বার্ধক্যকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না?
উত্তরঃ বার্ধক্য সওর বছর বয়সে যেমন হতে পারে তেমনি হতে পারে একুশ বছর বয়সেও। বয়স বা দৈহিক বৈশিষ্ট্য নয়, প্রকৃতপক্ষে মানুষের মানসিক বৈশিষ্ট্যই বার্ধক্যের নিরূপক। তারুণ্য বা বার্ধক্য কোনোটাই বয়সনির্ভর নয়। বাধ্যক্য যেমন মনের জীর্ণতার প্রতীক, তেমনি তারুণ্যও মনের জয়তীলক। সাধারণত বয়সের ভারে ব্যক্তির বিধ্বস্ত অবস্থাকেই বার্ধক্য বলা হয়। সত্যিকার অর্থে বৃদ্ধ হচ্ছে সেই, যে মনের দিক থেকে সংকীর্ণ, কুসংস্কারছন্ন, কূপমণ্ডূক, সাম্প্রদায়িক, জড় এবং পশ্চাৎপদ। এ শ্রেণীর লোক উনিশ বা একুশে যেমন আছে, তেমনি আছে ষাট কিংবা সওরেও। এ পার্থক্যের সঙ্গে বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই। বাধ্যক্য হচ্ছে মানসিক বৈকল্য। যারা নতুনকে গ্রহণ না করে মিথ্যা, সনাতন প্রথাকে টিকিয়ে রাখতে চায় তারাই প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধ, তাদের ধর্মই বাধ্যক্য। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, বৃদ্ধ তাহারাই- যাহারা নব অরুণোদয় দেখিয়া নিদ্রাভঙ্গের ভয়ে দ্বার রুদ্ধ করিয়া পড়িয়া থাকে। আর যারা নতুন দিনের সূর্য স্নানে নিঃশঙ্কচিওে এগিয়ে যান তারাই প্রকৃত তরুণ। তাদের ধর্মেই তারুণ্য। এ তারুণ্যও সওর আশি বা তারও বেশি বয়স্কদের মধ্যেও দেখা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে যারা বদলে দিলেন, তারা সকলেই তরুণ ছিলেন, বয়স তাদের কারো প্রগতিশীল চিন্তার পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। একুশ বছরের সুকান্ত যেমন তারুণ্যের প্রতীক, তেমনি আশি বছরের রবীন্দ্রনাথও চিরতরুণ। মনের দিক থেকে যারা স্বচ্ছ সুন্দর, কল্যাণকামী, পরিশ্রমী এবং সাধক তারাই প্রকৃত তরুণ। তরুণ্যই সব জাতির অহংকার। যে জাতির মধ্যে তরুণ্য নেই, সেই জাতি এক প্রকার মৃত। বার্ধক্যকে যেমন বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না, তেমনি তারুণ্যেরও বয়স নেই। মনের দিক থেকে যিনি যত অগ্রসর ও সৎ চিন্তার অধিকারী, তিনি তত তরুণ, সতেজ। আপাতদৃষ্টিতে বাধ্যক্য বয়সের মাপকাঠিতে বিবেচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে একজন প্রবীণ মানুষও প্রগতিশীল চিন্তার কারণে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। আবার বয়সে নবীন হলেও যারা পশ্চাৎমুখী চিন্তা করে তারা প্রকৃত অর্থে বার্ধক্যে আক্রান্ত ।