হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

বাংলাদেশে পেশাদার হিসাববিজ্ঞানী কার্য

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন। (What are the generally accepted accounting principles (GAAP)? Discuss.)
অথবা ব্যায়নীতি, রাজস্ব নীতি ও মিলকরণ নীতি ব্যাখ্যা করুন। (Explain cost principle. revenue recognition principle and matching principle.)

হিসাবশাস্ত্রের লেখকগণ হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালাকে অনুমান, নীতি, আচরণবিধি ইত্যাদি নামে অভিহিত করেছেন।
খ্যাতনামা আধুনিক আমেরিকার দুইজন হিসাৰশাস্ত্রবিদ Kieoso and Weigandt তাদের লেখা
Intermediate Accounting Chapter 3 Edition-9 বইতে আলোচনা ও সহজে বুঝার উদ্দেশ্যে হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালাকে তিনভাগে বিভক্ত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। যথা :

(১) হিসাববিজ্ঞানের অনুমানসমূহ (Accounting assumptions)
(২) নীতিসমূহ (Principles)
(৩) সীমাবদ্ধতা (Constraints)

“আর পড়ুনঃ” আর্থিক হিসাববিজ্ঞান এবং প্রতিবেদন প্রস্তুতের ধারণাগত কাঠামো আলোচনা করুন।

এখগুলো FASB (Financial Accounting Standard Board-USA) কর্তৃক স্বীকৃত এবং
বর্তমানে সর্বজন যায় হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা (Generally accepted accounting principles GAAP) হিসেবে বিশ্বময় গৃহীত হয়েছে।)

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের ধারণাগত কাঠামো বলতে কী বুঝেন? ধারণাগত কাঠামোর বিষয়বস্তু আলোচনা করুন। এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।

ক. হিসাববিজ্ঞানের অনুমান বা ধারণাসমূহ (Accounting assumptions): FASB-এর মতে হিসাবসংক্রান্ত কিছু ধারণাকে অনুমান বলা হয়।
কোন কাজ নিয়মবদ্ধভাবে করতে হলে পূর্বেই কতগুলো কল্পনা বা ধারণা করে নিতে হয় এবং ঐ কল্পনা বা ধারণার উপর ভিত্তি করেই কাজটি সম্পন্ন করা হয়।
এরূপ কল্পনা বা ধারণাকে অনুমান বলা হয়। হিসাব নিকাশের কাজকে নিয়মবদ্ধভাবে করে হিসাবকাল শেষে সঠিক চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুত করতে যে বিশেষ কল্পনাগুলো করা হয় এবং
যে বিষয়গুলো উল্লেখ না করা হলেও আর্থিক বিবরণীগুলোতে উপস্থিতি নির্দেশ করে তাদেরকে হিসাববিজ্ঞানের অনুমান বা ধার বলা হয়।
হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক অনুমান বা ধারণা চারটি। যথা—

Table of Contents

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

১. অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িক সভা অনুমান (Economic or business entity assumption): অনুমান বা ধারণা অনুযায়ী হিসাব নিকাশের সময় অনুমান করা হয় যে,
প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আলাদা সত্তা রয়েছে।
মালিক ও অন্যান্যদের সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে সম্পর্ক তা হলো ব্যবসায়িক সম্পর্ক।
মালিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে অর্থ বিনিয়োগ করে অর্থাৎ যে পরিমাণ মূলধন প্রদান করে তা মালিকের নিকট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায় হিসেবে বিবেচিত হয়। মালিকের নিকট এ দায়কে অন্তঃদায় বলা হয়।
সত্তা অনুমান বা ধারণার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির পরিমাণ মোট দায় ও মালিকানা স্বত্ত্বের সমষ্টির সমান হয়ে থাকে।
কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার মালিক ও তৃতীয় পক্ষের (যদি পাওনাদার ও ঋণ থাকে) নিকট হতে প্রাপ্ত অর্থ বা সেবা সম্পত্তিতে রূপান্তর করে গচ্ছিত রাখে।
ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য সৃষ্টি হয় নিচের হিসাব সমীকরণটি

মোট সম্পত্তি = মালিকানা স্বত্ব (অনন্তঃদায়) + দায় (বহিদায়)

“আর পড়ুনঃ” আই. এফ. আর. এস বলতে কী বুঝায়? এগুলো বর্তমান ব্যবসায়ে কিভাবে ব্যবহৃত হয়?

