অবচয় ধার্যের পদ্ধতিসমূহ

অবচয় ধার্যের পদ্ধতিসমূহ (Methods of Charging Depreciation)

বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তির অবচিতির জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক না কেন একই সম্পত্তির আয়ুষ্কালে একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
নিচে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো

১. স্থির কিস্তি পদ্ধতি (Straight Line Method): এ পদ্ধতিতে অবচয় হিসাব করা বেশ সহজ।
এ পদ্ধতিতে সম্পত্তির ক্রয় মূল্যের উপর প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে অবচিতির ব্যবস্থা রাখা হয়।
সম্পত্তির ক্রয় মূল্য থেকে ভগ্নাবশেষ মূল্য বাদ দিয়ে মোট সম্পত্তির অনুষ্কাল দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাই প্রতি বছরের অবচিতি।

“আর পড়ুনঃ” রক্ষণশীলতার নীতি / চলমান ধারণা অনুমান

২. ক্রমহ্রাসমান কিস্তি পদ্ধতি (Diminishing Balance Method): এ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট হারে অবচিতির ব্যবস্থা করা হয়।
তবে প্রত্যেক অবচিতি বাদ দেওয়ার পর যে উদ্বৃত্ত থাকে পরের বছর তার উপর অবচিতি হিসাব করা হয়। স্বভাবতই অবচিতির পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে ।

অবচয় ধার্যের পদ্ধতিসমূহ

৩. অবচয় তহবিল পদ্ধতি / প্রতিপূরক তহবিল পদ্ধতি (Depreciation Fund Method / Sinking Fund Method): এ পদ্ধতিতে প্রতি বছর সমপরিমাণ অবচিতি লাভ-ক্ষতির হিসেবে লিখে একটি তহবিল গড়ে তুলতে হয়।
এ অবচিতির পরিমাণ অবচিতি তহবিলের তালিকা হতে নির্ধারণ করা হয়।
এ অবচিত্তির পরিমাণ এমনভাবে স্থির করা হয় যে সম্পত্তির কার্যকরী কাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উক্ত তহবিলের অর্থ সুদে-মূলে সম্পত্তির ক্রয় মূল্যের সমান হয়। প্রতি বছর অবচিতির তহবিলে যে পরিমাণ অর্থ জমা দেওয়া হয় ঠিক এই পরিমাণ অর্থ ব্যবসায় থেকে তুলে নিয়ে কারবারের বাহিরে লগ্নি করা হয়। বছরের শেষে উক্ত লগ্নি হতে যে পরিমাণ সুদ পাওয়া যায় তা পরবর্তী অবচিতির সমপরিমাণ অর্থের সাথে একসঙ্গে লগ্নিতে নিয়োগ করা হয়।

“আর পড়ুনঃ” ব্যালেন্স বা জের বলতে কী বুঝেন? ব্যালেন্স বা জের কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

৪. বীমাপত্র পদ্ধতি (Insurance Policy Method): এ পদ্ধতিতে অবচয় যে পরিমাণ ধার্য করা হয় সে পরিমাণ অর্থ লগ্নিপত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ না করে তা বীমামূল্য হিসেবে বীমা কোম্পানিতে জমা দেওয়া হয়।
বীমা কোম্পানি হতে এমনভাবে একটি মেয়াদি বীমাপত্র নেওয়া হয় যাতে সম্পত্তির কার্যকরী কাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বীমার মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়।
এবং বীমা কোম্পানি হতে যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায় তার সাহায্যে অপর একটি সম্পত্তির প্রতিস্থাপন করা যায়।

