দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি ও একতরফা দাখিলা পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য কী?
(What are the differences between double entry system and single entry system?)
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি ও একতরফা দাখিলা পদ্ধতি দুটি দুধরনের হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা।
দুতরফা দাখিলা যেখানে একটি সম্পূর্ণ ও বিজ্ঞানসম্মত হিসাব পদ্ধতি, একতরফা দাখিলা সেখানে একটি ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক হিসাব পদ্ধতি। তাই এ দুটি হিসাব পদ্ধতির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান।
সংজ্ঞাত পার্থক্য: যে পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের দ্বৈত সত্তা বা পক্ষের একটিকে ডেবিট এবং এর সমপরিমাণ অপরটিকে ক্রেডিট করে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।
“আর পড়ুনঃ” দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য বা মূলনীতিসমূহ আলোচনা করুন।
পক্ষান্তরে যে পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের সংশ্লিষ্ট পক্ষ দুটিকে সবসময় হিসাববহিতে লিপিবদ্ধ করা হয় না অর্থাৎ কোন কোন লেনদেনের দুটো পক্ষকে, কোন কোন লেদেনের একটি পক্ষকে এবং কোন কোন লেনদেন মোটেই লিপিবদ্ধ করা হয় না তাকে এক তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে। নিচে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির পার্থক্য আলোচনা করা হল :
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি ও একতরফা দাখিলা পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য কী?
পার্থক্যের বিষয় | দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি | একতরফা দাখিলা পদ্ধতি |
১. আর্থিক ফলাফল | এতে নামিক হিসাব রাখা হয় বলে ক্রয়-বিক্রয় হিসাব এবং লাভ-ক্ষতি হিসাব প্রস্তুতের মাধ্যমে ব্যবসায়ের সঠিক আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা যায়। | এতে নামিক হিসাব রাখা হয় না বলে ব্যবসায়ের সঠিক আর্থিক ফলাফল নিরূপণ করা যায় না। |
২. হিসাবরক্ষণ | এ পদ্ধতিতে সকল প্রকার হিসাব লিখা হয় | এ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র ব্যক্তিবাচক হিসাব এবং কখনও কখনও নগদান হিসাব লিখা হয়। |
৩. তুলনামূলক বিশ্লেষণ | এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন বছরের হিসাবের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করন সম্ভব হয়। | এতে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না বলে বিভিন্ন বছরের হিসাবের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যাকরণ সম্ভব হয় না। |
৪. সম্পূর্ণতা | এ পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনই পূর্ণাঙ্গভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। | এ পদ্ধতিতে সকল লেনদেন পূর্ণাঙ্গভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় না। |
৫. গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই | এ পদ্ধতিতে রেওয়ামিল প্রস্তুতের মাধ্যমে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়। | এ পদ্ধতিতে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা যায় না বিধায় হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায় না। |
৬. ব্যবহার ক্ষেত্র | বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি বলে সকল প্রতিষ্ঠানে এটা ব্যবহৃত হয়। | বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নয় বলে শুধুমাত্র ছোট প্রতিষ্ঠানে এটা ব্যবহৃত হয়। |
৭. আর্থিক অবস্থা | এতে সামগ্রিক হিসাব সংরক্ষণ করা হয় ফলে একটি নির্দিষ্ট তারিখে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে ব্যবসায়ের সঠিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা যায়। | এ পদ্ধতিতে সমস্ত সম্পত্তির সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না বলে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে সঠিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা যায় না। |
৮. গতিশীলতা | গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এর নিয়ম-নীতি পরিবর্তিত হয়। | এর উপর গবেষণা হয় না বলে এটা অপরিবর্তনশীল । |
৯. ভুল ও জুয়াচুরি | এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি বলে এতে ভুল ও জুয়াচুরির সম্ভাবনা কম থাকে। | এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি বলে এতে ভুল ও জুয়াচুরির সম্ভাবনা অধিক থাকে। |
১০. হিসাবরক্ষক | এতে সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় বলে। অভিজ্ঞ হিসাবরক্ষকের প্রয়োজন হয়। | এতে তেমন কোন নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না বলে যে কোন ব্যক্তিই হিসাব বহি সংরক্ষণ করতে পারে। |
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি ও একতরফা দাখিলা পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য কী?
উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি একতরফা দাখিলা পদ্ধতি অপেক্ষা উন্নতর এবং গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। আর তাই বর্তমানে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি এত বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয়।