২. চলমান প্রতিষ্ঠান অনুমান বা ধারণা (Golng concern assumption): এ অনুমান বা
ধারণার মূল কথা হলো একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরম্ভ করা হলে এটি অনন্তকাল ধরে চলমান থাকবে এবং অনূর ভবিষ্যতে এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা নেই মনে করা হয়।
এ অনুমানের ভিত্তিতেই স্থায়ী সম্পতিগুলো হিসাবের বইতে বাজারমূল্যে লিপিবদ্ধ না করে ক্রয়মূল্যে লেখা হয়।
স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় করা হয় ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসার রাজস্ব আয় করার জন্য, পুনঃবিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নয়। তাই হিসাবের বইতে এগুলো পুস্তকমূল্যে প্রদর্শন করা হয় চলতি বাজার মূল্যে নয়।
পরবর্তীতে হিসাব নিকাশের সময় সম্পত্তির ক্রয়মূলা হতে যতটুকু মূল্য ক্ষয় হয়েছে অর্থাৎ অবচয় হয়েছে উহাকে খরচ হিসাবে দেখাতে হয় এবং
উক্ত অবচয় সম্পত্তির ক্রয়মূল্য হতে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট মূল্য ভবিষ্যৎ বছরগুলোতে খরচ হবে।
অনুমান বা ধারণার ভিত্তিতে উদ্বতপত্রে দেখানো হয়।
এ কারণে স্থায়ী সম্পত্তি বর্তমানে বাজারে বিক্রি করা হলে কত টাকা পাওয়া যাবে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না।

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

৩. অর্থের এককে পরিমাপ অনুমান বা ধারণা (Monetary unit assumption):
এ অনুমান বা ধারণা অনুযায়ী যে সব ঘটনা অর্থ যা মূল্যের পরিমাপক দ্বারা আর্থিক মূলা নিরূপণ করা যায় শুধুমাত্র সেসব ঘটনা লেনদেন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং হিসাবভুক্ত করা হয়।
কিন্তু যেসব ঘটনা অর্থ বা মূল্যের পরিমাপক দ্বারা আর্থিক মূল্য নিরূপণ করা যায় না তা লেনদেনে নয় এবং হিসাবভুক্ত করা হয় না।
কোন দ্রব্য বা সেবার মূল্য পরিমাপের জন্য যে একক ব্যবহার করা হয় তাকে অর্থ বা পরিমাপের একক (Unit) বলা হয়।
দ্রব্য বা সেবার মূল্য নির্ধারণের জন্য প্রত্যেক দেশে নিজস্ব মুদ্রা হিসেবে গুলারকে মূল্যের পরিমাপক হিসেবে ধরা হয়।

“আর পড়ুনঃ” মনিটারি ইউনিট Assumption কী? মুদ্রাস্ফীতি কিভাবে মনিটারি ইউনিট Assumption কে প্রভাবিত করে?

৪. হিসাবকাল অনুমান বা ধারণা (Periodicity assumption):
এটি অনুমান বা ধারণা অনুসারে আয়-বায় বা পায়-ক্ষতির নীট ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের অনির্দিষ্ট ও অনন্ত জীবনকালকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমান অংশে বিভক্ত করা হয়।
এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়কালকে হিসাব কাল (Accounting period) বলা হয়।

