্বীকৃত না-ও হতে পারে। অগ্রিম খরচ চলতি সালের জন্য স্বীকৃত খরচ হিসেবে গণ নয়।
আবার সময় অতিক্রান্ত হলে এর আংশিক স্বীকৃত হতে পারে।
৩. পূর্ণ প্রকাশের নীতি (Full disclosure principle): প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সমস্ত সত্বপূর্ণ তথ্য পরিপূর্ণ ও সহজভাবে আর্থিক বিবরণীতে প্রকাশ করা এ নীতির মূল লক্ষ্য। এ নীতিতে পূর্ণ তথ্য প্রকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাব কার্যের বিবরণী সততার সাথে প্রস্তুত এবং
এর সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্যসমূহ পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ করতে হয় যাতে ব্যবহারকারীরা সহজেই সবকিছু অবগত হতে পারে।
“আর পড়ুনঃ” হিসাবের বিধানসমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে টীকা লিখুন।
GAAP বলতে কি বুঝায়
8. ব্যয় নীতি (Cost principle): এই নীতি অনুসারে সম্পত্তিসমূহকে ক্রয়মূল্যে বলতে সম্পত্তি ক্রয়ের সময় যে মূল্য পরিশোধ করা হয়ে থাকে তাকে বুঝায়।
ব্যয় নীতি অনুযায়ী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যেসব পণ্য (Goods) ও সেবা (Services) ক্রয় করে সেগুলো ক্রয়মূল্যে হিসাবের বহিতে দেখাতে হয় এবং এই পণ্য বা সেবার উপযোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা ক্রয়মূল্য অনুসারেই আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শন করা হয়ইহসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে এ ধারণা প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো লেনদেনগুলোকে প্রকৃত মূল্যে হিসাব বহিতে লিপিবদ্ধ করা এবং আর্থিক বিবরণীগুলো যাতে হিসাবরক্ষকদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ দ্বারা প্রভাবিত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো সম্পত্তির ক্রয়মূল্য ১,০০,০০০ টাকা কিন্তু এর বাজার মূল্য ১,৫০,০০০ টাকা।
এক্ষেত্রে উরু সম্পত্তির ক্রয়মূলাই (১,০০,০০০) আর্থিক বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করা হয়।
পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সম্পত্তির ব্যবহারজনিত অবচয় এর ক্রয়মূল্য থেকে বাদ দিয়ে সম্পত্তির মূল্যায়ন করা হয়।
অবচয় নিরূপণের সময় সম্পত্তির ক্রয়মূল্য এবং আয়ুষ্কাল বিবেচনা করা হয়।
সম্পত্তির বাজার দর বা মূল্য বৃদ্ধি সম্পত্তি মূল্যায়নের সময় বিবেচনা করা হয় না।
“আর পড়ুনঃ” নগদ ভিত্তি বনাম বকেয়া ভিত্তি (Cash Basis Vs. Accrual Basis)
(গ) সীমাবদ্ধতা (Constraints):
সীমাবদ্ধতা হলো প্রকাশিত চূড়ান্ত হিসাব প্রতিবেদনের গুণগত মান হ্রাস না হওয়া সাপেক্ষে সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালার সংশোধিত বা হ্রাসকৃত প্রয়োগের অনুমোদন প্রদান করা।
হিসাববজ্ঞানের এই সীমাবদ্ধতা প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে।
যথা: ১. আপেক্ষিক গুরুত্ব (Materiality),
২. রক্ষণশীলতা (Conservatism) এবং
৩. ধারণাগত কাঠামো (Conceptual framework)।
সীমাবদ্ধতা বিষয় আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণের সময় বিবেচনা করার প্রয়োজন হয়।
তাই এটি প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহৃত না হলেও পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর্থিক হিসাব বিবরণী প্রস্তুতে সীমাবদ্ধতার ব্যবহার নিম্নে দেখানো হলো :
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বলতে কী বুঝেন? সীমাবদ্ধতাগুলো বিবৃত করুন। JAIBB
১. আপেক্ষিক গুরুত্ব (Materiality): প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা ও কার্যক্রমের মধ্যে কোনো একটি দফার প্রভাবকেই আপেক্ষিক গুরুত্ব বলা হয়। সমগ্র তথ্য বা দফার মধ্যে কোনো একটি দফা যদি বিনিয়োগকারী বা ঋণদাতাদেরকে আকৃষ্ট করে তাহলে ঐ দফাটির প্রভাবকেই আপেক্ষিক গুরুত্ব বলা হয়।
GAAP বলতে কি বুঝায়
২. রক্ষণশীলতা (Conservatism): রক্ষণশীলতা মূল কথা হলো সম্ভাব্য লাভকে পূর্বানুমান না করে সম্ভাব্য ক্ষতিকে বড় করে দেখা।
এই নীতি লাভের চেয়ে লোকসানকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