৫. বার্ষিক বৃত্তি পদ্ধতি (Annuity Method): এ পদ্ধতি অনুসারে ব্যবসারের সম্পত্তিসমূহকে লগ্নি হিসেবে ধরা, হয়। যন্ত্র পাতি, বাড়িঘর ইত্যাদির জন্য যা খরচ করা হয় তা লগ্নিস্বরূপ বলে মনে করা হয়।
প্রতি বছর সম্পত্তির হিসেবে যে উদ্বৃত্ত থাকে তার উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ গণনা করে তা সম্পত্তির হিসেবে ডেবিট করা হয়।
এবং একই সঙ্গে বার্ষিক তালিকা মতে (Annuity Table) একটি নির্দিষ্ট অবচিতির পরিমাণ সম্পত্তির হিসেবে এমনভাবে ক্রেডিট করা হয় যে সম্পত্তির কার্যকাল শেষ হলে সম্পত্তি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা ক্রয় মূল্য ও মোট সুদের অঙ্ক শূন্য হয়ে যায়। কিংবা ভগ্নাবশেষ মূল্যের সমান হয়।
এ পদ্ধতিতে প্রতি বছর অবচিতির পরিমাণ ঠিক থাকে কিন্তু সুদের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।

অবচয় ধার্যের পদ্ধতিসমূহ

৬. পুনর্মূল্যায়ন পদ্ধতি (Revaluation Method): এ পদ্ধতিতে প্রতি বছর শেষে সম্পত্তির মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
পুনর্মূল্যায়ন করে সম্পত্তির যে মূল্য স্থির করা হয় তা থেকে সম্পত্তির হিসাব মূল্য বাদ দিলে যে উদ্বৃত্ত থাকে তা উক্ত সম্পত্তির অবচয়ের পরিমাণ বলে গণ্য করা হয়।

৭. ক্ষয়ানুপাতিক পদ্ধতি (Depletion Method): এ পদ্ধতি ক্ষয়িষ্ণু সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
খনির মোট উৎপাদন ক্ষমতাকে টন বা গ্যালনে বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে মেপে খনির মোট স্বত্ব মূল্যকে এর মধ্যে বণ্টন করা মোট সম্পদের পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে একক প্রতি/পরিমাণ সম্পদের মূল্য বের করা হয়। প্রতি বছর যে পরিমাণ সম্পদ উত্তোলিত হয় সে পরিমাণকে প্রতি এককের মূল্য দিয়ে গুণ করলে বাৎসরিক অবচিতির পরিমাণ পাওয়া যায়।

৮. যান্ত্রিক ঘণ্টা হার পদ্ধতি (Machine Hour Rate Method): এ পদ্ধতিতে একটি যন্ত্র মোট কতো ঘণ্টা কাজ করতে পারে তা নির্ধারণ করা হয়।
যন্ত্রটির মোট মূল্যকে মোট ঘণ্টা দিয়ে ভাগ করে প্রতি ঘন্টার মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
বছরে যন্ত্রটি যত ঘণ্টা কাজ করে তার পরিমাণকে প্রতি ঘণ্টার মূল্য দিয়ে গুণ করলে যে গুণফল পাওয়া যায় তাকে যন্ত্রঘণ্টা হার পদ্ধতি বলে ।

৯. অরচিতি সঞ্চয় পদ্ধতি (Depreciation Reserve Method): এ পদ্ধতিতে প্রতি বছর লাভ-ক্ষতির হিসাব হতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অবচিতি বাবদ বাদ দিয়ে একটি অবচিতি সঞ্চয় হিসাব গড়ে তোলা হয়।
উদ্বর্তপত্রে সম্পত্তিকে এর ক্রয় মূল্যে দেখানো হয় এবং অবচিতি সঞ্চয়ও দায়ের ঘরে পৃথকভাবে দেখানো হয়। সম্পত্তির আয়ুষ্কাল শেষ হলে ঐ সঞ্চয় হতে অর্থ নিয়ে সম্পত্তিটি প্রতিস্থাপন করা হয়।
সাধারণত রেল পরিবহন সংস্থা, ট্রামওয়ে, বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা যাদের সংগঠনের জন্য প্রচুর পুঁজির প্রয়োজন নেই সে সকল ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি উপযোগী।

উপরের আলোচনা হতে দেখা গেল সম্পত্তির উপর অবচিতি ধার্য করার বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত।
কিন্তু কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে তা কারবারের পক্ষে উপযোগী হবে তা সংশ্লিষ্ট কারবারের কর্তৃপক্ষ স্থির করবেন।

About Post Author

Related posts