ব্যবসাকে একটি দীর্ঘ ও অনির্দিষ্টকাল ধরে চলমান প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনে করা হয়।
কিন্তু এ দীর্ঘ অনির্দিষ্টকাল শেষ হলেই হিসাব নিকাশ করা হবে তা কাম্য নয়।
কারণ মালিকও একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্যবসার লাভ-লোকসান ও আর্থিক অবস্থা জানতে চায়।
এ জন্যই প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকাল ধরে চলবে এ ধারণা করা হলেও আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা হয়। হিসাববিজ্ঞানের এ অনুমান ও দারণাকে হিসাবকাল অনুমান বলা হয়।
এ হিসাবকাল এক বছর, ছয় মাস বা তিন মাসের অধিক হতে পারে। তবে হিসাবকাল সাধারণত ১২ মাস বা ১ বছরের হয়ে থাকে।
হিসাবকাল শেষে প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি ও আর্থিক অবস্থা বা সম্পত্তি ও দায় জানার জন্য যথাক্রমে লাভ-লোকসান হিসাব বা আয় বিবরণী এবং উদ্ধতপত্র প্রস্তুত করা হয়।
ফলে এ হিসাবকাশের সাথে অন্য হিসাবকাদের আর্থিক ফলাফল ও অবস্থা তুলনা করে প্রতিষ্ঠানেরই সফলতা ও ব্যর্থতা জানা যায়।

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

খ. হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ (Accounting principles)
হিসাবের বইতে কারবারি লেনদেনগুলো হিসাবভুক্ত করতে এবং প্রতিবেদনে উপস্থাপন করতে সার্বজনীন সম্মতির ভিত্তিতে গৃহীত যে নিয়মাবলি বা
নিয়ন্ত্রণ ধারা প্রয়োগ করা হয় তাকে হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক নীতি বলা হয়।
অনুমানের (Assumptions) ভিত্তিতে হিসাববিজ্ঞজ্ঞানের কিছু নীতিমালা উদ্ভব হয়েছে।
মৌলিক নীতিমালা (Basic Principles) এবং অনুমানের (Assumptions) মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তা হলো আর্থিক বিবরণী বা
চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুত করতে যে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলো অবশ্যই আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ করতে হয়।
পক্ষান্তরে, অনুমানগুলো উল্লেখ করতে হয় না অর্থাৎ অনুল্লেখিত থাকে। হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক নীতি চারটি। যথা

“আর পড়ুনঃ” কেন বকেয়াভিত্তিক আর্থিক বিবরণী নগদানভিত্তিক আর্থিক বিবরণীর তুলনায় বেশি তথ্য সরবরাহ করে?

১. ঐতিহাসিক ব্যয় নীতি (Historial cost principle): এ নীতির মূল বক্তব্য হলো সম্পত্তিসমূহকে উক্ত সম্পত্তি অর্জনে প্ৰদয় অর্থ অর্থাৎ ক্রয়মূল্যে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
পরবর্তীতে বাজার মূল্য যাই হোক না কেন স্থায়ী সম্পর্কি অবশ্যই অন্যমূল্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে।
চলতি সম্পত্তির আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ এক বছর হওয়ায় এর মূল্যায়নে এ নীতি প্রযোজ্য নয়।
অর্থাৎ চলতি সম্পত্তির মূল্যায়নে রক্ষণশীলতার নীতি অনুসারে তার ক্রয়মূল্য অথবা বাজার মূল্য এঁদের মধ্যে যেটি কম সেটিকে ধরা হয়।
বিশেষভাবে উল্লেখ যে ক্রয়মূল্য নীতি চলতি সম্পত্তির ক্ষেত্রে সবসময় প্রযোজ্য। আজকের হিসাবভুক্ত বিষয় পরবর্তীত ঐতিহাসিক রূপ নেয়।
এমনিভাবে দশ বছর , বিশ বছর পূর্বের হিসাব তথ্য বর্তমানে ঐতিহাসিকভাবে দেখা দেয়। যেমন-এক খন্ড জমির ১০ বছর পূর্বে মূল্য ছিল ১০,০০০ টাকা যা বর্তমানে ২,০০,০০০ টাকায় বিক্রি হতে পারে।

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

২. রাজস্ব স্বীকৃতি নীতি Revenue recognition principle): পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে আয়ের সূত্রপাত ঘটে।
এ নীতি প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি নিরূপণের ক্ষেত্রে অধিক ব্যবহৃত হয়।

