হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করুন। (Discuss the features of Accounting.) JAIBB
অথবা, হিসাববিজ্ঞানের প্রকৃতি কি এবং ইহার কার্যাবলি বর্ণনা করুন। (What is the nature of Accounting & what is It function?)
হিসাববিজ্ঞান একটি গতিশীল ব্যবহারিক শাস্ত্র।
দীর্ঘ দিন অনুশীলন ও গবেষণার মাধ্যমে হিসাববিজ্ঞান বর্তমান অবস্থায় এসেছে এবং একটি পেশার মর্যাদা পেয়েছে।
হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যাবলি: অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ন্যায় হিসাববিজ্ঞানেরও কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে নিচে আলোচনা করা হলো :
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা করুন। JAIBB
১. হিসাববিজ্ঞান একটি সামাজিক বিজ্ঞান (Accountancy is a social science): সমাজে বসবাসরত মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যের আর্থিক লেনদেনগুলোর সঠিক ও সুশৃঙ্খল হিসাবরক্ষণও হিসাববিজ্ঞানের কাজ। বর্তমান বিশ্বে হিসাববিজ্ঞানের পরিধি কেবল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজের সকল প্রকারের প্রতিষ্ঠানের ও পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে।
“আর পড়ুনঃ” হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে? (What is Accounting? JAIBB
২. লেনদেনের সুশৃঙ্খল হিসাবরক্ষণের মাধ্যমে (System of keeping accounts of transaction) : হিসাববিজ্ঞান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লেনদেনসমূহকে ভবিষ্যত স্থায়ী সূত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে লিখিবন্ধ করার প্রণালী বা পদ্ধতি শিক্ষা দেয়।
৩. হিসাববিজ্ঞান একটি কলা: অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে কোন কার্য সম্পাদনের বিশেষ পদ্ধতিকে কলা বসে।
হিসাববিজ্ঞান কারবারের লেনদেনসমূহকে সুনির্দিষ্ট হক, সূত্র ও পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবভুক্ত করে থাকে।
সুতরাং হিসাববিজ্ঞান একটি কলা।
৪. হিসাববিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান: পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে বিজ্ঞান বলে যা সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
হিসাববিজ্ঞান সমীকরণ হলো সম্পত্তি = দায় ও মালিকানা স্বত্ত্ব।
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি যথাযথ প্রয়োগে হিসাববিজ্ঞানের এ সমীকরণ উদ্বৃত্তপত্রের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।
সুতরাং হিসাববিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান।
৫. ব্যবহারিক জ্ঞান: হিসাববিজ্ঞান কারবারের সংঘটিত লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ তথা লাভ-ক্ষতি ও আর্থিক অবস্থা নির্ধারণের বাস্তব জ্ঞান দান করে থাকে।
ফলে হিসাববিজ্ঞান একটি সফল ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদানের মাধ্যম।
<h2>হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করুন।</h2>
৬. আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন (Exhibiting financial affairs): হিসাববিজ্ঞান সকল আর্থিক লেনদেন সঠিক ও সুশৃঙ্খল হিসাব-নিকাশ শিক্ষা দেয়।
ফলে প্রতিষ্ঠানের দেনা-পাওনা, মূলধন ও সম্পদ সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
৭. আওতা বা ক্ষেত্র ( Scope or fields): হিসাবনিকাশকরণ যদিও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে খুব বেশি গুরুত্ব অনুভব করা হয়,
কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নিকটও এর প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা যায় না।
“আর পড়ুনঃ” অস্পর্শনীয় সম্পত্তি (Intangible Assets)
৮. দ্বৈতস্বত্ত্বা বা দুইদিক (Dual aspects): দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হিসাবে প্রতিটি লেনদেন দ্বৈতস্বত্ত্বা বিশিষ্ট অর্থাৎ দু’টি হিসাব জড়িত থাকে,
এদের একটি হিসাব ডেবিট এবং অপরটি ক্রেডিট হয়। সে জন্য প্রতিটি লেনদেনকে দু’টি ভাগে ভাগ করে হিসাবভুক্ত করা হয়।
৯.স্বয়ং সম্পূর্ণতা (Self Sufficiency): একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হিসাবসংরক্ষণ করা হয়।
হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে যে কোন সময় প্রতিটি লেনদেনের প্রকৃতি ও কারণ এবং সমস্ত লেনদেনের সার্বিক ফলাফল জানা যায়।
“আর পড়ুনঃ” Break-even Chart (সমচ্ছেদ রেখাচিত্র/সমচ্ছেদ চাৰ্ট)
১০. ব্যবস্থাপনার হাতিয়ার (Tools of Management): হিসাববিজ্ঞান বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান সরবরাহ করে, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, নীতি নির্ধারণ,
উৎপাদন, বন্টন ও ব্যয়-সংকোচন ইত্যাদি কার্যে ব্যবস্থাপনাকে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায়, হিসাববিজ্ঞানের স্বকীয় কতিপয় নীতি, ধারণা ও পদ্ধতি একে বিশেষ কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছে।
এসব বৈশিষ্ট্য হিসাববিজ্ঞানকে একদিকে যেমন স্বকীয়তা দিয়েছে তেমনি অন্যদিকে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই হিসাববিজ্ঞানকে এখন প্রতিষ্ঠানের ‘Financial Mirror হিসেবে পরিচিত।