আর্থিক বিবরণীর সম্ভাব্য ব্যবহারকারী কারা? (Who are the potential users of financial statements?)
হিসাবরক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।
আর আর্থিক বিবরণী তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে হিসাবে এ উদ্দেশ্য পূরণ করে।
আর্থিক বিবরণীকে কোনো প্রতিষ্ঠানের দর্পণ হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়। কারণ এতে প্রতিষ্ঠানের কার্যকরি ক্ষমতা অথবা দুর্বলতা প্রতিফলিত হয়।
এই বিবরণী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের উপকারে লাগে। যেমন-ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগকারী, ব্যাংক প্রতিষ্ঠান, পাওনাদারগণ, কর্মিগণ, দেশের সরকার এবং জনসাধারণ ইত্যাদি।
যে সব বিভিন্ন পক্ষ এই বিরবরণী থেকে সুবিধা পেয়ে থাকেন George O.May সেগুলোকে দশ ভাগে ভাগ করেছেন।
সেগুলো হলো—১. তত্ত্বাবধানকারীর প্রতিবেদন; ২. রাজস্ব নীতির ভিত্তি; ৩. লভ্যাংশের যথার্থতা নিরূপণকারী; ৪. লভ্যাংশ প্রদানের নির্দেশক; ৫. ধার মঞ্জুরের ভিত্তি; ৬. সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর জন্য সংবাদ সরবরাহকারী; ৭. বিনিয়োগের মূল্যের নির্দেশক; ৮. সরকারি তত্ত্বাবধানের সাহায্যকারী; ৯. মূল্য নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি এবং ১০. কর নীতির ভিত্তি।
“আর পড়ুনঃ” সমান্তরাল ও উল্লম্ব বিশ্লেষণের মধ্যে পার্থক্য দেখান
বিভিন্ন পক্ষের কাছে আর্থিক বিবরণীর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১. ব্যবস্থাপনা (Management) : বিভিন্ন পরিব্যয় কেন্দ্রের দক্ষতা নিরূপণে আর্থিক বিবরণীগুলো খুবই উপযোগী। এই বিবরণীর সাহায্যে ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারেন। দক্ষ ও অদক্ষ স্থানগুলোকে ব্যবস্থাপনার গোচরে আনা হয়। এর ফলে ভবিষ্যতে কর্মধারা গ্রহণ করতে ব্যবস্থাপনার পক্ষে সুবিধা হবে।
২. বিনিয়োগকারী (Investors): বিনিয়োগকারী বলতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীদের বুঝায়। প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে বিনিয়োজিত টাকার ওপর সুদ যাতে দিতে পারে এবং মূল বিনিয়োগের নিরাপত্তা যাতে থাকে সে দিকেই বিনিয়োগকারীর দৃষ্টি থাকে। বিনিয়োগকারিগণ আর্থিক বিবরণীর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘকালীন স্বচ্ছলতা পর্যালোচনা করেন। বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা ছাড়াও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেন।
“আর পড়ুনঃ” আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা কর।
আর্থিক বিবরণীর সম্ভাব্য ব্যবহারকারী কারা?
৩. ব্যাংক প্রতিষ্ঠান (Bankers): ব্যাংক কারবারি প্রতিষ্ঠানকে যে ঋণ বা দাদন দিয়েছে তা যথাযথ সুরক্ষিত আছে। কিনা সে দিকে লক্ষ্য রাখে। প্রদত্ত দাদনের ওপর সুদ নিয়মিতভাবে দিতে সমর্থ কিনা তাও দেখে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ নির্ধারণ করার জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্তপত্র পর্যালোচনা করে এবং উপার্জন ক্ষমতা জানার উদ্দেশ্যে লাভ-ক্ষতির বিবরণী পরীক্ষা করে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কার্যাবলির বিশ্লেষণ করা ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব নয়, সেহেতু আর্তিক বিবরণীর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের খবরাখরব পাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়া ব্যাংক মক্কেল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দাদনের জন্য কি পরিমাণ জামিন চাইবে তাও এর সাহায্যে নির্ধারণ করতে পারবে।
৪. পাওনাদারগণ (Creclitors) : ব্যবসায়িক পাওনাদারদের প্রদেয় টাকা স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করতে হয়। এই দায় সাধারণতঃ চলতি সম্পত্তি থেকে মেটানো হয়।
তাই পাওনাদারগণ প্রতিষ্ঠানের চলতি স্বচ্ছলতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকেন। চলতি অনুপাত ও তরল অনুপাতের সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের চলতি আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যেতে পারে।
৫. সরকার (Government) : কারবারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে করের পরিমাণ নির্ধারণ করতে আর্থিক বিবরণী ব্যবহার করা হয়।
এই সব বিবরণী থেকে দেশের সরকার অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করেন। কারবারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার নির্দিষ্ট বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলছে কিনা তা এই বিবরণী থেকে জানা যায়।
এছাড়া কারবারী সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন আইন-কানুনের পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতে হলে এই আর্থিক বিবরণী অনেকাংশে সাহায্য করে।
৬. ব্যবসায়িক সংঘ (Trade associations) : বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংঘ তাদের সদস্যদের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা সরবরাহ করে।
সদস্যদের কি পরিমাণ সুযোগ-সুবিদা দেয়া যেতে পারে তা তাদের আর্থিক বিবরণীগুলো বিশ্লেষণ করে স্থির করা হয়ে থাকে। এজন্য ঐ সব সংঘ সদস্যদের জন্য ব্যবহার্য মানসূচক অনুপাত এবং হিসাবের একই পদ্ধতি গ্রহণের সুপারিশ করতে হবে।
৭. শেয়ার বাজার (Stock exchange) : শেয়ার বাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির লগ্নিপত্র কেনা-বেচা হয়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বিচার করার জন্য এই আর্থিক বিবরণী শেয়ার-দালালদের সাহায্যে করে থাকে।
এই আর্থিক বিবরণীর ওপর ভিত্তি করেই লগ্নিপত্রের মূল্য স্থির করা হয়।