রাজস্ব স্বীকৃতি নীতিতে কোন আয়কে কখন আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়।
এ নীতি অনুযায়ী যখন ক্রেতার নিকট পণ্যের মালিকানাসত্ত্ব হস্তান্তরিত হয় বা কোন সেবা প্রদান সম্পন্ন হয় এবং তার ফলে ক্রেতা বা
সেবা গ্রহণকারীর নিকট হতে অর্থ পাওয়ার বা আদায়ের অধিকার সৃষ্টি হয় তখন তা হিসবে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন- রহিমের নিকট ১০,০০০ টাকার পণ্য ধারে বিক্রি করা হলো।
এক্ষেত্রে পণ্যের মালিকানা স্বত্ত্ব ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হওয়ায় নগদ টাকা না পাওয়া গেলেও ক্রেতার নিকট হতে বিক্রয় মূল্য আদায়ের অধিকার সৃষ্টি হয়েছে বিধায় এ বিক্রয়কে আয় হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হবে।
পক্ষান্তরে, সোহেলের নিকট ৭,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় অথবা ফেরত” শর্তে প্রেরণ করা হলো,
এক্ষেত্রে পণ্যের মালিকানা স্বত্ব ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হয়নি বলে তালে আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করা যাবে না।
কমিশন আর্মিত হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায় নি বিনিয়োগের বকেয়া সুদ, বকেয়া উপ-ভাড়া ইত্যাদিকে আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
যদিও নগদ অর্থ পাওয়া যায়নি। রাজস্ব স্বীকৃতি নীতির এটাই প্রতিপাদ্য বিষয়।

“আর পড়ুনঃ” GAAP বলতে কি বুঝায়? আর্থিক বিবরণী তৈরিতে ইহা কিভাবে প্রভাব বিস্তার করে?

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

৩. মিলকরণ নীতি (Matching principle): মিলকরণ নীতির অর্থ হলো আয়ের সাথে ব্যয়ের সংযোগসাধন।
এ নীতি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের মধ্যে প্রাপ্ত ও প্রাপ্য মুনাফা জাতীয় আয়সমূহ হতে ঐ নির্দিষ্ট হিসাবকালের মধ্যে প্রদত্ত ও প্রদেয় সকল মুনাফা জাতীয় খরচসমূহ বাদ দিয়ে ব্যবসায়িক লাভ বা ক্ষতি নির্ণয় করা হয়।
এ নীতিতে শুধুমাত্র চলতি হিসাবকালের প্রাপ্ত ও প্রাপ্য মুনাফা জাতীয় আয়ের সাথে উক্ত চলতি হিসাবকালের প্রদত্ত ও প্রদেয় মুনাফা জাতীয় খরচের সংযোগ সাধন করা হয়।
ঐসব আয়-ব্যয়ের পূর্ববর্তী হিসাবকালের সংযোগসাধন হবে না।
যেমন- এ নীতি অনুযায়ী পূর্ববর্তী হিসাবকালের কোন মুনাফা জাতীয় আয় চলতি সলে পাওয়া গেলে তাকে চলতি সালের আয় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।
পক্ষান্তরে, চলতি সালে অর্জিত কোন মুনাফা জাতীয় আয় নগদে না পাওয়া গেলে তাকে চলতি সালের আয় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
একইভাবে চলতি হিসাবকালের মুনাফা জাতীয় খরচের মধ্যে পরবর্তী হিসাবকালের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকলে চলতি হিসাবকালের খরচ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
পক্ষান্তরে চলতি হিসাবকানের মুনাফাজাতীয় খরচ বকেয়া থাকলে তা চলতি হিসাবকালের খরচ হিসেবে বিবেচিত হবে।

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

সুতরাং একটি নির্দিষ্ট হিসাবফানের মুনাফা জাতীয় প্রাপ্ত ও প্রাপ্য আয় হতে উক্ত সময়ের মুনাফা জাতীয় প্রদত্ত ও প্রদেয় খরচ সমন্বয় করে মুনাফা নির্ধারণ করতে হবে।
এটাই মিলকরণ নীতির মূল বক্তব্য।

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের ক্রিয়ামূলক এবং পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যাবলি আলোচনা করুন।