যেমন- অনাদায়ী পাওনার জন্য সঞ্চিতি রাখা, বিনিয়োগের হ্রাস-বৃদ্ধি, তহবিল সংরক্ষণ করা, অস্পর্শনীয় সম্পত্তির অবলোপন করা ইত্যাদি।
৩. ধারণাগত কাঠামো (Conceptual framework): হিসাববিজ্ঞানের সাংবিধানিক তত্ত্ব ও প্রায়োগিক নীতিমালাই হলো ধারণাগত কাঠামো।
এটি IASC কর্তৃক প্রকাশিত হলেও এর উদ্ভাবক FASB. FASB-এর মতে, “ধারণাগত কাঠামো হলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত উদ্দেশ্যসমূহ
এবং মৌলিক বিষয়াদির একটি সুসংবদ্ধ পদ্ধতি যা সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসাব মান প্রণয়নে সহায়তা করে এবং হিসাববিজ্ঞান ও আর্থিক বিবরণীগুলোর প্রকৃতি,
কার্যাবলি ও সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে।
” FASB ধারণাগত কাঠামো সম্পর্কিত কতকগুলো SFAC (Statement of Financial Accounting Concept) প্রকাশ করেছে।
এগুলো কারবারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব বিবরণী প্রস্তুতের নিয়ামক নিয়ামক বা উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে।
এগুলো হলো
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করুন। JAIBB
১. Objective of financial reporting (SFAC-No. 1): (আর্থিক প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য।)
২. Qualitative chasracteristics of accouting information (SFAC-No. 2) (হিসাববিজ্ঞান তথ্যের গুণগত বৈশিষ্ট্য।)
৩. Elements of financial statements (SPAC-No. 3): (আর্থিক বিবরণীর উপাদানসমূহ।)
৪. Recognition and measurement in financial statements of business enterprises (SFAC-No. 5):কারবার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণীর স্বীকৃতিকরণ ও পরিমাপকরণ।)
৫. Elements of financial stements include not for profit organization (SFAC-No.6): (আর্থিক বিবরণীর উপাদানগুলোর মধ্যে অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্তকরণ।)
GAAP বলতে কি বুঝায়
(ঘ) আন্তর্জাতিক হিসাব মান (Intermational Accounting Standards- IAS): ১৯৭৩ সালে লন্ডনে TASC (International Accounting Standards Committee) গঠিত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশই এ কমিটির সদস্য।
হিসাববিজ্ঞান পেশাকে আরো উন্নত করার জন্য ১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে IFAC (International Federation of Accountants) গঠিত হয়, যা IASC এর অধীনে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
২০০২ সালে IASC-এর পরিবর্তে IASB (International Accounting Standards Board)
নামক একটি নতুন সংস্থার উপর হিসাব মান প্রকাশের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
IASC এ পর্যন্ত ৪১টি হিসাব মান প্রকাশ করেছে এবং পরবর্তীতে অর্থাৎ হিসাব মান ৪২ থেকে TASB কর্তৃক প্রকাশিত হবে।
আন্তর্জাতিক হিসাব মান IASC কর্তৃক জারি করা হয় এবং সদস্যভুক্ত দেশের হিসাববিজ্ঞানিগণ তা বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলে।
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি দেশের হিসাববিজ্ঞানিগণই IAS অনুসারে আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদনসমূহ প্রস্তুত করে থাকেন।
বর্তমানে এ সংস্থাটির দায়িত্ব IASB নামক একটি নতুন সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা করুন। JAIBB
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রওকৃত অবস্থা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে জানানোর জন্যই আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ যাতে আর্থিক বিবরণী থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করে সে অনুযায়ী সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে সে জন্য আর্থিক বিবরণীগুলো অবশ্যই যথার্থ হতে হয়।
আর আর্থিক বিবরণীকে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে প্রস্তুত করার জন্য সর্বজনস্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা অনুসরণ করা হয়)