৪. পূর্ণ প্রকাশকরণ নীতি (Full disclosure principle):
এ নীতির মূল বক্তব্য হলো একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থার সঠিক মূল্যায়নকে প্রভাবিত করে এমন সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আর্থিক বিবরণীতে যথাযথভাবে প্রকাশ করতে হবে যাতে আর্থিক বিবরণীর ব্যবহারকারীগণ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
এ নীতি অনুযায়ী প্রতিটি আর্থিক বিবরণী প্রতিষ্ঠানের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পরিবেশন করতে হবে।
কোন তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন রাখা যাবে না।
হিসাবরক্ষণ পদ্ধতিতে কোনরূপ পরিবর্তন ঘটানো হলে তার বিস্তারিত পরিবর্তনের প্রকৃতি বিশদভাবে প্রকাশ করতে হবে।
আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের পূর্বে কোন ঘটনা সংঘটিত হলে তা প্রকাশ করতে হবে।
সম্প্রতি অধিকাংশ বৃহৎ কারবার প্রতিষ্ঠান যৌথমূলধনী হওয়ায় পূর্ণ প্রকাশকরণ নীতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
কারণ যৌথমূলধনী প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ব্যবস্থাপনা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক অবস্থায় থাকে।
এ কারণে স্থায়ী সম্পত্তি, মাস পণ্য এবং বিনিয়োগ মূল্যায়নের ভিত্তি উদ্বর্তপত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।
কারণ এখানে মালিক, পাওনাদার এবং সম্ভাব্য ব্যাপক এবং বাস্তব স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান কোন মামলায় জড়িত হলে,
কোন চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হলে ইত্যাদি বিষয়ও প্রকাশ করা উচিত।

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

গ. হিসাববিজ্ঞানের সীমান্ধতা (Accounting Constraints): যে ধারণাগুলো হিসাববিজ্ঞানের নীতির প্রয়োগকে প্রভাবিত করে তাদেরকে হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বলা হয়। হিসাববিজ্ঞানের এ সকল সীমাবদ্ধতা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সঠিক নীতি নির্ধারণ, হিসাবরক্ষণে তার প্রয়োগ এবং আর্থিক বিবরণী প্রত্নতকরণে সাহায্য করে। পক্ষান্তরে,
এগুলো আবার হিসাববিজ্ঞানের কোন সাধারণ নীতি প্রয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হিসাববিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা চারটি। যথা—

১. ব্যয়-সুবিধা সম্পর্ক সীমাবদ্ধতা (Cost-benefit relationship constraint): হিসাব তথ্য পরিবেশন করতে একদিকে যেমন ব্যয় হয়
তেমনি উরু তথ্য হতে সুবিধার পাওয়া যায় ব্যয়ের তুলনায় সুবিধা বেশি হলে ব্যবহারকারীদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য হয়।
পক্ষান্তরে, বাঘের তুলনায় সুবিধা কম হলে তা ব্যবহারকারীদের নিকট বর্জনীয় হয়।পূর্ণ প্রকাশ নীতি অনুযায়ী আর্থিক বিবরণীতে প্রতিষ্ঠানের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পরিবেশন করা অপরিহার্য।
কিন্তু এ নীতি পুরোপুরি প্রয়োগ করতে গিয়ে যদি ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় তাহলে উক্ত তথ্য হতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা অর্থাৎ বায় বেশি বলে গণ্য হবে।
এরূপ অবস্থায় তথ্যটি বর্জনীয় হবে। এর গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে উক্ত পূর্ণ প্রকাশনীতি পুরোপুরি প্রয়োগ না করে ভারসাম্য বজায় রেখে প্রয়োগ করতে হবে।
অর্থাৎ ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হয় আবার তথ্যের জন্য যারা আগ্রহী তাদের ধারণা যাতে পরিষ্কার হয় সেভাবে তথ্যগুলো পরিবেশন করতে হবে।
হিসাববিবরণীতে হিসাবের মৌলিক নীতি পুরোপুরি প্রয়োগে এভাবে বাধাগ্ৰস্ত হয়।

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

২. বস্তুনিষ্ঠতার সীমাবদ্ধতা (Materiality constraint): একটি হিসাবখাত বা দফাকে আর্থিক বিবরণীতে কতটুকু গুরুত্ব সহকারে দেখাতে হবে তা বস্তুনিষ্ঠতার মূল বিষয়।
একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক আর্থিক অবস্থা এবং কার্যক্রমের উপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম কোন বিষয় বা দফাকে প্রাসঙ্গিক বিষয় বলা হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, ব্যবসার বিনিয়োগকারী বা পাওনাদারদের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন বিষয়গুলোকে প্রাসঙ্গিক বিষয় বলা হয়।
কোন বিষয় বা দফা অন্তর্ভুক্ত হলে বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যদি কোন প্রভাব বিস্তার না করতে পারে তবে তাকে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বলা হয়।
হিসাবরক্ষক তার নিজস্ব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিচারবুদ্ধির আলোকে কোনটি প্রাসঙ্গিক বা কোনটি অপ্রাসঙ্গিক তা বিবেচনা করে হিসাবভুক্ত করে থাকেন।
যেমন কারবারের প্রয়োজনে কয়েকটি পেপারওয়েট ক্রয় করা হলো। এগুলো কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে।
কিন্তু এদেরকে সম্পদ হিসেবে উদ্বতপত্রে না দেখিয়ে চলতি বছরের খরচ হিসেবে দেখালে বিনিয়োগকারী বা
পাওনাদারগণ কোন সমালোচনা করবে না আবার GAAP নির্দেশিত নীতিমালা ভঙ্গ হয়েছে এমন অভিযোগও কেউ করবে না। তাই পেপারওয়েট ক্রয়ের ব্যয় একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বা দফা।
কোন কোন প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে একটি টাকার অংক নির্ধারণ করে।

হিসাববিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা কি কি? আলোচনা করুন।

৩. শিল্প ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা (Industry practice constraint): কারবারের বিভিন্নতার কারণে বিশেষ করে সেবা,
রেল, ব্যাংক, বীমা এসবক্ষেত্রে হিসাবৰ্নীতি চর্চা ও প্রয়োগ কিছু কিছু বিষয়ে উপেক্ষা করা হয় অর্থাৎ এসব
ক্ষেত্রে বিশেষ হিসাব অনুমোদন করা হয় বলে হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক নীতির প্রয়োগ উপেক্ষিত হয়।
এসব ক্ষেত্রে অফিসিয়াল ঘোষণার মাধ্যমে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে বিভিন্নতা আনা হয়।
এসব বিভিন্নতা কারণসহ হিসাবে প্রকাশ করতে হয়। এভাবে কারবারের বিভিন্নতা এবং বিশেষ হিসাব চর্চার কারণে হিসাববিজ্ঞান নীতি প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা করুন। JAIBB

৪. রক্ষণশীলতার সীমাবদ্ধতা (Conservatism constraint): ব্যবসার লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন করা।
ব্যবসা জগতে অনিশ্চয়তার কারণে পূর্ব হতে সম্ভাব্য লোকসানের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করাকে রক্ষণশীলতা বলা হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, লাভের চেয়ে লোকসানের বিষয়ে সচেতন হওয়াকে রক্ষণশীলতা বলা হয়। বছরের লাভ-লোকসান নির্ণয় করার সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।
এ সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী সম্ভাব্য সকল প্রকার ক্ষতি ও ব্যয়কে হিসাবভুক্ত করা হয়। পক্ষান্তরে, সম্ভাব্য আয়কে হিসাবভুক্ত করা হয় না।
যেমন—সেনাদারবৃন্দের উপর পাওনা সঞ্চিতি ও বাটা সঞ্চিতি সম্ভাব্য ক্ষতি হলেও লাভ-লোকসান হিসাবে ও উদ্ধতপত্রে দেখানো হয়।
অন্যদিকে আয় কম ধরা ও ব্যয় বেশি ধরার আর একটি উদাহরণ হলো সমাপনী মজুদ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ:
বাজারমূল্য বা ক্রয়মূল্য এ দুইয়ের মধ্যে কমটি মজুদ পণ্যের মূল্য ধরে হিসাবভুক্ত করা হয়।
সুতরাং রক্ষণশীলতার কারণে হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক নীতি প্রয়োগে বাধাগ্রস্ত হয়।

About Post Author

Related posts